কলকাতা, 17 জুন: বিজেপির সঙ্গে আঁতাতের প্রমাণ আগেই সামনে এনেছিল তৃণমূল। এবার বিজেপির বিরুদ্ধে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলল তৃণমূল। এখানেই শেষ নয়, পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটলে এই বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথাও বলছে তারা।
প্রসঙ্গত, শনিবার কালীঘাটে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে নির্বাচন কৌশল ঠিক করতে বসেছিল রাজ্যের শাসক দল। এই বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে নওশাদ সিদ্দিকী এবং কৈলাস বিজয় বর্গীয়ের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের ছবি প্রকাশ্যে এনে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ দাবি করেন, রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটতেই আইএসএফের সঙ্গে আঁতাত বিজেপির। তিনি বলেন, "নির্বাচন মিটলেই এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাব আমরা।" উল্লেখ্য, শনিবার সকাল থেকেই রাজ্য-রাজনীতি উত্তাল। এদিন বিজেপি নেতার কৈলাস বিজয় বর্গীয় এবং ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রকাশ করে সোশাল মিডিয়ায় হৈ-চৈ ফেলে দিয়েছে তৃণমূল।
এই সাংবাদিক সম্মেলন থেকে প্রকাশ করা হয় ভাঙড়ের বিধায়কের দাদা আব্বাস সিদ্দিকীর ভিডিয়ো বক্তব্যের অংশ বিশেষ। সেখানে তিনি বলছেন, "আমরা যারা বিজেপিকে পছন্দ করি তারা তৃণমূলকে ভোট দিয়ে কী করব?" এবার সকালে প্রকাশিত হোয়াটসঅ্যাপ আর বিকেলের ভিডিয়োকে সামনে রেখে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের দাবি, 2021-এর বিধানসভা ভোটের সময় হওয়া ওই হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করে ভাঙড় থানার আইসি এবং সেকেন্ড অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও নিত্যানন্দ রাইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন নওশাদ। আর এই ঘটনা নিয়েই নির্বাচন নিতে গেলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের সোশাল মিডিয়াসেল-এর নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের একটি টুইটকে সামনে এনে বলেন, "এই চ্যাট থেকে প্রমাণিত যে বিজেপি নেতারা রাজ্যের 2021-এর বিধানসভা ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করেছিল। এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?" এদিন সেই প্রসঙ্গকে সামনে এনেই কুণাল ঘোষ বলেন, "বিজেপির হাতে পুতুল হয়ে কিছু মানুষকে ভুল বোঝানোর জন্য এই আইএসএফ দলটি গঠিত হয়েছে। এবং ব্যবহৃত হচ্ছে। বিজেপির সঙ্গে আইএসএফ এবং আইএসএফের মাধ্যমে সিপিএমের এই অন্ধ বিরোধী সুবিধাবাদী জোট হয়েছে। নওশাদ সিদ্দিকীর যে স্ক্রিনশট দুটি দেখা যাচ্ছে তাতে পরিষ্কার কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাইয়ের সচিবকে চিঠি পাঠাচ্ছেন। এটা কোনও সৌজন্য নয়, ইলেকশন অরিয়েন্টেড আনহলি নেক্সাস। এই এই অফিসারকে বদলি করে দিন এটা বলতে পরিষ্কার ভাবে দেখা যাচ্ছে। এই স্ক্রিনশট যদি সত্যি হয় আইএসএফকে সামনে রেখে নওশাদ সিদ্দিকী আরও কয়েকজন বিজেপির হাতে তামাক খাচ্ছেন। ভোট কাটার খেলা খেলছেন। কিছু মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছেন।"
আরও পড়ুন: রাজ্য সভাপতির পদ ছাড়ার ইচ্ছেপ্রকাশ সুব্রত বক্সির, প্রত্যাখ্যান মমতার
অবিলম্বে এই স্ক্রিনশট সত্যি কি না, তা ব্যাখ্যা করার দাবি জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। এদিন তিনি আরও বলেন, "এই স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে আনার জন্য আমার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করতে পারেন। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্ব মিটলে তৃণমূল কংগ্রেস এই নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকারে থাকার সুবিধা নিয়ে বিজেপি কিভাবে ইলেকশন কমিশনের উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল। তার প্রমাণ হচ্ছে পুলিশ অফিসারদের বদলির সুপারিশ বিজয় বর্গীয় এর কাছে যাচ্ছে নওশাদ সিদ্দিকীর মাধ্যমে। তারমানে আইএসএফকে প্রমোট করার জন্য বিজেপি নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করেছিল।"