কলকাতা, 20 জুন : কারও বাংলা ভালো লাগে । কারও আবার ইতিহাস বিষয়টি ভীষণ পছন্দের ৷ কারও পছন্দের বিষয় ভূগোল । তবে অঙ্ক ভালবাসে এমন পড়ুয়া তুলনায় কম ৷ অঙ্কের ভীতি আমাদের অনেকের মধ্যে রয়েছে । কারও ক্ষেত্রে এই ভয় সারাজীবনেও কাটে না । তবে গণিত হল এমন একটি বিষয় যা আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয় । অঙ্কের ভীতি কাটাতে ছোটবেলাতেই ভিতটা শক্ত করতে হবে ৷ অনেক শিক্ষক, শিক্ষিকারা মনে করেন, ছোটবেলায় অঙ্কের ভীতি কাটাতে হলে পড়ুয়াদের কাছে বিষয়টি প্রাঞ্জল করে তুলতে হবে । আর তখনই কাজে আসে বৈদিক গণিতবিদ্যা ।
হিন্দু শাস্ত্রে যে চারটি বেদ রয়েছে তার মধ্যে চতুর্থ বেদ অর্থাৎ অথর্ব বেদের 16টি সূত্র থেকে বেশ কিছু ফর্মুলা ব্যবহার করে বৈদিক গণিতবিদ্যার শুরু । দ্রুত গণনার জন্য গণিতের কৌশলই হল বৈদিক গণিত ৷ প্রথম যিনি বৈদিক গণিত নিয়ে বই লিখেছিলেন তাঁর নাম স্বামী ভারতী কৃষ্ণ তীর্থ । এরপর বহু পণ্ডিত ও মনীষীরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গণিত চর্চা করতেন । তবে প্রথাগত গণিত শিক্ষা থাকলেও কখনও ভারতীয় পঠনপাঠনের অঙ্গ হয়ে ওঠেনি বৈদিক গণিত । পাঠক্রমে গণিতের এই পদ্ধতিকে রাখা হবে কি না তা নিয়ে বহু দিন ধরেই আলোচনা চলছে ।
পার্ক সার্কাসের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল মহাদেবী বিড়লা ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন মালিনী ভগৎ ৷ তিনি বলেন, "আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি স্কুলে বৈদিক গণিত চালু করা হলেও বিষয়টি তেমন একটা জনপ্রিয়তা পায়নি । আমি যখন কলকাতার একটি নামী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলাম তখন বৈদিক গণিত চালু করি । কলকাতায় যে ক'টি স্কুল প্রথম বৈদিক গণিত তাদের পাঠ্যক্রমে চালু করেছে তাদের মধ্যে আমার স্কুলও ছিল প্রথম । অঙ্কে দুর্বল পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই প্রথাগত গণিতের পাশাপাশি পাঠ্যক্রমে বৈদিক গণিত ঢোকাই । তৃতীয় থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত বিষয়টি চালু করা হয়েছিল ।"
আরও পড়ুন : Siliguri Air Pollution : বাতাসে বিষ, গাড়ির ধোঁয়ায় দমবন্ধ ; সঙ্কটে শিলিগুড়ি
তাঁর ওই সিদ্ধান্ত ছাত্রছাত্রীদের উপকারে লেগেছিল তা জানান মালিনী দেবী ৷ তিনি বলেন, "আশ্চর্যের বিষয়, যেসব ছাত্রছাত্রীদের অঙ্কে একটা ভীতি ছিল সেটা ধীরে ধীরে কেটে গিয়েছিল । অন্যান্য বিষয়েও তারা অনেক বেশি মনোনিবেশ করতে আরম্ভ করল । আনন্দের সঙ্গে অঙ্ক কষতে শুরু করেছিল তারা ৷ পড়ুয়ারা অঙ্কের ক্লাসে মজা ও আনন্দ খুঁজে পেল ।"
বৈদিক গণিত পদ্ধতিতে দ্বাদশ শ্রেণীর জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি বা অ্যালজেবরা সহ আরও অন্যান্য অঙ্কগুলির খুব সহজেই সমাধান করা সম্ভব ।
গণিতের শিক্ষক শুভম চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, কম্পিউটার বা ক্যালকুলেটরের সাহায্য ছাড়া বড় বড় গণনার সমাধান করতে হলে বৈদিক গণিতের জুড়ি নেই । তবে এই পদ্ধতিতে গণনা বা অঙ্ক করতে হলে অনেক কিছু মনে রাখতে হয় ৷ এবং মনে রাখার জন্য অঙ্কগুলি বারবার অভ্যাস করে যেতে হয় । আর এই মনে রাখার ব্যাপারটাই পড়ুয়াদের মনে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে । কারণ গণিতের প্রতিটি পদ্ধতি লজিক বা যুক্তি নির্ভর । বৈদিক পদ্ধতিতে যে গণিত শেখানো হয় সেখানে যুক্তি বা লজিকের থেকেও বড় হল কিছু নিয়ম মেনে রাখার ব্যাপার ।
শুভম চট্টোপাধ্যায় বলেন, "ছোট ছোট গণনার ক্ষেত্রে বৈদিক পদ্ধতি ব্যবহার না করলেও চলে । তবে বড় অঙ্কের ক্ষেত্রে বৈদিক গণিত খুবই কাজে আসে । তাই আমার মনে হয়, চাকরির পরীক্ষা বা কোনও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বৈদিক গণিত খুবই উপকারী একটি মাধ্যম ৷ চটজলদি অঙ্ক কষে ফেলার ক্ষেত্রে এর জুড়ি নেই ।"