কলকাতা, 2 ডিসেম্বর: গুজরাতে বিজেপির (BJP) হয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বাঙালিদের মাছ খাওয়া নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ তথা অভিনেতা পরেশ রাওয়ালের (Paresh Rawal) বিরুদ্ধে । তাঁর এই বক্তব্য ঘিরে বাংলার রাজনীতিতে বাড়ছে উত্তাপ । বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) এবং অন্যতম বিরোধী দল সিপিএমের (CPIM) অভিযোগ, পরেশের বক্তব্য়ে শুধু বাঙালি বিরোধিতাই প্রকাশ পায়নি । তিনি বাঙালির খাদ্যাভ্যাস ও মাছ ভালবাসা নিয়েও অপমানজনক কথাবার্তা বলেছেন ।
যদিও ইতিমধ্যেই এই নিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন পরেশ রাওয়াল । তবুও তাঁর বিরুদ্ধে সরব রাজ্যের তৃণমূল (TMC) ও সিপিএম । শুক্রবার এই নিয়ে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, বিজেপি নেতাদের বাঙালির প্রতি প্রকৃত ভাবনা উঠে এসেছে পরেশ রাওয়ালের বক্তব্যে । তারা এমন বক্তব্যে গোটা বাঙালি সমাজকে অপমান করেছে । এর জন্য ক্ষমা চাইতে হবে বিজেপিকে ।
এদিন ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বলেন, ‘‘বিজেপি বলে ভারত মাতার জয় । কিন্তু ন্যাশনাল সং বন্দেমাতরম-এর মাধ্যমে দেশকে মা বলা প্রথম যদি কেউ শিখিয়ে থাকে, তা শিখিয়েছে বাঙালি । কারণ, এই সংগীত রচনা করেছিলেন গর্বিত বাঙালি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ।’’
কলকাতার মেয়র আরও বলেন, ‘‘বন্দেমাতরম যিনি লিখেছিলেন, তিনি মাছ খেতেন ৷ তিনি বাঙালি ছিলেন । দেশে নোবেল প্রাইজ যিনি প্রথমবার নিয়ে এসেছিলেন, তিনি একজন বাঙালি ছিলেন । দ্বিতীয়বারও যিনি নোবেল প্রাইজ নিয়ে এসেছিলেন, তিনি বাঙালি ছিলেন এবং মাছ খেতেন । ভারতের অস্তিত্ব আছে, বাঙালি আছে তাই । তাই বাঙালিকে অবজ্ঞা করো না ।’’
পরেশ রাওয়ালের এই ভাষণের কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের আইটি শাখার প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্যও । তিনি বলেন, ‘‘মোদীজি (PM Narendra Modi) গ্যাস এবং এলপিজি-র মূল্যবৃদ্ধির জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন । পরেশ রাওয়াল কি ভুলে গিয়েছেন ? গ্যাসের দাম বাড়লে তা হিন্দু-মুসলমান উভয়কেই প্রভাবিত করে । এটা লজ্জাজনক যে পরেশ যিনি 'ওহ মাই গড'-এর মতো একটা ছবি বানিয়ে বলেছেন যে তিনি ধর্মের ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন, তিনি গুজরাতে শুধু দু'টি ভোট পাওয়ার জন্য এমন কথা বলছেন ।’’
একই ভাবে এই অভিনেতার বক্তব্যের নিন্দা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্রও (Mahua Moitra) ৷ তিনি টুইট করে বলেন, ‘‘আসলে কেমছো তাঁবেদারদের ক্ষমা চাওয়ার প্রয়োজন ছিল না । আর বাঙালিদের মতো মাছ রান্না করার বিষয়টা আসলে বাঙালিদের মতো মেধা থাকা প্রয়োজন । ভারতের অন্য যে কোনও রাজ্যের তুলনায় বাংলাতেই নোবেল জয়ীর সংখ্যা সবথেকে বেশি ।’’
এদিন একই ভাবে সরব হয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাও । তিনি বলেন, ‘‘আরও একবার বিজেপির বিভাজন ঘৃণা এবং হিংসার রাজনীতি প্রকাশ্যে চলে এল । যেভাবে খ্যাতনামা চলচ্চিত্র অভিনেতা পরেশ রাওয়াল বাঙালির মাছ রান্না নিয়ে কমেন্ট করেছেন, এটা বিজেপির হতাশার বহিঃপ্রকাশ । এটা একই সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের অসহনশীলতার প্রকাশ । কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না । তাই সেই হতাশা থেকে বাঙালিদের অপমান করার চেষ্টা করছে । এর জন্য বিজেপি নেতৃত্বের ক্ষমা চাওয়া উচিত ।’’
এদিন কলকাতার তালতলা থানায় এই অভিনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Salim) । এদিন সেলিম ইমেল করে বক্তৃতার ভিডিয়ো লিঙ্ক পাঠিয়েছেন । সেলিম অভিযোগপত্রে লিখেছেন, এমন ভাষণ দেওয়া হয় হিংসায় প্ররোচনা দিতে । বাঙালিদের সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক বিষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এমন বক্তব্যে । জনসমাজে উপদ্রব ডেকে আনা হয় ।
সেলিম আরও দাবি করেন, এমনভাবে বলা হয়েছে যেন বাঙালি মানেই বিদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী । যেন অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ থাকলেই কারও বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো যায় । ঠিক এই মনোভাবই দেখা যাচ্ছে । সোশাল মিডিয়ায় এই বক্তৃতার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে । সেখানে বহু মন্তব্যে এমনই বিদ্বেষ দেখা যাচ্ছে ।
তিনি মনে করিয়েছেন যে বাঙালিরা পশ্চিমবঙ্গের সীমানার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত । তাঁরা এই বিদ্বেষের শিকার হন । এই মন্তব্যে তীব্র নিন্দাও জানানো হয়েছে সিপিএমের পক্ষে ।
আরও পড়ুন: বাঙালির মাছ খাওয়া নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ক্ষমা চাইলেন পরেশ রাওয়াল