কলকাতা, 28 অগাস্ট : স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর ৷ ছোটো করে বললে SOP । শুধুমাত্র পুলিশ নয়, জামাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গিদেরও SOP দেওয়া হয় । গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে জারি করা হচ্ছে তা । সম্প্রতি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে এই তথ্য ৷ কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের । দিনকয়েক আগেই গ্রেপ্তার হওয়া জামাতুলের ইজ়াজ় আহমেদের কাজকর্মের তদন্তের সূত্রে পুলিশের হাতে এসেছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের ফাইল অদৃশ্য করার জঙ্গিদের নির্দেশিকা । গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রীতিমতো SOP জারি করে ওই নির্দেশিকা মানতে বলা হয়েছে জামাতুলের মডিউলের সদস্যদের । ETV ভারতের হাতেও এসেছে সেই নির্দেশিকা ৷
কী আছে সেই নির্দেশিকায়? কীভাবে ফাইল অদৃশ্য করার শিক্ষা দেওয়া হয় জঙ্গিদের?
গোয়েন্দাদের হাতে যে SOP এসেছে তার শুরুতেই আরবিতে লেখা, “আল্লার নাম নিয়ে শুরু করছি" । পরে কয়েক লাইনের "খুতবা" । তারপর অবশ্য বাংলাতেই শেখানো হয়েছে ফাইল লুকিয়ে রাখার পদ্ধতি । এনক্রিপ্টেড একটি অ্যাপ ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এই কাজ করতে । অ্যাপটিতে ভেরাক্রিপ্ট (R), ট্রুক্রিপ্ট(R), LUKS, EncFs, cybersafe ইত্যাদি দিয়ে বানানো ফাইলগুলি সাপোর্ট করে । ফলে কম্পিউটারে বানানো গোপন ফাইল মোবাইলে বা মোবাইলে বানানো গোপন ফাইল কম্পিউটারের মাধ্যমে খোলা যাবে । এটি মাউন্টেড, নন-মাউন্টেড উভয় ভাবেই কাজ করে । ওই অ্যাপটির পেইড, নন-পেইড দুটি ভার্সনই রয়েছে।
বলা হয়েছে, গুগল প্লে স্টোর থেকে সেই অ্যাপটি ইনস্টল করে টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপলোড করার জন্য বলা হয়েছে । অ্যাপটি খুললেই দেখা যাবে লাল এবং সবুজ রঙের ফোল্ডার তৈরির অপশন । সেখানেই রয়েছে ম্যানেজ ফাইল কন্টেনারস বলে একটি অপশন । তাতে ক্লিক করলেই ফাইল গোপন করার ফোল্ডার তৈরি হবে । গোপন ফাইলটি যদি মোবাইল স্টোরেজে থাকে, তবে লোকাল ফাইল অপশনে ক্লিক করতে বলা হয়েছে । “পাথ টু দা কন্টেনার" অপশনে যে ফাইলকে অন্য ফাইল গোপন করার ফোল্ডার বানানো হবে, তা সিলেক্ট করতে বলা হয়েছে । সেখানে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনওভাবেই ওই পাসওয়ার্ড ভাঙা না যায় । গোপন ফাইলকে যদি ওপেন কোনও ফাইলের মধ্যে লুকানো হয় তবে দুটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । ফাইল তৈরিতে এমন কোনও নাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে যা দেখে সাধারণভাবে সন্দেহ না হয় । তারপর নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিতে ফাইল গোপন করার বিষয়টি শেখানো হয়েছে । (সেগুলি ETV ভারতের কাছে থাকলেও সুরক্ষার জন্য প্রকাশ করা হল না) । ছবি এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বিষয়টি । যদি কোনও মডিউল সদস্য টেকস্যাভি না হয়, সেও মানতে পারবে এই SOP ।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, পুলিশের হাতে যাতে কোনওভাবেই ধরা না পড়তে হয় সেজন্য জঙ্গিদের সব রকমের উপায় শেখানো হয় । এরপরও যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় কোনও জঙ্গি তবে সংগঠনের কার্যকলাপ সম্পর্কে গোয়েন্দারা যাতে কোনও হদিশ না পান তা নিশ্চিত করতে চায় জঙ্গি সংগঠনগুলি । পৃথিবীর প্রায় সবকটি জঙ্গি সংগঠন প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে এখন । এমন কী ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে ISIS নিয়োগ করছে ভারতীয় হ্যাকারকে । NIA আগে এই প্রমাণ পেয়েছে । গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিকেও । সেদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চায় না জামাত । আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর যেভাবে ধরপাকড় চলছে তা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছে জামাত নেতারা । পুলিশের জালে ধরাও পড়েছে একের পর এক জামাতের বড় চাঁই ৷ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে মোবাইল, ল্যাপটপ ৷ সেই সূত্রেই সংগঠনের কার্যকলাপ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে । তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু তথ্য লুকানোই নয়, গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্যও আছে নির্দিষ্ট SOP । গ্রেপ্তার হওয়ায় জঙ্গিদের জেরার সময় এনিয়ে বেশ কিছু তথ্য হাতে এলেও আরও বেশ কিছু তথ্য হাতড়াচ্ছেন গোয়েন্দারা ৷
ইজ়াজ়কে আপাতত নিজেদের হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । তার বিহারের পাঠানতলির বাড়িতে পাওয়া নানা সামগ্রী দেখে পুলিশের সন্দেহ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল জামাত ৷ যদিও এবিষয়ে এখনও ইজ়াজ়ের মুখ খোলাতে পারেননি গোয়েন্দারা ৷ গত তিন বছর ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই বলে জেরায় দাবি করেছে ইজ়াজ় ৷ কিন্তু, ইজ়াজ়ের দাবির বিপক্ষে STF-র কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷ তার থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ, ট্যাব এবং 6 টি মোবাইলের তথ্য জঙ্গিদের SOP অনুযায়ী লুকানো হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা । ইজ়াজ়কে বারবার জেরা করেও গোপন ফাইলের পাসওয়ার্ড বের করতে পারেনি STF । এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের একটি টিমের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর । পুলিশের ধারণা ওই মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের সব গোপন ফাইল এবং ফোল্ডার যদি উদ্ধার করা যায়, তবে জামাতুল ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সবটাই পাওয়া যাবে ।