কলকাতা, 12 জুলাই: ত্রিস্তরের মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে কিছুটা দাঁত ফোটাতে পারলেও, বিরোধীদের অধরাই থেকে গেল জেলা পরিষদ । রাজ্যের 22টি জেলায় 928টি জেলা পরিষদ আসনের প্রায় সবটাই নিজেদের দখলে রাখল তৃণমূল । বিক্ষিপ্ত কিছু আসন ছাড়া তেমন আর কিছুই করতে পারেনি বিরোধীরা ।
রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত, রাজ্যের 22টি জেলার 928টি জেলা পরিষদের আসনে 685টি আসনেই জিতেছে তৃণমূল । এগিয়ে রয়েছে আরও 144টি আসনে । আর 21টি আসনে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা । দু'টি সিপিএম এবং ছয়টি আসনে জিতেছে কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থীরা । জেলা পরিষদ আসনের ফলপ্রকাশ হতে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ঘাসফুল শিবির । তুলনায় অনেকটাই ম্রিয়মান বিরোধীরা । তবে এক্ষেত্রেও অবশ্য রাজ্যের শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের দ্বারা সন্ত্রাস এবং হানাহানিকেই দায়ী করেছে বিরোধীরা ।
পঞ্চায়েত ভোটের দিনও রক্ত ঝড়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে । হিংসা, হানাহানি, অশান্তিতে ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল ভোটকর্মী থেকে আম ভোটার সকলেই । এমনকী আক্রান্ত হয়েছেন খোদ পুলিশ কর্মীরাও । একই সঙ্গে, ব্যালটে কারচুপি, ব্যালট বাক্স ভাঙচুড়, রাস্তায় ব্যালট পেপার গড়াগড়ি খাওয়ার ছবিও ঘুরে বেরিয়েছে দিনভর । খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বীকার করে নিয়েছিল ভোট হিংসার বলি হয়েছেন 10 জন। সেই অশান্তি অব্যাহত থেকেছে ভোট গণনার দিনও। গণনার দিনও বিরোধীরা সরাসরি প্রশাসনিক আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ব্যালট কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। এত কিছুর পরও অবশ্য দেখা গেল, জেলা পরিষদ এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে কার্যত একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস । রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্যের একটিও জেলা পরিষদ দখল করতে পার না কোনও বিরোধী দলই ।
জেলা পরিষদের সবচেয়ে বেশি আসন দক্ষিণ 24 পরগনা । আসন সংখ্য়া 85 । কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে 74টি আসনেই জিতেছে তৃণমূল । বিরোধী বাম-বিজেপি-কংগ্রেস কোনও দলই এই জেলায় খাতা খুলতে পারেনি । এরপরই তালিকায় রয়েছে মুর্শিদাবাদ । এখানে 78টি জেলা পরিষদ আসনে 66টি আসনই দখল করেছে তৃণমূল । চারটি আসন পেয়েছে কংগ্রেস । এরপরই পূর্ব মেদিনীপুর । এখানে জেলা পরিষদের আসন সংখ্য়া 70 । এখানেও 55টি আসনই দখল করেছে তৃণমূল । তবে অধিকারী গড় হিসাবে পরিচিত এই জেলায় এঅবশ্য আটটি আসন পেয়েছে বিজেপি । আসন সংখ্যার দিক থেকে তালিকায় রয়েছে উত্তর 24 পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমান । দুই জেলাতেই 66টি আসন । যার মধ্যে কমিশনের তথ্য বলছে, দুই জেলার সবকটি আসনেই জিতছে তৃণমূল । অন্যান্য জেলাতেও যে আসন জেতার পরিসংখ্য়ানে খুব একটা হেরফের হয়েছে তা একেবারেই নয় ।
আরও পড়ুন: ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে এবার বেড়েছে বিরোধীদের উপস্থিতি, ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বাম-কংগ্রেসের
এদিনও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, ভোটে কারচুপি এবং চরম অশান্তি করে ভোট লুঠ করেছে রাজ্যের শাসকদল । মানুষের রায় এই ভোটে প্রতিফলিত হয়নি বলেও দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা । অন্যদিকে, পালটা বিরোধীদের কটাক্ষ করেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ । তিনি টুইটে লেখেন, "বিরোধী দলগুলির সমর্থক সরকারি কর্মচারীদের একাংশ সংগঠিতভাবে অন্তর্ঘাত করেছে।" তিনি অভিযোগ করে জানান, তৃণমূলের সমর্থন যেখানে ব্যাপক সেই এলাকায় ব্যালটে সই বা স্ট্যাম্প না দিয়ে ভোট বাতিল করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বাড়তি ব্যালট বাইরে ফেলেও বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে । এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তিনি।