বিগত কয়েক বছরে কালবৈশাখী ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা বেড়েছে কলকাতায় । সম্প্রতি আমফানের দাপটে তছনছ হয়ে গেছে কলকাতা শহর । পার্ক, রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে শহরের নানা প্রান্তে 15 হাজারেরও বেশি গাছ উপড়ে পড়েছে । এই পরিস্থিতিতে শহরকে আবার সাজাতে, দূষণের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু হয়েছে বৃক্ষ্মরোপণ । তবে এবার বৃক্ষ্মরোপণের পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে । বদলানো হয়েছে গাছ । আগে সাধারণত ফলের গাছ, কৃষ্ণচূড়া জাতীয় গাছ লাগানো হয় । এবার সেই জায়গায় নিম ও উইপিং দেবদারুকে বেছে নেওয়া হয়েছে ।
আমফান পরবর্তী পরিস্থিতি
আমফানের জেরে শহরের নানা প্রান্তে মোট 15 হাজার 220টি গাছ ভেঙে পড়েছে । অধিকাংশ উপড়ে গেছে । এই গাছগুলি পাঁচ থেকে ছয় ফুট জায়গা নিয়েছিল । সেই অনুযায়ী প্রায় এক লাখ ফুট জায়গা খালি হয়ে গেছে শহরজুড়ে । এর জেরে বাড়ছে কার্বনের পরিমাণ । বাড়ছে দূষণের মাত্রাও । এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন পুরোনো গাছগুলিকে পুনরায় দাঁড় করানোর জন্য রিপ্লান্টেশন করা হচ্ছে । সেই সঙ্গেই আরও বেশি সংখ্যক গাছ লাগানো হচ্ছে । তবে আমফান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার গাছের চরিত্রে বদল করা হচ্ছে ।
কেন গাছের চরিত্র বদল
পৌরনিগমের তরফে মূলত নিম ও দেবদারু গাছ লাগানো হচ্ছে । কারণ -
- উইপিং দেবদারু গাছের পাতা খুব বেশি । তাই কার্বন ধারণের জায়গাও বেশি । দূষণের মাত্রা কমবে ।
- এই গাছগুলির মূল সোজাসুজি মাটির তলায় যায় । আশপাশের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে না । তাই রাস্তার ধারে কম জায়গার মধ্যে এই গাছ লাগানো সম্ভব হয়।
- শীতকালে দূষণের মাত্রা বেশি । বাতাস ভারী হয়ে যায় । সেইসময় রাস্তার ধারে এই গাছগুলি অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। অন্যান্য গাছের মতো এই গাছগুলির গোড়া দুর্বল হয় না । উইপিং দেবদারু পুরোপুরি দৃ়ঢ় ও ঋজু হয় না । হাওয়ার সঙ্গে দু'দিকে দুলতে পারে । ফলে সহজে উপড়ে যায় না বা ভেঙে পড়ে না ।
- ভেষজ গুণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিমগাছেরও ঝড়ে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা কম । পড়লেও এই গাছের জন্য বিস্তর জায়গা জুড়ে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই ।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস থেকে শুরু হয়েছে অভিযান
কলকাতা পৌরনিগমের প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, শহরে নতুন করে 50 হাজার গাছ বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । এবার মূলত নিম ও উইপিং দেবদারু গাছ লাগানো হচ্ছে । এদের উচ্চতা 20-22 ফুট । 10 বছরের আশপাশে বয়স । ইতিমধ্যেই পার্ক সার্কাস ময়দান, লেডিস পার্ক, LM ভট্টাচার্য রোড, ফিলিপ ক্রসিং থেকে মৌলালি, হরিশ মুখার্জি রোড, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, মহানির্বাণ রোড, শরৎ বোস রোড, পণ্ডিতিয়া রোড ক্রসিং, SP মুখার্জি রোডে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে । কলকাতা পৌরনিগমের তরফে জানানো হয়েছে, 5 জুন থেকে গাছ লাগানো শুরু হয়েছে । এপর্যন্ত মোট 376টি গাছ বসানো হয়েছে ।
এবিষয়ে কলকাতা পৌর নিগমের বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, 15,000 গাছ পড়ে যাওয়া মানে কয়েক লাখ কিউবিক কার্বনের পরিশুদ্ধ করার জায়গা চলে গেল । শহরে যে কাজই হোক না অল্পবিস্তর দূষণ বাড়ছে । এই পরিস্থিতিতে বেশি করে গাছ লাগানোর চেষ্টা চলছে । মূলত কার্বনের ভারসাম্য বজায় রাখতে ও ঝড়ে উপড়ে পড়া বা ভেঙে পড়ার এই প্রবণতা কমাতে এবার নিম ও উইপিং দেবদারু গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । একই বক্তব্য কলকাতা পৌরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস কুমারের ।
এই বর্ষার মরশুমে যতটা সম্ভব বেশি সংখ্যক গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে, বলে জানাচ্ছে কলকাতা পৌরনিগমের । লক্ষ্য একটাই শহরকে আরও সুরক্ষিত, সুন্দর ও দূষণমুক্ত করে তোলা ।