কলকাতা, 12 মার্চ : 2017 সালের নভেম্বরের সেই সকালটা ছিল একেবারে অন্য রকম । দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়ে প্রথমবার কলকাতায় রাজ্য দফতরে এসেছিলেন মুকুল রায় । দু'দিন আগেই মোদির মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য রবিশংকর প্রসাদ তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন ৷ মুরলিধর সেন লেনের সরু গলিটায় এদিক-সেদিক শুধু কালো মাথার ভিড় ছিল সেদিন ।
তখনও এ ছবির সঙ্গে তেমন পরিচয় ছিল না রাজ্য বিজেপি নেতাদের । তৃণমূল বা অন্য কোনও দল থেকে বিজেপিতে নেতাদের যোগ দেওয়া এখনকার মতো নিত্য দিনের বিষয় ছিল না সেই সময় । তাই প্রস্তুতি থাকত আলাদা রকমের । এখন অবস্থা বদলেছে । প্রায় প্রতিদিনই শাসক দলের কোনও না কোনও বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন । অন্য দলের নেতারাও নাম লেখাচ্ছেন গেরুয়া শিবিরে । কিন্তু কেন এই প্রবণতা? অনেকেই বলছেন, তৃণমূল থেকে টিকিট না পেয়েই বিজেপিতে যাচ্ছেন বিধায়কদের একটা বড় অংশ । তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন এ-কথা পুরো ঠিক নয় ৷ নিজেদের সপক্ষে যুক্তি হিসেবে তাঁরা তুলে ধরছেন মালদার ঘটনা ।
মালদার একটি আসন থেকে জেলা পরিষদ সদস্য সরলা মুর্মুকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল । আসন পছন্দ না হওয়ায় তিনিও দল ছেড়ে চলে এসেছেন বিজেপিতে । মাত্র দু'দিনের মধ্যে তৃণমূল থেকে 7 বিধায়ক গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন । সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, হাওড়ার শাকরাইলের বিধায়ক শিতল সদ্দার, তৃণমূলের শিবপুরের বিধায়ক জটু লাহিড়ী, বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক দীপেন্দু, সাতগাছির বিধায়ক সোনালি গুহ, তপনের বিধায়ক বাচ্চু হাঁসদা ও নদিয়ার তেহট্টের বিধায়ক গৌরিশংকর দত্ত । এছাড়া গত এক সপ্তাহে প্রায় পাঁচশোর বেশি তৃণমূলের নেতা- কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ৷
আরও পড়ুন : লক্ষ্য প্রথম দুই দফা, বাংলায় বিজেপির নতুন অস্ত্র ‘সুপার 22’
এখানেই রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টচার্য বলছেন, বিজেপি পূর্বশর্ত দিয়ে কাউকে দলে যোগদান করায় না । মানুষের জন্য যাঁরা কাজ করতে চান তাঁরাই বিজেপিতে আসছেন । বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কোথাও কোনও আশ্বাস নেই । কোথাও কোনও ঘোষণা নেই । এখানে লোভ-লালসা নেই । কোথাও কোনও ঘোষণা নেই । এখানে এমন ঘটনাও ঘটেছে তৃণমূলের প্রার্থী এখানে বিজেপিতে যোগদান করছে । এর একটাই কারণ নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়ণে সারা ভারতজুড়ে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে । মোদী ম্যাজিকেই বিজেপির দিকে সব দলের ঝোক বাড়ছে ।
এই বিষয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, আমাদের দলে যোগদান করা বিধায়করা কেউ টিকিটের দাবি করছেন না । তাঁরা বলছেন, তৃণমূলকে হারানোর জন্য বিজেপিতে আসতে চাইছেন । সোনালি গুহ নিজেই বলেছেন তাঁর টিকিট দরকার নেই । তিনি বিজেপিটা করতে এসেছেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মীদের মর্যাদা না দেওয়া, বিধায়কদের মর্যদা না দেওয়াই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ ৷
তবে এখানে প্রশ্ন উঠছে বিজেপি কী তৃণমূলত্যাগীদের সন্তষ্ট করতে পারবে? অর্জুন সিং বলছেন, "বিজেপি অনেক বড় দল । এখানে অনেক জায়গা আছে কাজ করার । এখানে তো পিসি- ভাইপোর প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নেই ।"