কলকাতা, 30 অগস্ট: 2025 সালের মধ্যে দেশের পণ্যবাহী যানের চালকের বসার জায়গা বা কেবিনগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত করতে হবে । চলতি বছরেই এই কথা জানিয়েছিলেন রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়ে মন্ত্রী নীতিন গড়কড়ি । ইতিমধ্যেই গ্লোবাল সংস্থা যারা এই ধরনের গাড়ি তৈরি করে যেমন ভলভো বা স্কেনিয়া (Scania) এসি-সহ ট্রাক বাজারে নিয়ে এসেছে । তবে এই ঘোষণায় না-খুশ রাজ্যের ট্রাক মালিক পক্ষ ।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন মন্ত্রী ?
তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালকদের ট্রাক চালাতে হয় । এর ফলে তাঁরা অত্যন্ত পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েন । মূলত ট্রাক যেহেতু রাতের দিকেই বেশি চলাচল করে তাই ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসের হাড় হিমকরা শীতেও তাঁদের কষ্টের শেষ থাকে না । যাঁরা দূরপাল্লার ট্রাক চালান তাদের এই ধরনের চরম প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মধ্যে 12 থেকে 14 এমনকী 16 ঘণ্টা পর্যন্ত নাগাড়ে ট্রাক চালিয়ে যেতে হয় । এর ফলে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন । দেখা গিয়েছে যে, এই কারণেই ধীরে ধীরে চালকের অভাব দেখা দিচ্ছে ।
তাই যাতে চালকরা অনুকূল পরিস্থিতিতে সুস্থ থেকে গাড়ি চালাতে পারে সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত । 2016 সাল থেকেই বিষয়টি পরিকল্পনা পর্যায় ছিল ৷ তবে সম্প্রতি এই সম্পর্কিত ফাইলে সই করে মঞ্জুর দিয়েছেন মন্ত্রী নীতিন গডকড়ি । তবে এই সিদ্ধান্তে না খুশ ট্রাক মালিক পক্ষ ।
আরও পড়ুন : ট্রাকের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে মালিকপক্ষ; সমাধানের আশ্বাস পরিবহণ মন্ত্রীর
ইতিমধ্যেই ফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এই নয়া নিয়মের একাধিক অসুবিধার দিক তুলে ধরে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে । সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সজল ঘোষ জানান, কেন্দ্রীয়স্তরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এই মর্মে কোনও বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি হয়নি । তবে জানা গিয়েছে আগামী বছর প্রথম দিকেই জারি হতে পারে বিজ্ঞপ্তি । তা হাতে পেলেই বোঝা যাবে এই নিয়ম নতুন ভারত স্টেজ সিক্স গাড়ি অর্থাৎ বাজারে যে নতুন গাড়িগুলি নামছে সেগুলির ক্ষেত্রেই শুধু প্রযোজ্য হবে নাকি পুরনো গাড়িতেও বসাতে হবে এসি । আর যদি পুরনো গাড়িতে এসি বসাতে হয় তাহলে যেটুকু টাকা আসত তারও আর কোনও আশা থাকবে না । বরং উলটে টাকা দিতে হবে নিজেদের পকেট থেকে । কারণ পুরনো গাড়িতে এসি বসাবার খরচ প্রায় লক্ষ টাকার কাছাকাছি । এছাড়া পুরনো গাড়ির ইঞ্জিন এসির ভার বহন করতে পারবে না বেশিদিন ।
তিনি আরও জানান, বিদেশে রাস্তার পরিকাঠামো অনেক উন্নত । এখানে একেবারেই তেমনটা নয় । এমনিতেই প্রতিবছর লাইসেন্স থেকে পারমিট গাড়ির যন্ত্রাংশের দাম টোল ভাড়া বৃদ্ধি এইসব তো আছে ৷ তার উপর যদি এসি কেবিনের ভার চাপানো হয় তাহলে মালিকদের মাজা একেবারেই ভেঙে যাবে ।
এই বিষয়ে গুডস ট্রান্সপোর্ট অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সোনু উপাধ্যায় জানান, জ্বালানির দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে করোনার পর থেকেই ব্যবসার একেবারে বেহাল অবস্থা ৷ তার উপর যদি এখন এসি কেবিন করতে হয় তাহলে তেলের দাম যা হবে তাতে গাড়ি চালানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে ।
আর এক ট্রাক মালিক অমিত কেজরিওয়ালের কথায়, "যেহেতু মূলত ট্রাক রাতের দিকে চলে এবং কিছু চালক ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালায় তাই এসি লাগলে স্বাভাবিকভাবেই শারীরিক ক্লান্তি থেকে তাঁরা নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে ৷ এর ফলে পথ দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি ৷ আর চালকদের যদি বলা হয় যে এসি মাঝে মধ্যে চালাতে তাহলে তারা যে মালিকদের কথা শুনবে তেমনটাও মনে হয় না ।"
আর এক মালিক সুশীল কুমার সিংয়ের গলাতেও এই ব্যাপারে অসন্তোষের সুর শোনা গেল । তিনি বলেন, "আমাদের দেশের হাইওয়ে বা রাস্তার পরিকাঠামো এসি কেবিন বসানোর পক্ষে অনুকূল নয় একেবারেই । বিদেশে ছয় থেকে সাত লাইনের রাস্তা রয়েছে তাই সেখানে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম । কিন্তু এখানে শহরে ঢুকতে বা বেরোবার সময় এক এক সময় গোটা একটা দিনও যানজটে দাঁড়িয়ে যেতে হয় ট্রাককে । গাড়ির গতি যদি একরকম থাকে তাহলে এসি চালালেও কিছুটা কম জ্বালানি খরচ হয় । কিন্তু যানজটের মধ্যে এসি চালিয়ে রাখলে সেই খরচ আকাশ ছোঁয়া হয়ে যাবে ।"