ETV Bharat / state

Women on the Wheels: ধন্যি মেয়ে ! সংসারের হাল ধরতে কঠিন জীবনসংগ্রামের গল্প শোনালেন দুই মহিলা চালক

author img

By

Published : May 11, 2023, 5:45 PM IST

Updated : May 11, 2023, 6:28 PM IST

সংসারের হাল ধরতে কঠিন জীবনসংগ্রাম চালাচ্ছেন দুই মহিলা চালক ৷ অন্য রকম পেশায় ভর করে দুই বঙ্গকন্যার এগিয়ে চলার গল্প অনুপ্রেরণা প্রতিটি নারীর জন্য ৷

Two Bengali women
দুই মহিলা চালক

কলকাতা, 11 মে: দুই বঙ্গকন্যা ৷ একজন বিবাহিত ৷ তবে একটি ক্ষেত্রে দুজনেরই একই রোজনামচা ৷ দুজনেই কাছের করে নিয়েছেন পথকে ৷ একজনের ওঠা-বসা ক্লাচ, ব্রেক, স্টিয়ারিং নিয়ে ৷ অপর জন আবার স্কুটিতে বসেই চষে বেড়াচ্ছেন রাস্তায় রাস্তায় ৷ অ্যাপ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এটাকেই পেশা করে নিয়েছেন দুই মহিলা চালক ৷ সংসারের প্রয়োজনের দাবি মেনেই 'পথের দাবি'কে আঁকড়ে ধরেছেন তাঁরা ৷ বাঁশদ্রোণীর দীপ্তা ঘোষ ও রাজারহাটের নবনীতা সাহা প্রত্যেকটি মহিলার জন্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা ৷

বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা বছর তিরিশের দ্বীপ্তা ঘোষ । জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক করেছেন । তার আগে কলকাতার জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে করেছেন ডিপ্লোমা ৷ তাঁর বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে ।

দীপ্তার কাছে তাঁর বাবা হিরো হলেও তিনি বাইরে কাজ করায় ছোট থেকে মেয়ে তাঁকে পাননি । ফলে প্রথম থেকেই তাঁর মাথায় ছিল কলকাতায় পরিবারকে রেখে বাইরে কাজ করবেন না । তাই কলকাতাতেই কখনও ইঞ্জিনিয়ারিং বা শিক্ষকতা করেছেন । এরই মধ্যে আচমকাই একদিন ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দ্বীপ্তা । প্রায় ছ'মাস বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন । সুস্থ হওয়ার পর 2020 সালে আহমেদাবাদ থেকে তাঁর বাবা ফেরেন ৷ আর তার এক মাসের মধ্যেই স্ট্রোক, চলে গেলেন বাবা ৷ দীপ্তার কথায়, "ওই সময় আমি মা-বোনকে নিয়ে পুরো একা ৷"

দীপ্তা চেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে কিছু করতে । সেই সময় তাঁর মা তাঁকে বলেন, ক্যাব চালানোর কথা । শখে গাড়ি চালানো শিখেছিলেন দীপ্তা । তবে তা যে জীবনের একটা অংশ হয়ে যাবে, তা আন্দাজও করতে পারেননি তিনি । তারপর থেকে শুরু হয় তাঁর গতিময় জীবন । দীপ্তা জানান, মেয়ে ক্যাবচালক হিসাবে অনেকেই তাঁকে ভরসা করতেন না । আপনি পারবেন ? এই প্রশ্ন বহুবার তাঁকে শুনতে হয়েছে । তবে বর্তমানে তিনি গাড়ি চালানোয় বেশ পটু । মা আজও তাঁর পাশে । বোনের বিয়ে দিয়েছেন । তবে নিজে ? উত্তরে তিনি জানান, "গাড়ি চালানো আমি ছাড়তে পারব না । ওটা আমার প্রথম ভালোবাসা । কলকাতার বাইরেও আমি যাব না মাকে রেখে । যদি এমন কেউ আসে যে আমার এই পেশা মেনে নিয়ে সংসার করবে তবেই আমি রাজি ।"

লড়াইটা কিছু কম ছিল না রাজারহাটের নবনীতা সাহার ৷ মাধ্যমিকের পরেই 2003 সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি ভালোবাসার মানুষের হাত ধরেছিলেন । পরবর্তীকালে তাঁর বাবা মেনে নিলেও পরিবারের মধ্যে তৈরি হয়েছিল একটি 'কিন্তু'। মা-বোনের সঙ্গেও বেশ খানিকটা দুরত্ব তৈরি হয় তাঁর । তবে যে ভালোবাসার মানুষের জন্য সেইদিন ঘর ছেড়েছিলেন, আজ সে নবনীতার চোখে 'ভিলেন'। বর্তমানে নবনীতার জীবনজুড়ে শুধুই অবহেলার পাহাড় । শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসা কোনওদিনই নবনীতার ভাগ্যে জোটেনি । তাই জীবনের 39 বছরে এসে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজতে থাকেন তিনি ।

সাইকেল চালাতে না জানা মেয়েটি জীবনের কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে সাইকেল নিয়েই যুক্ত হন খাবার ডেলিভারি সংস্থার সঙ্গে । অর্ডার এলেই সেই খাবার তিনি পৌঁছে দিতেন যথাযথ ঠিকানায় । এরপর কেনেন একটি স্কুটি । তবে এ বার খাবার নয়, স্কুটিতে একেবারে অচেনা মানুষদের নবনীতা পৌঁছে দেন তাঁদের গন্তব্যে ৷ স্কুটিটি কিনে দিয়েছেন তাঁর স্বামী । তবে তার জন্য তিনি কথা শোনাতেও ছাড়েননি । কিন্তু এত কাজ ছেড়ে কেন স্কুটি চালাতে শুরু করলেন নবনীতা ? উত্তরে একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে নবনীতার গলায়, "এই কাজে বেরনো আছে, কিন্তু ফিরে আসার কোনও তাড়া নেই । কারণ আমার ফেরার ঠিকানায় কোনও সম্মান নেই । ফিরলেই স্বামী বলেন, মরবি কবে ?"

নবনীতার কাছেও তাঁর বাবাই ছিলেন যাবতীয় অনুপ্রেরণা ৷ 2019 সালে আচমকাই তিনি মারা যান । পর পর দুবার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি । এরপর পাশে ছিল শুধু দুই সন্তানা ৷ পরিবারের বাকি সবার চক্ষুশূল হয়ে যান নবনীতা ৷ এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকেও এতটাই উস্কানি দেওয়া হয় যে, একবার মায়ের গায়েও হাত তোলে সেই একরত্তি মেয়ে ৷ তবে আজ মেয়ে বড় হয়েছে ৷ সে বোঝে তার মায়ের জীবনসংগ্রাম ৷

স্কুটি চালিয়েই সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন নবনীতা । তবুও পান থেকে চুন খসলেই চলে স্বামীর অত্যাচার । যা রোজ রাতে এখন নবনীতার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ৷ তিনি বললেন, "আমি যখন কারওকে স্কুটিতে করে নিয়ে যাই, খুব সাবধানে চালাই । কিন্তু যখন একা থাকি, কোনও পরোয়া করি না । কারণ আমার ফেরার অপেক্ষায় কেউ থাকে না ।" তবে এত অবহেলা সহ্য করেও কেন রয়ে গিয়েছেন সেই সংসারে ? তার কারণ হিসাবে নবনীতা বললেন, "আমার সন্তান দুটো খুব ছোট । ওঁদেরকে আমি খুব ভালোবাসি ।"

আরও পড়ুন: স্বপ্ন নয়, সত্যি! সুরাতের দোকানে বিকোচ্ছে 24 ক্যারেট গোল্ড প্লেটেড আইসক্রিম

কলকাতা, 11 মে: দুই বঙ্গকন্যা ৷ একজন বিবাহিত ৷ তবে একটি ক্ষেত্রে দুজনেরই একই রোজনামচা ৷ দুজনেই কাছের করে নিয়েছেন পথকে ৷ একজনের ওঠা-বসা ক্লাচ, ব্রেক, স্টিয়ারিং নিয়ে ৷ অপর জন আবার স্কুটিতে বসেই চষে বেড়াচ্ছেন রাস্তায় রাস্তায় ৷ অ্যাপ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে এটাকেই পেশা করে নিয়েছেন দুই মহিলা চালক ৷ সংসারের প্রয়োজনের দাবি মেনেই 'পথের দাবি'কে আঁকড়ে ধরেছেন তাঁরা ৷ বাঁশদ্রোণীর দীপ্তা ঘোষ ও রাজারহাটের নবনীতা সাহা প্রত্যেকটি মহিলার জন্য নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণা ৷

বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা বছর তিরিশের দ্বীপ্তা ঘোষ । জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক করেছেন । তার আগে কলকাতার জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পলিটেকনিক কলেজ থেকে ইলেকট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন নিয়ে করেছেন ডিপ্লোমা ৷ তাঁর বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে ।

দীপ্তার কাছে তাঁর বাবা হিরো হলেও তিনি বাইরে কাজ করায় ছোট থেকে মেয়ে তাঁকে পাননি । ফলে প্রথম থেকেই তাঁর মাথায় ছিল কলকাতায় পরিবারকে রেখে বাইরে কাজ করবেন না । তাই কলকাতাতেই কখনও ইঞ্জিনিয়ারিং বা শিক্ষকতা করেছেন । এরই মধ্যে আচমকাই একদিন ট্রেন দুর্ঘটনার কবলে পড়েন দ্বীপ্তা । প্রায় ছ'মাস বাড়িতে চিকিৎসাধীন ছিলেন । সুস্থ হওয়ার পর 2020 সালে আহমেদাবাদ থেকে তাঁর বাবা ফেরেন ৷ আর তার এক মাসের মধ্যেই স্ট্রোক, চলে গেলেন বাবা ৷ দীপ্তার কথায়, "ওই সময় আমি মা-বোনকে নিয়ে পুরো একা ৷"

দীপ্তা চেয়েছিলেন স্বাধীনভাবে কিছু করতে । সেই সময় তাঁর মা তাঁকে বলেন, ক্যাব চালানোর কথা । শখে গাড়ি চালানো শিখেছিলেন দীপ্তা । তবে তা যে জীবনের একটা অংশ হয়ে যাবে, তা আন্দাজও করতে পারেননি তিনি । তারপর থেকে শুরু হয় তাঁর গতিময় জীবন । দীপ্তা জানান, মেয়ে ক্যাবচালক হিসাবে অনেকেই তাঁকে ভরসা করতেন না । আপনি পারবেন ? এই প্রশ্ন বহুবার তাঁকে শুনতে হয়েছে । তবে বর্তমানে তিনি গাড়ি চালানোয় বেশ পটু । মা আজও তাঁর পাশে । বোনের বিয়ে দিয়েছেন । তবে নিজে ? উত্তরে তিনি জানান, "গাড়ি চালানো আমি ছাড়তে পারব না । ওটা আমার প্রথম ভালোবাসা । কলকাতার বাইরেও আমি যাব না মাকে রেখে । যদি এমন কেউ আসে যে আমার এই পেশা মেনে নিয়ে সংসার করবে তবেই আমি রাজি ।"

লড়াইটা কিছু কম ছিল না রাজারহাটের নবনীতা সাহার ৷ মাধ্যমিকের পরেই 2003 সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে তিনি ভালোবাসার মানুষের হাত ধরেছিলেন । পরবর্তীকালে তাঁর বাবা মেনে নিলেও পরিবারের মধ্যে তৈরি হয়েছিল একটি 'কিন্তু'। মা-বোনের সঙ্গেও বেশ খানিকটা দুরত্ব তৈরি হয় তাঁর । তবে যে ভালোবাসার মানুষের জন্য সেইদিন ঘর ছেড়েছিলেন, আজ সে নবনীতার চোখে 'ভিলেন'। বর্তমানে নবনীতার জীবনজুড়ে শুধুই অবহেলার পাহাড় । শ্বশুরবাড়ির ভালোবাসা কোনওদিনই নবনীতার ভাগ্যে জোটেনি । তাই জীবনের 39 বছরে এসে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর রসদ খুঁজতে থাকেন তিনি ।

সাইকেল চালাতে না জানা মেয়েটি জীবনের কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন হয়ে সাইকেল নিয়েই যুক্ত হন খাবার ডেলিভারি সংস্থার সঙ্গে । অর্ডার এলেই সেই খাবার তিনি পৌঁছে দিতেন যথাযথ ঠিকানায় । এরপর কেনেন একটি স্কুটি । তবে এ বার খাবার নয়, স্কুটিতে একেবারে অচেনা মানুষদের নবনীতা পৌঁছে দেন তাঁদের গন্তব্যে ৷ স্কুটিটি কিনে দিয়েছেন তাঁর স্বামী । তবে তার জন্য তিনি কথা শোনাতেও ছাড়েননি । কিন্তু এত কাজ ছেড়ে কেন স্কুটি চালাতে শুরু করলেন নবনীতা ? উত্তরে একরাশ হতাশা ঝরে পড়ে নবনীতার গলায়, "এই কাজে বেরনো আছে, কিন্তু ফিরে আসার কোনও তাড়া নেই । কারণ আমার ফেরার ঠিকানায় কোনও সম্মান নেই । ফিরলেই স্বামী বলেন, মরবি কবে ?"

নবনীতার কাছেও তাঁর বাবাই ছিলেন যাবতীয় অনুপ্রেরণা ৷ 2019 সালে আচমকাই তিনি মারা যান । পর পর দুবার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি । এরপর পাশে ছিল শুধু দুই সন্তানা ৷ পরিবারের বাকি সবার চক্ষুশূল হয়ে যান নবনীতা ৷ এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে তাঁর মেয়েকেও এতটাই উস্কানি দেওয়া হয় যে, একবার মায়ের গায়েও হাত তোলে সেই একরত্তি মেয়ে ৷ তবে আজ মেয়ে বড় হয়েছে ৷ সে বোঝে তার মায়ের জীবনসংগ্রাম ৷

স্কুটি চালিয়েই সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন নবনীতা । তবুও পান থেকে চুন খসলেই চলে স্বামীর অত্যাচার । যা রোজ রাতে এখন নবনীতার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে ৷ তিনি বললেন, "আমি যখন কারওকে স্কুটিতে করে নিয়ে যাই, খুব সাবধানে চালাই । কিন্তু যখন একা থাকি, কোনও পরোয়া করি না । কারণ আমার ফেরার অপেক্ষায় কেউ থাকে না ।" তবে এত অবহেলা সহ্য করেও কেন রয়ে গিয়েছেন সেই সংসারে ? তার কারণ হিসাবে নবনীতা বললেন, "আমার সন্তান দুটো খুব ছোট । ওঁদেরকে আমি খুব ভালোবাসি ।"

আরও পড়ুন: স্বপ্ন নয়, সত্যি! সুরাতের দোকানে বিকোচ্ছে 24 ক্যারেট গোল্ড প্লেটেড আইসক্রিম

Last Updated : May 11, 2023, 6:28 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.