কলকাতা, 26 সেপ্টেম্বর : 19 ঘণ্টায় বেসরকারি হাসপাতাল বিল করেছিল এক লাখেরও বেশি । সেই টাকার অর্ধেকের বেশি রোগীর পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল স্বাস্থ্য কমিশন । হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার সময় রোগীকে 65 হাজার 478 টাকা জমা করতে হয়েছিল । সেই সম্পূর্ণ টাকাই ফেরাতে হবে বেসরকারি ওই হাসপাতালটিকে ।
আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ছিলেন এক প্রবীণ ব্যক্তি । ওই হাসপাতালে COVID রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে । 19 ঘণ্টা ভরতি ছিলেন হাসপাতালে । চিকিৎসার খরচ হিসেবে 1 লাখ 15 হাজার 478 টাকা বিল করা হয় । হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এ । সব পক্ষের বক্তব্য শোনে কমিশন । রোগীর ছুটি হওয়ার সময় 65 হাজার 478 টাকা দিতে হয়েছিল । ওই বিলের অর্ধেকের বেশি অঙ্কের টাকা । অভিযোগকারীকে সেই টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল কমিশন ।
স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে জানানো হয়, হাওড়ার বাসিন্দা 57 বছর বয়সি ওই প্রবীণ ব্যক্তি । 3 অগাস্ট আনন্দপুরের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয় । ওই হাসপাতালে এই রোগীর COVID-19 পরীক্ষা হয় । রিপোর্টে নেগেটিভ আসে । এরপরে ওই হাসপাতাল থেকে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয় । বাড়িতে যাওয়ার কয়েকদিন পরে এই রোগীর আবার সমস্যা দেখা দেয় । তাঁকে আনন্দপুরের এই বেসরকারি হাসপাতালে 22 অগাস্ট ভরতি করা হয় । আনন্দপুরের এই বেসরকারি হাসপাতালটি COVID হাসপাতাল হিসেবেও পরিষেবা দিচ্ছে ।
22 অগাস্ট রাত 2 টো 40 মিনিটে হাসপাতালে ওই প্রবীণ ব্যক্তিকে ভরতি করা হয় । কোরোনা পরীক্ষার জন্য 23 অগাস্ট সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয় । বিকেল 5 টা 35 মিনিট নাগাদ রিপোর্ট আসে । ওই রিপোর্টে জানা যায়, এই রোগী COVID-19 নেগেটিভ । রাত সাড়ে 9টা নাগাদ এই রোগীকে এই হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে নিয়ে যান তাঁর ছেলে । কমিশন জানিয়েছে, এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে এই রোগীর পরিজনদের বিভিন্ন অভিযোগ ছিল । রোগীর চিকিৎসার গাফিলতি । সঠিক পরিষেবা পাচ্ছেন না এই রোগী বলেও অভিযোগ জানানো হয় ।
ওই ব্যক্তির বক্তব্য, হাসপাতালে 16 ঘণ্টা তিনি ছিলেন । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে এই বিষয়ে একটি হলফনামা দেওয়া হয়েছে । তাতে হিসেব করে দেখা হচ্ছে, 19 ঘণ্টা মতো হাসপাতালে ছিলেন এই রোগী । শুধুমাত্র বেড ভাড়া নেওয়া হয়েছে 26 হাজার টাকা । এই বিষয়ে এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাত 2টো 40 মিনিট থেকে পরের দিন বেলা 12 টা পর্যন্ত একটা দিনের চার্জ নেওয়া হয়েছে । আবার দুপুর 12 টা থেকে ওই দিন রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ ছুটি হওয়ার সময় পর্যন্ত আরও এক দিনের চার্জ নেওয়া হয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, এই দুটি চার্জই 22 অগাস্টের জন্য । বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে এই হাসপাতালে । অভিযোগকারীর বক্তব্য, এই অল্প সময়ের মধ্যে এত কিছু কীভাবে হল, তাই তাঁর সন্দেহ হয় এই বিষয়ে ।
কমিশন এই বিল খতিয়ে দেখে । প্যাথলজি সংক্রান্ত বিষয়ে এই রোগীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করানো হয়েছে । COVID-19-এর একটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা ওই একই দিনে দু'বার করা হয়েছে । প্রতিবার এই পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে সাড়ে চার হাজার টাকা । সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্রিয়েটিনিন, এই সব রুটিন টেস্টের জন্য অনেক বেশি টাকা চার্জ করা হয়েছে । লিভার ফাংশন টেস্টের জন্য 1250 টাকার বদলে 1900 টাকা নেওয়া হয়েছে । সব মিলিয়ে 19 ঘণ্টার জন্য 1 লাখ 15 হাজার 478 টাকা বিল করা হয়েছে ।
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমরা এই হাসপাতালকে বলেছি, কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত বিল হয়েছে । রোগীকে ভরতি করার সময় 50 হাজার টাকা দিয়েছিল পরিবার । ছুটির সময় 65 হাজার 478 টাকা দিতে হয় । এর কারণ হিসেবে অভিযোগকারীর বক্তব্য, হাসপাতাল ছাড়ছিল না । ওই টাকা আমরা এই হাসপাতালকে ফেরত দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি । হাসপাতালকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে যেন এই ধরনের অভিযোগ এই কমিশন আর না পায় ।"