কলকাতা, 20 ডিসেম্বর : নাম করা দুই বেসরকারি হাসপাতালে বেড পাওয়া যায়নি । যে কারণে এক কোভিড-19 রোগীকে ভরতি করানো হয়েছিল তালতলা অঞ্চলে অবস্থিত বেসরকারি একটি নার্সিংহোমে । ভরতি করানোর জন্য 50 হাজার টাকা দিতেও হয়েছিল । অথচ, রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে ওই নার্সিংহোমের কাছে কোনও তথ্যই নেই । এদিকে, ওই রোগীকে নার্সিংহোমে যে ব্যক্তি 50 হাজার টাকা নিয়ে ভরতি করিয়েছিলেন, তাঁর-ও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না । ঘটনায় ওই 50 হাজার টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ওই নার্সিংহোমকে নির্দেশ দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন । পাশাপাশি, এই ঘটনায় ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানানোর জন্য এই রোগীর পরিজনদের পরামর্শ দিল কমিশন ।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন জানিয়েছে, বারুইপুরের বাসিন্দা 58 বছর বয়সি এই প্রৌঢ়া রোগীকে প্রথমেই নিয়ে যাওয়া হয়েছিল মুকুন্দপুরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে। তিনি ওই হাসপাতালের পুরোনো রোগী । সেখানে তাঁর কোভিড-19 টেস্ট করা হয় । এই টেস্টের রিপোর্টে কোভিড-19 পজ়িটিভ পাওয়া যায়। কিন্তু, ওই হাসপাতালে বেড ফাঁকা ছিল না। তাই সেখানে তাঁকে ভরতি করানো সম্ভব হয়নি । মুকুন্দপুরের ওই হাসপাতালে বেড না থাকার কারণে, এই রোগীকে তখন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পঞ্চসায়রে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। তবে, সেখানেও বেড না থাকায় ওই হাসপাতালের এক কর্মী এই রোগীকে তালতলা অঞ্চলের ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন । সেখানকার এক ব্যক্তির ফোন নম্বর-ও এই রোগীর পরিজনদের দেন পঞ্চসায়রের ওই হাসপাতালের ওই কর্মী। সেখানে ওই রোগীকে ভরতি করানোর জন্য 50 হাজার টাকা দাবি করেন । গত 7 জুলাই এই টাকা দিয়ে এই রোগীকে ওই নার্সিংহোমে ভরতি করান পরিজনরা। পরের দিন পরিজনরা রোগীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে রোগী জানান যে তাঁকে খেতে দেওয়া হয়নি, ঠিক মতো চিকিৎসা হচ্ছে না।
আরও পড়ুন : শুভেন্দুর দলবদল ও দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সংখ্যালঘু ভোট
গত 9 জুলাই এই রোগীকে ডিসচার্জ করিয়ে নিয়ে যান পরিজনরা। ডিসচার্জ করার সময় ওই নার্সিংহোমে ওই ব্যক্তি বলেন, এই রোগীকে তিনি পঞ্চসায়রের বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভরতি করানোর ব্যবস্থা করে দেবেন। রোগীকে নিয়ে পরিজনরা তখন পঞ্চসায়রের বেসরকারি ওই হাসপাতালে যান। কিন্তু, পঞ্চসায়রের ওই হাসপাতাল থেকে পরিজনদের বলা হয়, সেখানে বেড নেই। শেষ পর্যন্ত সেখানকার এক চিকিৎসকের হস্তক্ষেপে রোগীকে ওই হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। ওই হাসপাতালে রোগীর 20 দিন চিকিৎসা হয়েছিল। এর পরে সেখানে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের বিরুদ্ধে পরিজনদের অভিযোগ, আরও একবার কোভিড-19 টেস্টের কথা বলা হলেও ওই হাসপাতাল এই টেস্ট করেনি। কমিশন জানিয়েছে, ওই হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, কোভিড-19 নিয়ে সমস্যা ছিল না, এই রোগীর তখন কো-মরবিডিটি নিয়ে সমস্যা বেশি ছিল। তাই তখন সে সবের চিকিৎসা চলেছিল। সরকারি প্রোটোকল অনুযায়ী এই রোগীর আর কোভিড-19 টেস্ট করানোর দরকার ছিল না। হাসপাতালে এই যুক্তিকে মান্যতা দিয়েছে কমিশন।
আরও পড়ুন : আলোচনাতেই সমাধান, বলছেন মেহতাব
কমিশন আরও জানিয়েছে, ওই নার্সিংহোমের মালিক কমিশনে জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তিকে তিনি চেনেন না । ওই সময় তিনি কন্টেইনমেন্ট জ়োনে ছিলেন। সেই জন্য বাড়ি থেকে বের হতে পারছিলেন না। তাই একজন চিকিৎসককে তাঁর নার্সিংহোম দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি সম্ভবত ওই চিকিৎসকের স্বামী। রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে ওই নার্সিংহোমে কোনও রেকর্ড নেই । এই রোগীর থেকে 50 হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে কি না, এই রোগীর কোন ধরনের চিকিৎসা হয়েছে, এ সব বিষয়ে ওই নার্সিংহোমে কোনও তথ্য নেই । এরপর কমিশন নির্দেশ দেয়, যে 50 হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন এই রোগীর পরিজনরা, সেই টাকা পুরোটাই ফেরত দিতে হবে ।