কলকাতা , 24 সেপ্টেম্বর : কোরোনার জন্য সরকারি সার্কুলার এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এর অ্যাডভাইজ়ারি মানেনি বেসরকারি দুই হাসপাতাল । এর জেরে কলকাতার ওই দুই বেসরকারি হাসপাতালকে 20 হাজার টাকা করে জরিমানা করল স্বাস্থ্য কমিশন । এই 40 হাজার টাকা মুখ্যমন্ত্রীর কোরোনা তহবিলে জমা দেবে কমিশন । কোরোনার সার্কুলার অমান্য করার ঘটনায় এই প্রথম কোনও হাসপাতালের বিরুদ্ধে জরিমানা করল কমিশন । একই সঙ্গে, কমিশন এই দুই হাসপাতালকে সতর্ক করে জানিয়ে দেয় , ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে দুই হাসপাতালকে আরও বড় অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হবে এবং দুই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে।
স্বাস্থ্য কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে , দুই হাসপাতালের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক অভিযোগ দায়ের হয় কমিশনে । দু’টি হাসপাতালের একটি EM বাইপাসের ধারে হাইল্যান্ডপার্কের কাছে অবস্থিত। অন্যটি তপসিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। হাইল্যান্ডপার্কের কাছে অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালে এক কোরোনা রোগীকে ভরতি করানো হয়েছিল । তাঁর চিকিৎসার খরচ হিসাবে সেখানে ছয় লাখ টাকার উপর বিল হয়েছিল । রোগীর পরিজনরা কমিশনে অভিযোগ করে , অনেক বেশি টাকার বিল করা হয়েছিল । রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হচ্ছিল না । ঘটনার জেরে তখন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল পুলিশ । পুলিশের হস্তক্ষেপে 2 লাখ 20 হাজার টাকা দিয়ে হাসপাতাল থেকে ওই রোগীকে ছুটি করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান পরিজনরা । এমন অভিযোগের জেরে মামলা শুরু হয় কমিশনে । তবে, এই মামলার শুনানিতে অংশগ্রহণ করেননি অভিযোগকারী । কমিশন জানিয়েছে, এই মামলা অভিযোগকারী আর চালাতে চান না । পুলিশের মধ্যস্থতায় সমস্যাটি মিটে গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে । কমিশন জানিয়েছে, এই মামলায় ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, বাধ্য হয়ে 2 লাখ 20 হাজার টাকা নিয়ে ওই রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে, একই সঙ্গে কমিশন জানিয়েছে, এই মামলা অভিযোগকারী আর চালাতে না চাইলেও কমিশন দেখেছে, রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে ওই হাসপাতালে যে বিল করা হয়েছে , তাতে অনেক গাফিলতি রয়েছে । কোরোনার জন্য এই বিলের অনেক জায়গায় সরকারি সার্কুলার এবং কমিশনের অ্যাডভাইজ়ারি মানেনি ওই হাসপাতাল । সেক্ষেত্রে অভিযোগকারী আর মামলা চালাতে না চাওয়ায় হাসপাতালকে শুধুমাত্র 20 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে, ভবিষ্যতে এই ধরনের গাফিলতি আবার ধরা পড়লে হাসপাতালকে আরও বেশি অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হবে ও লাইসেন্স বাতিল করার জন্য সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয় ৷
অন্যদিকে, তপসিয়া অঞ্চলে অবস্থিত একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কমিশনে অভিযোগ করা হয়, ওই হাসপাতালে এক কোরোনা রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে অনেক বেশি অঙ্কের টাকার বিল করা হয়েছে । এই রোগী হাসপাতালে পাঁচ দিন ভরতি ছিলেন । এমন অভিযোগের জেরে শুরু হয় মামলা । তবে, এই মামলার ক্ষেত্রেও শুনানিতে অংশগ্রহণ করেননি অভিযোগকারী । কমিশন জানিয়েছে, বেসরকারি এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, 25 হাজার টাকা দিয়ে রোগীকে নিয়ে চলে গিয়েছিলেন পরিজনরা । তবে, বিষয়টি তাঁরা তাঁদের মধ্যে ঠিক করে নিয়েছেন বলে জানান ৷ পাশাপাশি , রোগীর পরিজনরা আরও 25 হাজার টাকা দেবেন বলে জানিয়েছেন । কমিশন জানিয়েছে, এক্ষেত্রেও মামলা আর চালাতে চাননি অভিযোগকারী । তবে এখানেও বিলের ক্ষেত্রে অনেক গাফিলতি ছিল । কমিশন জানিয়েছে, ওই হাসপাতালে একদিনের বেডের খরচ 17 হাজার টাকা ধরা হয়েছে । একদিনে এত বেশি টাকা বেড খরচ , বড় কোনও হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ারের বেডের ক্ষেত্রে হতে পারে । পরে অবশ্য বেডের চার্জ 17 হাজার টাকার বদলে সাড়ে ছয় হাজার টাকা করা হয়েছিল । এখানও কোরোনার জন্য সরকারি সার্কুলার এবং কমিশনের অ্যাডভাইজ়ারি মানা হয়নি । এর জন্য হাসপাতালকে 20 হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এই দুই পৃথক মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগকারীরা মামলা আর চালাতে চাননি । এদিকে, কোরোনার জন্য সরকারি সার্কুলার এবং WBCERC-এর অ্যাডভাইজ়ারি অমান্য করেছে এই দুই হাসপাতাল । এই কারণে দুই হাসপাতালকে 20 হাজার টাকা করে জরিমানা করে মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছে কমিশন ।