ETV Bharat / state

পুলিশের ধাঁচে জঙ্গিদেরও SOP, শিক্ষা মোবাইল-ল্যাপটপের ফাইল অদৃশ্য করার !

পুলিশের মতো জঙ্গিরাও ব্যবহার করছে SOP ৷ ফলে অদৃশ্য করা যাচ্ছে মোবাইল-ল্যাপটপের ফাইল ৷ এমনই তথ্য জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা ৷

ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Aug 28, 2019, 5:17 PM IST

Updated : Aug 28, 2019, 8:23 PM IST

কলকাতা, 28 অগাস্ট : স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর ৷ ছোটো করে বললে SOP । শুধুমাত্র পুলিশ নয়, জামাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গিদেরও SOP দেওয়া হয় । গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে জারি করা হচ্ছে তা । সম্প্রতি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে এই তথ্য ৷ কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের । দিনকয়েক আগেই গ্রেপ্তার হওয়া জামাতুলের ইজ়াজ় আহমেদের কাজকর্মের তদন্তের সূত্রে পুলিশের হাতে এসেছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের ফাইল অদৃশ্য করার জঙ্গিদের নির্দেশিকা । গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রীতিমতো SOP জারি করে ওই নির্দেশিকা মানতে বলা হয়েছে জামাতুলের মডিউলের সদস্যদের । ETV ভারতের হাতেও এসেছে সেই নির্দেশিকা ৷

কী আছে সেই নির্দেশিকায়? কীভাবে ফাইল অদৃশ্য করার শিক্ষা দেওয়া হয় জঙ্গিদের?

গোয়েন্দাদের হাতে যে SOP এসেছে তার শুরুতেই আরবিতে লেখা, “আল্লার নাম নিয়ে শুরু করছি" । পরে কয়েক লাইনের "খুতবা" । তারপর অবশ্য বাংলাতেই শেখানো হয়েছে ফাইল লুকিয়ে রাখার পদ্ধতি । এনক্রিপ্টেড একটি অ্যাপ ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এই কাজ করতে । অ্যাপটিতে ভেরাক্রিপ্ট (R), ট্রুক্রিপ্ট(R), LUKS, EncFs, cybersafe ইত্যাদি দিয়ে বানানো ফাইলগুলি সাপোর্ট করে । ফলে কম্পিউটারে বানানো গোপন ফাইল মোবাইলে বা মোবাইলে বানানো গোপন ফাইল কম্পিউটারের মাধ্যমে খোলা যাবে । এটি মাউন্টেড, নন-মাউন্টেড উভয় ভাবেই কাজ করে । ওই অ্যাপটির পেইড, নন-পেইড দুটি ভার্সনই রয়েছে।

Terrorist
কী আদতে অ্যাপ, তাও বলা হয়েছে

বলা হয়েছে, গুগল প্লে স্টোর থেকে সেই অ্যাপটি ইনস্টল করে টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপলোড করার জন্য বলা হয়েছে । অ্যাপটি খুললেই দেখা যাবে লাল এবং সবুজ রঙের ফোল্ডার তৈরির অপশন । সেখানেই রয়েছে ম্যানেজ ফাইল কন্টেনারস বলে একটি অপশন । তাতে ক্লিক করলেই ফাইল গোপন করার ফোল্ডার তৈরি হবে । গোপন ফাইলটি যদি মোবাইল স্টোরেজে থাকে, তবে লোকাল ফাইল অপশনে ক্লিক করতে বলা হয়েছে । “পাথ টু দা কন্টেনার" অপশনে যে ফাইলকে অন্য ফাইল গোপন করার ফোল্ডার বানানো হবে, তা সিলেক্ট করতে বলা হয়েছে । সেখানে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনওভাবেই ওই পাসওয়ার্ড ভাঙা না যায় । গোপন ফাইলকে যদি ওপেন কোনও ফাইলের মধ্যে লুকানো হয় তবে দুটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । ফাইল তৈরিতে এমন কোনও নাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে যা দেখে সাধারণভাবে সন্দেহ না হয় । তারপর নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিতে ফাইল গোপন করার বিষয়টি শেখানো হয়েছে । (সেগুলি ETV ভারতের কাছে থাকলেও সুরক্ষার জন্য প্রকাশ করা হল না) । ছবি এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বিষয়টি । যদি কোনও মডিউল সদস্য টেকস্যাভি না হয়, সেও মানতে পারবে এই SOP ।

Terrorist
সেটিংয়ে কী করতে হবে, তাও দেখানো হয়েছে

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, পুলিশের হাতে যাতে কোনওভাবেই ধরা না পড়তে হয় সেজন্য জঙ্গিদের সব রকমের উপায় শেখানো হয় । এরপরও যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় কোনও জঙ্গি তবে সংগঠনের কার্যকলাপ সম্পর্কে গোয়েন্দারা যাতে কোনও হদিশ না পান তা নিশ্চিত করতে চায় জঙ্গি সংগঠনগুলি । পৃথিবীর প্রায় সবকটি জঙ্গি সংগঠন প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে এখন । এমন কী ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে ISIS নিয়োগ করছে ভারতীয় হ্যাকারকে । NIA আগে এই প্রমাণ পেয়েছে । গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিকেও । সেদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চায় না জামাত । আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর যেভাবে ধরপাকড় চলছে তা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছে জামাত নেতারা । পুলিশের জালে ধরাও পড়েছে একের পর এক জামাতের বড় চাঁই ৷ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে মোবাইল, ল্যাপটপ ৷ সেই সূত্রেই সংগঠনের কার্যকলাপ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে । তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু তথ্য লুকানোই নয়, গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্যও আছে নির্দিষ্ট SOP । গ্রেপ্তার হওয়ায় জঙ্গিদের জেরার সময় এনিয়ে বেশ কিছু তথ্য হাতে এলেও আরও বেশ কিছু তথ্য হাতড়াচ্ছেন গোয়েন্দারা ৷

Terrorist
কীভাবে ফাইল লুকাতে হবে তা সবিস্তারে বলা আছে

ইজ়াজ়কে আপাতত নিজেদের হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । তার বিহারের পাঠানতলির বাড়িতে পাওয়া নানা সামগ্রী দেখে পুলিশের সন্দেহ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল জামাত ৷ যদিও এবিষয়ে এখনও ইজ়াজ়ের মুখ খোলাতে পারেননি গোয়েন্দারা ৷ গত তিন বছর ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই বলে জেরায় দাবি করেছে ইজ়াজ় ৷ কিন্তু, ইজ়াজ়ের দাবির বিপক্ষে STF-র কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷ তার থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ, ট্যাব এবং 6 টি মোবাইলের তথ্য জঙ্গিদের SOP অনুযায়ী লুকানো হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা । ইজ়াজ়কে বারবার জেরা করেও গোপন ফাইলের পাসওয়ার্ড বের করতে পারেনি STF । এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের একটি টিমের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর । পুলিশের ধারণা ওই মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের সব গোপন ফাইল এবং ফোল্ডার যদি উদ্ধার করা যায়, তবে জামাতুল ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সবটাই পাওয়া যাবে ।

Terrorist
এই সেই অ্যাপটি

কলকাতা, 28 অগাস্ট : স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর ৷ ছোটো করে বললে SOP । শুধুমাত্র পুলিশ নয়, জামাত-উল-মুজাহিদিন জঙ্গিদেরও SOP দেওয়া হয় । গোয়েন্দাদের নজর এড়াতে জারি করা হচ্ছে তা । সম্প্রতি গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে এই তথ্য ৷ কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের । দিনকয়েক আগেই গ্রেপ্তার হওয়া জামাতুলের ইজ়াজ় আহমেদের কাজকর্মের তদন্তের সূত্রে পুলিশের হাতে এসেছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারের ফাইল অদৃশ্য করার জঙ্গিদের নির্দেশিকা । গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রীতিমতো SOP জারি করে ওই নির্দেশিকা মানতে বলা হয়েছে জামাতুলের মডিউলের সদস্যদের । ETV ভারতের হাতেও এসেছে সেই নির্দেশিকা ৷

কী আছে সেই নির্দেশিকায়? কীভাবে ফাইল অদৃশ্য করার শিক্ষা দেওয়া হয় জঙ্গিদের?

গোয়েন্দাদের হাতে যে SOP এসেছে তার শুরুতেই আরবিতে লেখা, “আল্লার নাম নিয়ে শুরু করছি" । পরে কয়েক লাইনের "খুতবা" । তারপর অবশ্য বাংলাতেই শেখানো হয়েছে ফাইল লুকিয়ে রাখার পদ্ধতি । এনক্রিপ্টেড একটি অ্যাপ ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এই কাজ করতে । অ্যাপটিতে ভেরাক্রিপ্ট (R), ট্রুক্রিপ্ট(R), LUKS, EncFs, cybersafe ইত্যাদি দিয়ে বানানো ফাইলগুলি সাপোর্ট করে । ফলে কম্পিউটারে বানানো গোপন ফাইল মোবাইলে বা মোবাইলে বানানো গোপন ফাইল কম্পিউটারের মাধ্যমে খোলা যাবে । এটি মাউন্টেড, নন-মাউন্টেড উভয় ভাবেই কাজ করে । ওই অ্যাপটির পেইড, নন-পেইড দুটি ভার্সনই রয়েছে।

Terrorist
কী আদতে অ্যাপ, তাও বলা হয়েছে

বলা হয়েছে, গুগল প্লে স্টোর থেকে সেই অ্যাপটি ইনস্টল করে টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপলোড করার জন্য বলা হয়েছে । অ্যাপটি খুললেই দেখা যাবে লাল এবং সবুজ রঙের ফোল্ডার তৈরির অপশন । সেখানেই রয়েছে ম্যানেজ ফাইল কন্টেনারস বলে একটি অপশন । তাতে ক্লিক করলেই ফাইল গোপন করার ফোল্ডার তৈরি হবে । গোপন ফাইলটি যদি মোবাইল স্টোরেজে থাকে, তবে লোকাল ফাইল অপশনে ক্লিক করতে বলা হয়েছে । “পাথ টু দা কন্টেনার" অপশনে যে ফাইলকে অন্য ফাইল গোপন করার ফোল্ডার বানানো হবে, তা সিলেক্ট করতে বলা হয়েছে । সেখানে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনওভাবেই ওই পাসওয়ার্ড ভাঙা না যায় । গোপন ফাইলকে যদি ওপেন কোনও ফাইলের মধ্যে লুকানো হয় তবে দুটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে । ফাইল তৈরিতে এমন কোনও নাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে যা দেখে সাধারণভাবে সন্দেহ না হয় । তারপর নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিতে ফাইল গোপন করার বিষয়টি শেখানো হয়েছে । (সেগুলি ETV ভারতের কাছে থাকলেও সুরক্ষার জন্য প্রকাশ করা হল না) । ছবি এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বিষয়টি । যদি কোনও মডিউল সদস্য টেকস্যাভি না হয়, সেও মানতে পারবে এই SOP ।

Terrorist
সেটিংয়ে কী করতে হবে, তাও দেখানো হয়েছে

গোয়েন্দাদের বক্তব্য, পুলিশের হাতে যাতে কোনওভাবেই ধরা না পড়তে হয় সেজন্য জঙ্গিদের সব রকমের উপায় শেখানো হয় । এরপরও যদি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় কোনও জঙ্গি তবে সংগঠনের কার্যকলাপ সম্পর্কে গোয়েন্দারা যাতে কোনও হদিশ না পান তা নিশ্চিত করতে চায় জঙ্গি সংগঠনগুলি । পৃথিবীর প্রায় সবকটি জঙ্গি সংগঠন প্রযুক্তিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে এখন । এমন কী ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে ISIS নিয়োগ করছে ভারতীয় হ্যাকারকে । NIA আগে এই প্রমাণ পেয়েছে । গ্রেপ্তার করা হয়েছে জঙ্গিকেও । সেদিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চায় না জামাত । আর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর যেভাবে ধরপাকড় চলছে তা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছে জামাত নেতারা । পুলিশের জালে ধরাও পড়েছে একের পর এক জামাতের বড় চাঁই ৷ গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে মোবাইল, ল্যাপটপ ৷ সেই সূত্রেই সংগঠনের কার্যকলাপ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে । তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু তথ্য লুকানোই নয়, গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্যও আছে নির্দিষ্ট SOP । গ্রেপ্তার হওয়ায় জঙ্গিদের জেরার সময় এনিয়ে বেশ কিছু তথ্য হাতে এলেও আরও বেশ কিছু তথ্য হাতড়াচ্ছেন গোয়েন্দারা ৷

Terrorist
কীভাবে ফাইল লুকাতে হবে তা সবিস্তারে বলা আছে

ইজ়াজ়কে আপাতত নিজেদের হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স । তার বিহারের পাঠানতলির বাড়িতে পাওয়া নানা সামগ্রী দেখে পুলিশের সন্দেহ, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করেছিল জামাত ৷ যদিও এবিষয়ে এখনও ইজ়াজ়ের মুখ খোলাতে পারেননি গোয়েন্দারা ৷ গত তিন বছর ধরে জঙ্গিদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই বলে জেরায় দাবি করেছে ইজ়াজ় ৷ কিন্তু, ইজ়াজ়ের দাবির বিপক্ষে STF-র কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷ তার থেকে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ, ট্যাব এবং 6 টি মোবাইলের তথ্য জঙ্গিদের SOP অনুযায়ী লুকানো হয়েছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা । ইজ়াজ়কে বারবার জেরা করেও গোপন ফাইলের পাসওয়ার্ড বের করতে পারেনি STF । এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের একটি টিমের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর । পুলিশের ধারণা ওই মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের সব গোপন ফাইল এবং ফোল্ডার যদি উদ্ধার করা যায়, তবে জামাতুল ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সবটাই পাওয়া যাবে ।

Terrorist
এই সেই অ্যাপটি
Intro:কলকাতা, ২৮ অগাস্ট: স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর বা ছোট করে বললে SOP। শুধুমাত্র পুলিশ নয়, জামাত-উল-মুজাহিদীন জঙ্গিদেরও SOP দেওয়া হয়। গোয়েন্দাদের হাত থেকে সংগঠনকে বাঁচাতেই জারি করা হয় ওই SOP। সম্প্রতি গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন সেই তথ্য। আর তা দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে গোয়েন্দাদের। জামাতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়ার আমের ইজাজ আহমেদের কাজকর্মের তদন্ত সূত্রে পুলিশের হাতে এসেছে মোবাইল ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের ফাইল অদৃশ্য করার জন্য জঙ্গিদের গাইডলাইন। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রীতিমতো SOP জারি করে ওই গাইডলাইন মানতে বলা হয়েছে JMI এর মডিউল সদস্যদের। ইটিভি ভারতের হাতেও এসেছে সেই গাইডলাইন। Body:
কী আছে সেই গাইডলাইনে? কিভাবে ফাইল অদৃশ্য করার শিক্ষা দেওয়া হয় জঙ্গিদের?

গোয়েন্দাদের হাতে যে SOP এসেছে তার শুরুতেই বড় বড় হরফে আরবিতে লেখা, “আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি"। পরে কয়েক লাইনের “খুতবা"। তারপর অবশ্য বাংলাতেই শেখানো হয়েছে ফাইল লুকিয়ে ফেলার পদ্ধতি। এনক্রিপ্টেড একটি অ্যাপ ব্যবহারের জন্য বলা হয়েছে এই কাজ করতে। এই অ্যাপে ভেরাক্রিপ্ট(R), ট্রুক্রিপ্ট(R), LUKS, EncFs, cybersafe ইত্যাদি দিয়ে বানানো ফাইলগুলো সাপোর্ট করে। যার ফলে কম্পিউটারে বানানো গোপন ফাইল মোবাইলে বা মোবাইলে বানানো গোপন ফাইল কম্পিউটারের মাধ্যমে খোলা যাবে। এটি মাউন্টেড, নন-মাউন্টেড উভয় ভাবেই কাজ করে। ওই অ্যাপটির পেড, ননপেড দুটি ভার্সনই রয়েছে। বলা হয়েছে, গুগল প্লে স্টোর থেকে সেই অ্যাপটি ইন্সটল করে টেলিগ্রাম চ্যানেলে আপলোড করার জন্য বলা হয়েছে। অ্যাপ্লিকেশনটি খুললেই দেখা যাবে লাল রঙের ফোল্ডার তৈরীর জন্য অপশন এবং সবুজ রঙের ফাইল তৈরীর অপশন। ওই আপনিতেই রয়েছে ম্যানেজ ফাইল কন্টেনারস বলে একটি অপশন। সেখানে ক্লিক করলেই ফাইল গোপন করার বক্স তৈরি হবে। গোপন ফাইলটি যদি মোবাইল স্টোরেজে থাকে, তবে লোকাল ফাইল অপশনে ক্লিক করতে বলা হয়েছে। “পাথ টু দ্যা কন্টেইনার" অপশনে যে ফাইলকে অন্যান্য ফাইল গোপন করার স্থান বানানো হবে, তা সিলেক্ট করতে বলা হয়েছে। সেখানে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে কোনোভাবেই ওই পাসওয়ার্ড ভাঙা না যায়। গোপন ফাইলকে যদি ওপেন কোন ফাইলের মধ্যে লোকানো হয় তবে দুটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ফাইল তৈরিতে এমন কোন নাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে যা দেখে সাধারণভাবে কোনো সন্দেহ না হয়। তারপর নির্দিষ্ট কিছু পদ্ধতিতে ফাইল গোপন করার বিষয়টি শেখানো হয়েছে। ( সুরক্ষার জন্য সেগুলি ইটিভি ভারতের হাতে থাকলেও প্রকাশ করা হলো না)। রীতিমতো ছবি এঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো বিষয়টি। যাতে কোন মডিউল সদস্য যদি টেকস্যাভি নাও হন, তিনিও মানতে পারেন এই SOP। Conclusion:গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আসলে জেহাদের পথে মন্ত্রগুপ্তির শপথ নেওয়ার সময় গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সব রকমের প্রচেষ্টা করতে শেখানো হয়। তার পরেও যদি পুলিশ বা গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়ে যায় কোন জঙ্গি তবে সংগঠনের কোনো কার্যকলাপ সম্পর্কে গোয়েন্দারা যাতে কোনো হদিস না পায় তা নিশ্চিত করতে চায় জঙ্গি সংগঠনগুলি। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পৃথিবীর প্রায় সবকটি জঙ্গি সংগঠন টেকনোলজিকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে এখন। এমনকি ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে ISIS নিয়োগ করছে ভারতীয় হ্যাকার। NIA আগে এমন প্রমাণ পেয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন জঙ্গিকে। এই দিক থেকে পিছিয়ে থাকতে চায় না জামাত-উল-মুজাহিদীন। পাশাপাশি খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর যেভাবে ধরপাকড় চলছে তা নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছে জামাত নেতারা। সেই সূত্রেই সংগঠনের কার্যকলাপ লোকানোর চেষ্টা চলছে প্রবলভাবে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু তথ্য লুকানোই নয়, গোয়েন্দাদের হাত থেকে বাঁচার জন্যও আছে নির্দিষ্ট SOP। সেটির কিছু তথ্য বিভিন্ন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদে উঠলেও, পুরোটা এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে সেটি পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে গোয়েন্দারা।

ইজাজকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। তার বিহারের পাঠানতলির বাড়িতে পাওয়া নানা সামগ্রী দেখে পুলিশের সন্দেহ, দেশে সিরিয়াল ব্লাস্টের প্ল্যান করছিল জামাতুল মুজাহিদীন। কিন্তু এই বিষয়ে কোনো তথ্যই এখনো পর্যন্ত ইজাজের মুখ থেকে বের করা যায়নি। সে বারবারই গোয়েন্দাদের ধোঁকা দিতে বলছে, বছর তিনেক হল জঙ্গিদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সেটা যে ঠিক নয় তার প্রমান স্পেশাল টাস্ক ফোর্স এর কাছে আছে। সূত্রের খবর এমনটাই। তার কাছে উদ্ধার হওয়া ল্যাপটপ, ট্যাব এবং ছটি মোবাইলের তথ্য জঙ্গিদের SOP অনুযায়ী লুকানো হয়েছে বলে মনে করছে গোয়েন্দারা। ইজাজকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেও গোপন ফাইলের পাসওয়ার্ড ব্রেক করতে পারেনি STF। এব্যাপারে কলকাতা পুলিশের সায়েন্টিফিক টিমের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে খবর। পুলিশের ধারণা ওই মোবাইল, ল্যাপটপ এবং ট্যাবের সব গোপন ফাইল এবং ফোল্ডার যদি উদ্ধার করা যায়, তবে জামাতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সবটাই পাওয়া যাবে।
Last Updated : Aug 28, 2019, 8:23 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.