কলকাতা, 28 জুন : গত বছর রাজ্যের স্কুলগুলিতে একাধিক যৌন হেনস্থার ঘটনা সামনে এসেছিল। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য । সেই ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতেই এবার স্কুলে পড়ুয়াদের যৌন নির্যাতন থেকে বাঁচাতে নতুন গাইডলাইন দিতে চলেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর। এই গাইডলাইন সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের স্কুলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। গাইডলাইনে স্কুলে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কী করতে হবে, ঘটে গেলে কী করতে হবে, গাইডলাইন না মানলে কী শাস্তি হবে সে সবই উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছেন স্কুল শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার তরুণকুমার মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন : কলেজে ভরতি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, আশ্বাস পার্থর
কী বলা হয়েছে এই গাইডলাইনে?
তরুণকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই নতুন গাইডলাইনের নাম 'দ্য চাইল্ড সেফটি ফ্রম সেক্সুয়াল অ্যাবিউজেস ইন দ্য স্কুল' । এটা সমস্ত স্কুলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যত সরকারি, বেসরকারি স্কুল আছে সব। এই গাইডলাইনের আওতায় 18 বছরের নিচে সকল পড়ুয়ারাই আসবে। এর দুটো অংশ আছে। একটা হল প্রিভেনটিভ মেসার্স, আর একটা পোস্ট অপারেটিভ মেসার্স। মানে ঘটনার আগে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে না ঘটে আর যদি ঘটে যায় তাহলে কী কী করতে হবে ।"
তিনি জানাচ্ছেন, তিনটি স্তরে তিনটি নোডাল কমিটি আছে । একটা স্টেট, একটা ডিস্ট্রিক্ট ও একটি সাব-ডিভিশন লেভেলে কমিটি থাকবে । এই গাইডলাইনটা যাতে কার্যকর হয় তা মনিটর করবে এই তিনটে কমিটি । আর স্কুলে এই গাইডলাইন কার্যকর হচ্ছে কি না তা মনিটর করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে 2018 সালের গাইডলাইন অনুযায়ী তৈরি স্টুডেন্টস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটিকে। শুক্রবার বেলা 12 টায় এই গাইডলাইন ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে বলে জানাচ্ছেন তরুণবাবু।
এই ধরনের ঘটনা রুখতে কী কী করতে হবে? (প্রিভেনটিভ মেসার্স)
1) একটি স্কুলের প্রতিটি কর্মচারী, যাঁরা আগে থেকেই আছেন বা যাঁরা নতুন যোগ করবেন তাঁদের সকলের অ্যান্টিসিডেন্ট ও ক্যারেক্টার চেক করা হবে । অ্যান্টিসিডেন্ট অর্থাৎ, তার আগে কোনও ঘটনা ঘটেছে কি না অর্থাৎ ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা । নতুন যাঁরা জয়েন করবেন তাঁদের পুলিশের মাধ্যমে চেক করা হবে । আর যাঁরা বর্তমানে কর্মরত তাঁরা গাইডলাইন মেনে স্বীকারোক্তি দেবেন । এটা স্কুলের টিচিং, নন-টিচিং, ড্রাইভার, সুইপারের মতো সব কর্মচারীর ক্ষেত্রে করা হবে।
2) প্রত্যেক পড়ুয়ার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর থাকবে স্কুলকে রাখতে হবে ।
3) প্রতিটি এমার্জেন্সি ফোন নম্বর যেমন স্থানীয় পুলিশ, হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবার ফোন নম্বর স্কুলে রাখতে হবে । সেই ফোন নম্বরের তালিকা পড়ুয়ার পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে । সেটা স্কুলের ডায়েরি বা অন্য যে কোনও কিছুর মাধ্যমে দিতে পারবে স্কুল ।
4) যৌন নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য স্কুলে যা কিছু আলোচনা হবে তা সমস্ত একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে । স্কুল এটা করছে কি না সেটা 6 মাস অন্তত স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে জানাতে হবে ।
5) সেক্স এডুকেশন সম্পর্কে পড়ুয়া ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বার্ষিক ট্রেনিং দিতে হবে । সেক্স এডুকেশন বলতে প্রধানত গুড টাচ-ব্যাড টাচের পার্থক্যটা পড়ুয়াদের বোঝানো হবে এবং বয়ঃসন্ধিকালে যে সব পরিবর্তন হয় সেগুলো সম্পর্কে তারা যেন ওয়াকিবহাল থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে । 5 বছর থেকে 18 বছর পর্যন্ত সব পড়ুয়াদের এই ট্রেনিং দিতে হবে । টিচিং স্টাফদেরও ট্রেনিং দেওয়া হবে আলাদা করে ।
6) স্কুলে একটা কমপ্লেন বক্স রাখতে হবে। অনেক সময় পড়ুয়ারা মুখে বলতে পারে না বা চাই না । সেক্ষেত্রে যেন বক্সের মধ্যে অভিযোগ জানাতে পারে তার জন্যই এই কমপ্লেন বক্স রাখতে হবে ।
কোনও ঘটনা ঘটে গেলে কী করতে হবে?
1) কোনও ঘটনা ঘটে গেলে তার প্রমান সেফগার্ড করে রাখতে হবে স্টুডেন্টস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি মনিটরিং কমিটিকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো পুলিশকে দেওয়া না হচ্ছে ।
2) অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত দু'জনেরই ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে হবে ।
3) স্কুলের কোনও কর্মচারী, শিক্ষক, অ-শিক্ষক কেউ যদি দেখেন যে, কোনও পড়ুয়ার ব্যবহারে পরিবর্তন হয়েছে সেটা সঙ্গে সঙ্গে সবার নজরে আনতে হবে । সেটা পড়ুয়ার অভিভাবকদের যেমন জানাতে হবে, তেমনি স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানাতে হবে ।
4) স্কুলে কোনও ঘটনা ঘটলে 24 ঘন্টার মধ্যে পুলিশকে জানাতে হবে ।
5) কোনও ঘটনা ঘটলে পড়ুয়ার স্বাধীনতা থাকছে স্কুল পরিবর্তন করার । এটা অপশনাল । যদি পড়ুয়া চাই তাহলেই । সেক্ষেত্রে সব রকমভাবে তাকে সাহায্য করা হবে যাতে সে অন্য স্কুলে গিয়ে ভরতি হতে পারে ।
6) কোনও ঘটনা ঘটলে যত দ্রুত সম্ভব মেডিক্যাল চেকআপ করা হবে সরকারি হাসপাতালে ফ্রিতে। প্রয়োজনে স্কুলেই করতে হবে । পুলিশকে খবর দেওয়া না গেলেও মেডিক্যাল চেকআপ করতে হবে । স্কুলকে বলা হচ্ছে তার জন্য একটা মেডিক্যাল রুম ঠিক করে রাখতে। যাতে এমার্জেন্সি পরিস্থিতিতে দ্রুত ওই রুমে পড়ুয়ার চিকিৎসা করা যায় । এই গাইডলাইন না মানলে শাস্তির কথাও জানাচ্ছেন তরুণকুমার মুখোপাধ্যায় ।