কলকাতা, 26 জুলাই : ক্রমবর্ধমান কোরোনা সংক্রমণ ও দীর্ঘ লকডাউনের জেরে বড়সড় প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে । একাধিক ক্ষেত্রে ছাঁটাইও হয়েছে । শুধু পরিযায়ী শ্রমিক নয়, সংগঠিত, অসংগঠিত ক্ষেত্র সহ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বহু মানুষের চাকরি গেছে । শ্রমিক সংগঠন ও IT ফোরামের নেতাদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে কোনও বিকল্প কর্মসংস্থান নিয়েও পদক্ষেপ করছে না সরকার । আবেদন জানালেও সদিচ্ছা দেখাচ্ছে না প্রশাসন । যদিও অন্য কথা বলছে রাজ্য সরকার । দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যে কর্মসংস্থানের গড় সন্তোষজনক । তাঁর সংযোজন দেশে যেখানে বেকারত্ব ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে রাজ্যে 40 শতাংশ বেকারত্ব কমেছে ।
কর্মসংস্থানের খতিয়ানে কোথায় দাঁড়িয়ে রাজ্য
সম্প্রতি সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির সমীক্ষাপত্র প্রকাশ পেয়েছে । তথ্য বলছে, এই মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার 6.5 শতাংশ । দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি বেকারের সংখ্যা হরিয়ানায় । সেখানে বেকারত্বের হার 33.6 শতাংশ । সবচেয়ে কম বেকারত্বের হার অসমে । 0.6 শতাংশ । বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, নোট বাতিলের পর থেকেই দেশে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে । তবে গ্রামাঞ্চলের অবস্থা শহরগুলির থেকে ভালো । শহরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারত্ব । লকডাউনের আগে পর্যন্ত বেকারত্বের হার ছিল 8 শতাংশ । কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 11 শতাংশ । দেশজুড়ে মনরেগা এবং খরিফ শস্য উৎপাদনে বহু মানুষ কাজের সন্ধান পেয়েছেন । দিনকয়েক আগে অর্থমন্ত্রক তার সাপ্তাহিক প্রতিবেদনেও একথা জানিয়েছিল ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তী । সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর বক্তব্য, "দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হওয়ার পর এপ্রিল ও মে মাসে রাজ্যে 46 শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছেন । অন্যান্য রাজ্যের মতো আমাদের রাজ্যেও শ্রমিক-কর্মচারীদের অবস্থা খুব খারাপ । সবচেয়ে বড় সংখ্যায় শ্রমিক যুক্ত আছে মেটিয়াব্রুজ়ের রেডিমেড গারমেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে । আমরা দেখছি, সেখানে প্রায় 4-5 লাখ শ্রমিকের কোনও কাজ নেই । আড়াই-তিনমাস ধরে সম্পূর্ণ বেকার তাঁরা । পয়লা বৈশাখের বাজার গেছে, ইদের বাজার গেছে । পুজো আসছে কিন্ত কোনও অর্ডার নেই । আমরা রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা ও কাজ পাইয়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম, কিন্তু কোনও সরকারই পদক্ষেপ করেনি ।"
ফোরাম ফর IT অ্যান্ড IT এমপ্লয়িজ় ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কিংশুক চট্টোপাধ্যায় বলেন, "তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রচুর মানুষের চাকরি গেছে । ব্যাপক ছাঁটাই হয়েছে কলকাতায় । ছোটো, বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মিলিয়ে প্রায় 3200 জন কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে । পুরো বিষয়টি নিয়ে লেবার কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে । পুরো বিষয়টি মেইল করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে । আশা করি তিনি কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন । যদি এই ছাঁটাই বন্ধ না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আমার বৃহত্তর আন্দোলনে নামব ।"
এবিষয়ে রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী অনাদি শাহু জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকরা । কর্মসংস্থান না থাকায় কলকাতা সহ রাজ্যের অন্য জেলাগুলি থেকে প্রায় 3 লাখ 42 হাজার শ্রমিক অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছিলেন । এখন তাঁরা রাজ্যে ফিরে এসেছেন । কিন্তু এখনও বেকার । অনেক শ্রমিক পেশা বদল করেছেন । শুধু কলকাতাতে 12 হাজার সংগঠিত এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষ পেশা বদল করেছেন । মাছ বিক্রি থেকে শুরু করে রাস্তা পরিষ্কার সব ধরনের কাজ করছেন তাঁরা । রাজ্য সরকার আর্থিক সহায়তা বা কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনও পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি ।
কোনপথে কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ
আপাতত অনিশ্চয়তায় পুরো বিষয়টি । বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছে, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কী পরিবর্তন আসতে পারে, এই মুহূর্তেই তা বলে দেওয়া সম্ভব নয় । আরও কতদিন এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলতে হবে তাও অজানা । তবে এর মাঝেই পেশা বদল, বিকল্প কর্ম সন্ধানের কথা বলছেন অনেকে । এবিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনের সম্পাদক দেবাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, "গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে কিছুটা বিকল্র সন্ধান পাচ্ছেন মানুষজন । পরিযায়ী শ্রমিকরাও বাড়ি ফিরে চাষের কাজে হাত লাগিয়েছেন । অনেকে সবজি চাষ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন । শ্রমিক সংগঠনের কাছে এবং প্রাদেশিক কৃষকসভার কাছে এরাজ্যে স্বীকৃত চাষির সংখ্যা 88 লাখ 52 হাজার 756 জন । এই সংকটে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন । অনেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত হয়েছেন । যেমন পাট উৎপাদন । পাটজাত সামগ্রী বাজারে বিক্রি করে এই লকডাউনের মধ্যেও আর্থিকভাবে কিছুটা স্বনির্ভর হতে পেরেছেন এ রাজ্যের বহু কৃষক ।"