কলকাতা, 30 এপ্রিল : কোরোনা আবহে চলতি বছর বিশ্ববিদ্যালয়- কলেজের পরীক্ষা কীভাবে হবে ও অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার কী হবে সেই সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রকাশ করেছে UGC (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) । সব রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পাঠানো হয়েছে সেই গাইডলাইন । কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার সংক্রান্ত যে বিষয়গুলি নিয়ে রাজ্যের আলোচনা হয়েছিল সেই বিষয়গুলি গাইডলাইনে জায়গা পেয়েছে । আজ এমনই জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ।
COVID-19 মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে লকডাউন । কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন থেকে শুরু করে পরীক্ষা, শিক্ষাবর্ষ সবকিছুর উপরই যে এর প্রভাব পড়বে তা আগেই আঁচ করা গেছিল । তাই কীভাবে পরীক্ষা হবে, কোন সময়ে হবে, নতুন শিক্ষাবর্ষ কবে থেকে শুরু হবে এই ধরনের পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখে সুপারিশ করার জন্য সাত সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছিল UGC । সেই কমিটি শুক্রবার তাদের রিপোর্ট জমা করে । বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট নিয়ে সোমবার আলোচনা করে UGC। সেই আলোচনার ভিত্তিতে গাইডলাইন তৈরি করে গতকাল তা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে ।
এই গাইডলাইনে যে সুপারিশগুলি করা হয়েছে সেগুলি পরামর্শমূলক বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলি পরিস্থিতি ও সুবিধা অসুবিধা বুঝে তাতে রদবদল করতে পারে । এমনকী, রাজ্য সরকার বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা গাইডলাইন বা নির্দেশিকায় এই পরামর্শগুলি কোনওরকম বাধা তৈরি করবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
পরীক্ষার ক্ষেত্রে গাইডলাইনে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত সেমেস্টার বা চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা সামাজিক দূরত্ব মেনে করতে হবে । এক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সেমেস্টারের পরীক্ষা জুলাই মাসে করা যেতে পারে । অন্তর্বর্তী সেমেস্টারের পড়ুয়াদের মূল্যায়ন অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা এবং আগের সেমেস্টারের নম্বরের ভিত্তিতে দেওয়া যেতে পারে । তবে, যে সব রাজ্যে COVID-19 নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে সেখানে জুলাই মাসে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে । তিন ঘণ্টার পরিবর্তে দু'ঘণ্টার পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবতে বলা হয়েছে । সামাজিক দূরত্ব মেনে যে কোনও সেমেস্টার বা বর্ষের পরীক্ষা অনলাইন বা অফলাইন মোডে করা যেতে পারে । অন্তর্বর্তী সেমেস্টারের পড়ুয়া, যাদের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা ও পূর্ববর্তী সেমেস্টারের পরীক্ষার ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হবে, তাঁরা চাইলে গ্রেড ইমপ্রুভ করার জন্য পরবর্তী সেমেস্টারে বিশেষ পরীক্ষা দিতে পারবে । অন্তর্বর্তী সেমেস্টারের জন্য যে প্রভিশনগুলি রয়েছে সেগুলি শুধুমাত্র 2019-20 শিক্ষাবর্ষের জন্যই প্রযোজ্য । স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পড়ুয়াদের ফিল্ড বা ল্যাব ভিত্তিক অ্যাসাইনমেন্টের বদলে ডেটা ভিত্তিক, পর্যালোচনামূলক, সফটওয়্যার পরিচালিত ডিসার্টেশন দেওয়ার কথা ভাবতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় । স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও গবেষকদের মৌখিক পরীক্ষা অনলাইনের মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে । পড়ুয়া এবং গবেষক উভয়কেই লকডাউনের সময়কালে উপস্থিত বলে ধরতে হবে । P.hD ও M.Phill-এর ক্ষেত্রে ছ'মাস সময় বাড়ানো হবে । সুপারিশ করা অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, জুলাই মাসে সেমেস্টার পরীক্ষা ও জুলাই ও অগাস্টের মধ্যে ফল প্রকাশের কথা বলা হয়েছে । অগাস্ট মাসে ভরতি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নতুন শিক্ষাবর্ষ সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু করতে বলা হয়েছে গাইডলাইনে । আজ ফেসবুকে UGC-র গাইডলাইন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় লেখেন, "UGC-র থেকে যে চিঠি সমস্ত রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পাঠানো হয়েছে তার বিষয়বস্তু আমাদের হাতে এসেছে । প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হয়েছে, আমাদের চিঠি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের যে বিষয়গুলি নিয়ে কথা হয়েছিল তার অনেকটাই এই চিঠিতে জায়গা পেয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই জানিয়েছিলেন, টার্মিনাল সেমেস্টারগুলির পরীক্ষা নিতে হবে । সেটাই এখানে বলা হয়েছে ।" এই গাইডলাইন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির থেকে মতামত সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী । তিনি বলেন, "ইতিমধ্যেই সমস্ত উপাচার্যদের থেকে এবিষয়ে তাঁদের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে । সংগৃহীত মতামত নিয়ে আমাদের দপ্তর কাজ করবে । বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী সমস্ত বিষয়টি বিবেচনা করে শিক্ষা দপ্তরকে জানালে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।" রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও আগামীদিনে পরীক্ষা ব্যবস্থা ও অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার কোন পথে এগোবে তা নিয়ে আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে ।