কলকাতা, 17 মার্চ : তৃণমূলের সঙ্গ আগেই ছেড়েছিলেন । এবার বিজেপির চোখেও আর 'শোভন' থাকলেন না ।
আসলে, শোভনকে প্রার্থী করতে রাজি হলেও বান্ধবী বৈশাখীতে গররাজি ছিল গেরুয়া শিবির ৷ তাকে টিকিট দিতে রাজি হয়নি । আর তাই রাগে-অভিমানে বৈশাখীকে নিয়েই পদ্ম-শিবির ত্যাগ করেছেন শোভন ৷
অবশ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক কোনওদিনই স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন না শোভন । দলে যোগ দিয়ে পদ পেয়েও বহুদিন হাতগুটিয়ে বসেছিলেন। যা নিয়ে তীব্র শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। মূলত বৈশাখীর পদ না পাওয়া নিয়ে গোঁসা হয়েছিল তাঁর। পরে অবশ্য বৈশাখীকে পদ দিয়ে শোভনের ক্ষোভ সামাল দেন বিজেপির নেতারা । ভোটের মাস কয়েক আগে থেকে সক্রিয়ও হন তাঁরা। এরইমধ্যে শোভনের কেন্দ্র বেহালা পশ্চিমে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে তৃণমূল। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলা স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হতে চেয়ে দলের কাছে আর্জি জানান শোভন। এ-পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। গোল বাধে প্রার্থী বাছাই নিয়ে। শোভনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁকে বেহালায় প্রার্থী করা হলেও বৈশাখীকে টিকিট দেওয়া হবে না।
অবশ্য প্রাক্তন মহানাগরিককে বেহালায় তাঁর পছন্দসই আসনেই টিকিট দেওয়া হত কি না তা পরিষ্কার নয়। তার কারণ, প্রার্থীর নাম ঘোষণার আগেই 'বিদ্রোহ' করে দল ছাড়ার কথা জানিয়ে দেন শোভন-বৈশাখী। তৃণমূল ছেড়ে আসা অন্য নেতাদের মতো শোভন বিজেপিতে প্রথম থেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। দু'পক্ষের মধ্যে কেমন যেন ঢাকঢাক-গুড়গুড় সম্পর্ক চলছিল। মাঝখানে একবার তাঁর প্রাক্তন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখাও করে আসেন কানন। ফলে প্রাক্তন মেয়র ফের তাঁর পুরনো দলে ফিরছেন কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় । যদিও সেই জল্পনা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি । রত্নার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা থেকে শুরু করে তৃণমূল ত্যাগ, শোভনের জীবনে বৈশাখীর আবির্ভাবের পরই ঘটনার ঘনঘটা । নবতম সংযোজন হল বিজেপির সংস্রব ত্যাগ । বিষয়টি তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত হলেও এর ফলে শোভনের ইমেজে যে বেশ কিছুটা ধাক্কা লেগেছে তা অস্বীকার করা যায় না ।
আরও পড়ুন : শুভেন্দুর গলায় বিজেপির বকলেস বাঁধা, কটাক্ষ সুজাতার
শোভন অবশ্য 'বেশ করেছি প্রেম করেছি' মনোভাব দেখিয়ে যাবতীয় সমালোচনা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে গিয়েছেন । বর্তমানে শোভনের কাছে যেন বৈশাখীই প্রথম ও শেষ কথা । তাতে রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আঘাত লাগলেও কুছপরোয়া নেই মনোভাব তাঁর ।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এরপর কি করবেন শোভন ?
তৃণমূলে ফেরা আপাতত সম্ভব নয় তাঁর । কারণ, ওই দলে তাঁর 'শত্রু' রত্না রয়েছেন । হাতে রইল কংগ্রেস । কিন্তু সেখানে যাওয়ার কোনও মানে হয় না । 'ফুটো নৌকা'য় কেউ উঠতে চাইবেন না । সিপিএম-এ চাইলেই ঢোকা যায় না । তাহলে কি রাজনৈতিক জীবনে ইতি পড়তে চলেছে শোভনের ?
মনে হয় না এত তাড়াতাড়ি রাজনীতির ইনিংস শেষ করবেন শোভন । তিনি পোড়খাওয়া রাজনীতিবীদ । আপাতত ভোটের ফল প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন । তারপর সুযোগ বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন । কিন্তু যদি রত্না জিতে যান ? তখন কিন্তু অথৈ জলে পড়তে পারেন শোভন । কারণ, 'পরাক্রমী' রত্না যেনতেনপ্রকারেণ শোভনের প্রত্যাবর্তন আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠবেন । তৃণমূল নেত্রী তখন কাকে বাছবেন রত্নাকে নাকি তাঁর কাননকে? নাকি ব্যালেন্স করে দু'জনকে নিয়েই চলবেন ?
আরও পড়ুন : পদ্মবন ছাড়ার ইচ্ছেপ্রকাশ করে চিঠি শোভন-বৈশাখীর
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে এমন উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে প্রেমিকার জন্য সিংহাসন ত্যাগ করেছেন রাজা । তবে বান্ধবীর জন্য নিজের রাজনৈতিক জীবনকে এমন অনিশ্চয়তার মুখে ফেলার নজির কিন্তু বিরল ।