ETV Bharat / state

'এই ভারত আমরা চাই না', রাম মন্দির নিয়ে মন্তব্য শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকারের

author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 15, 2024, 10:04 PM IST

Updated : Jan 16, 2024, 9:37 AM IST

Academician Pabitra Sarkar on Ram Temple: রাম মন্দিরের নামে ধর্মীয় আস্ফালনের অভিযোগ করলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার-সহ শিল্পী ও সাহিত্যিকদের একাংশ ৷ ধর্ম পালনের নামে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সংবিধানকে ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন তাঁরা ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ বাংলার শিক্ষাবিদদের একাংশের

কলকাতা, 15 জানুয়ারি: আগামী 22 জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হবে ৷ তা নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচার চলছে ৷ বাড়ি বাড়ি চাল পৌঁছানো হচ্ছে, আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে ৷ এই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলার শিল্পী ও সাহিত্যিকদের একাংশ ৷ তাঁদের বক্তব্য, এমন ভারত তাঁরা চান না ৷ এর বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা ৷ তাই, দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সংবিধানের মর্মকে রক্ষা করতে নাগরিক সভার আহ্বান করা হয়েছে ৷

এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "নাগরিক জীবন বিপন্ন ৷ দলিতরা অত্যাচারিত ৷ এসবের মধ্যে ধর্মের ধ্বজা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে ৷ মন্দির তৈরি করতেই পারে ৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে যা করছে তার পিছনে গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে ৷ আমরা জানি না, রাম মন্দির প্রতিষ্টার দিন কী হবে ! আমরা খুব ভয়ে আছি ৷ সাংবাদিকদের উপর অত্যাচার হচ্ছে ৷ গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে ৷ বর্তমান ভারতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ ৷ আমরা শঙ্কিত ৷ এরাজ্যেও গণপিটুনি হচ্ছে ৷ এ এরকম ঘটনাও বাদ যায় না ৷ গণধর্ষণ বাড়ছে ৷ নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ এসবের বিরুদ্ধে সাধারণ নগরিকদের জোট বদ্ধ হওয়া দরকার ৷"

পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "চেনা নেই, জানা নেই রাম মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে যাচ্ছে ৷ মন্দিরের চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ৷ যাঁরা নিচ্ছে না, তাঁদের নাম আলাদা করে নোট করা হচ্ছে ৷ একদিকে রাম মন্দির হচ্ছে ৷ আর এখানে জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে ৷ এখানে মোহন ভগবৎ আসলে ফুল পাঠাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি ! আইনি মোড়কে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে ৷"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অশোকনাথ বসু বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার 70 শতাংশ টাকা দিচ্ছে ৷ বাকি 30 শতাংশ রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা ৷ অথচ, দিঘার সমুদ্রতীরে মন্দির তৈরিতে 200 কোটি টাকা সরকার দিচ্ছে ৷ পার্লামেন্টের এক তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিদের বের করে দেওয়া হল ৷ এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আপনি কী বলবেন, কী খাবেন, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ৷ ভারতবর্ষ এখন বিপন্ন ৷ সাধারণ মানুষ বিপন্ন ৷ আদিবাসীরা বিপন্ন ৷ এই লড়াইয়ে সকলকে অংশ গ্রহণ করতে হবে ৷"

নাট্যকর্মী অসিত বসু বলেন, "ধর্মের নামে দেশকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমি হিন্দু ধর্মের মানুষ ৷ হিন্দু ধর্মের মধ্যে বাঁচা ৷ কিন্তু, এখন সবাইকে হিন্দু হতে গেলে জয় শ্রীরাম বলতে হবে ৷ হিন্দু ধর্মের মধ্যে অনেক ভাগ আছে ৷ কেউ রামকে পুজো করেন, কেউ করেন না ৷ ফলে, জোর করে ধর্ম চাপানো যাবে না ৷ এই সরকার জনগণের কথা শোনে না ৷ তাদের 'মন কি বাত' শুনতে হবে ৷ রাম মন্দির নিয়ে মামলা কী হল ? সমস্ত স্তম্ভ ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৷ বিজ্ঞানকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমাদের রাজ্যে শিক্ষা, স্বাথ্য শেষ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে ৷"

এই ইস্যুতে অধ্যাপক আম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, "পুরো শরীর তৈরি হওয়ার আগেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ৷ শংকরাচার্য বলেছেন, ধৰ্মগুরু প্রাণ প্রতিষ্টা করবেন ৷ তা না করে প্রধানমন্ত্রী প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছেন ৷ আজকের দেশ বিজেপি, আরএসএস, মোদি ও অমিত শাহ দ্বারা আক্রান্ত ৷"

আরও পড়ুন:

  1. নিজের নাম প্রচারে ধর্মগ্রন্থের নিয়ম না মানাটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, মোদিকে নিশানা পুরীর শংকরাচার্যের
  2. প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন রামের পোশাক কেমন হবে ? তুলে ধরল ইটিভি ভারত
  3. 'অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে খুশি 74% মুসলমান, তাঁদের চোখে মোদিই দেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী'

রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ বাংলার শিক্ষাবিদদের একাংশের

কলকাতা, 15 জানুয়ারি: আগামী 22 জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন হবে ৷ তা নিয়ে দেশ জুড়ে প্রচার চলছে ৷ বাড়ি বাড়ি চাল পৌঁছানো হচ্ছে, আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে ৷ এই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলার শিল্পী ও সাহিত্যিকদের একাংশ ৷ তাঁদের বক্তব্য, এমন ভারত তাঁরা চান না ৷ এর বিরুদ্ধে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তাঁরা ৷ তাই, দেশের গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সংবিধানের মর্মকে রক্ষা করতে নাগরিক সভার আহ্বান করা হয়েছে ৷

এ বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "নাগরিক জীবন বিপন্ন ৷ দলিতরা অত্যাচারিত ৷ এসবের মধ্যে ধর্মের ধ্বজা তুলে ধরার চেষ্টা চলছে ৷ মন্দির তৈরি করতেই পারে ৷ কিন্তু, এক্ষেত্রে যা করছে তার পিছনে গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য আছে ৷ আমরা জানি না, রাম মন্দির প্রতিষ্টার দিন কী হবে ! আমরা খুব ভয়ে আছি ৷ সাংবাদিকদের উপর অত্যাচার হচ্ছে ৷ গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে ৷ বর্তমান ভারতের অবস্থা খুবই ভয়াবহ ৷ আমরা শঙ্কিত ৷ এরাজ্যেও গণপিটুনি হচ্ছে ৷ এ এরকম ঘটনাও বাদ যায় না ৷ গণধর্ষণ বাড়ছে ৷ নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ৷ এসবের বিরুদ্ধে সাধারণ নগরিকদের জোট বদ্ধ হওয়া দরকার ৷"

পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "চেনা নেই, জানা নেই রাম মন্দির উদ্বোধনে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে যাচ্ছে ৷ মন্দিরের চাল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ৷ যাঁরা নিচ্ছে না, তাঁদের নাম আলাদা করে নোট করা হচ্ছে ৷ একদিকে রাম মন্দির হচ্ছে ৷ আর এখানে জগন্নাথ মন্দির হচ্ছে ৷ এখানে মোহন ভগবৎ আসলে ফুল পাঠাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি ! আইনি মোড়কে ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে ৷"

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অশোকনাথ বসু বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার 70 শতাংশ টাকা দিচ্ছে ৷ বাকি 30 শতাংশ রাজ্য সরকারের দেওয়ার কথা ৷ অথচ, দিঘার সমুদ্রতীরে মন্দির তৈরিতে 200 কোটি টাকা সরকার দিচ্ছে ৷ পার্লামেন্টের এক তৃতীয়াংশ প্রতিনিধিদের বের করে দেওয়া হল ৷ এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আপনি কী বলবেন, কী খাবেন, তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে ৷ ভারতবর্ষ এখন বিপন্ন ৷ সাধারণ মানুষ বিপন্ন ৷ আদিবাসীরা বিপন্ন ৷ এই লড়াইয়ে সকলকে অংশ গ্রহণ করতে হবে ৷"

নাট্যকর্মী অসিত বসু বলেন, "ধর্মের নামে দেশকে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমি হিন্দু ধর্মের মানুষ ৷ হিন্দু ধর্মের মধ্যে বাঁচা ৷ কিন্তু, এখন সবাইকে হিন্দু হতে গেলে জয় শ্রীরাম বলতে হবে ৷ হিন্দু ধর্মের মধ্যে অনেক ভাগ আছে ৷ কেউ রামকে পুজো করেন, কেউ করেন না ৷ ফলে, জোর করে ধর্ম চাপানো যাবে না ৷ এই সরকার জনগণের কথা শোনে না ৷ তাদের 'মন কি বাত' শুনতে হবে ৷ রাম মন্দির নিয়ে মামলা কী হল ? সমস্ত স্তম্ভ ভেঙে ফেলা হচ্ছে ৷ বিজ্ঞানকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমাদের রাজ্যে শিক্ষা, স্বাথ্য শেষ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে ৷"

এই ইস্যুতে অধ্যাপক আম্বিকেশ মহাপাত্র বলেন, "পুরো শরীর তৈরি হওয়ার আগেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে ৷ শংকরাচার্য বলেছেন, ধৰ্মগুরু প্রাণ প্রতিষ্টা করবেন ৷ তা না করে প্রধানমন্ত্রী প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছেন ৷ আজকের দেশ বিজেপি, আরএসএস, মোদি ও অমিত শাহ দ্বারা আক্রান্ত ৷"

আরও পড়ুন:

  1. নিজের নাম প্রচারে ধর্মগ্রন্থের নিয়ম না মানাটা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, মোদিকে নিশানা পুরীর শংকরাচার্যের
  2. প্রাণ প্রতিষ্ঠার দিন রামের পোশাক কেমন হবে ? তুলে ধরল ইটিভি ভারত
  3. 'অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণে খুশি 74% মুসলমান, তাঁদের চোখে মোদিই দেশের সফলতম প্রধানমন্ত্রী'
Last Updated : Jan 16, 2024, 9:37 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.