কলকাতা, 10 জুলাই: ইতিমধ্যেই রাজ্যসভার 7 আসনে ভোট ঘোষণা হয়েছে রাজ্যে । রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আজই ছয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে । যেহেতু রাজ্যসভার ভোটে জয় নির্ভর করে বিধায়ক সংখ্যার উপর, তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের আলোচনায় পার্থ-সহ তিন জেলবন্দি বিধায়কের ভোট ।
এই নির্বাচনে আদৌ কি তাঁরা যোগদান করতে পারবেন ? এই মামলায় চূড়ান্ত সাজা ঘোষণা হয়নি । এখনও দোষী সাব্যস্ত হননি তিন বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য এবং জীবনকৃষ্ণ সাহা । কাজেই জেল থেকে প্যারলে মুক্তি পেয়ে তাঁরা কি রাজ্যসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন ! সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পরিষদীয় দলের তরফ থেকে আইনি সবদিক খতিয়ে দেখা হয়েছে । তবে তারা পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ এই তিন জেলবন্দি বিধায়ককে শাসকদলের তরফে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন না বলেই খবর ।
এ দিন এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রাজ্যের এক মন্ত্রী বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে আলাদা করে জেলবন্দি এই বিধায়কদের ভোট দিতে আসার বিষয়ে আবেদন জানানো হচ্ছে না । যদি রাজ্যসভার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়ে তাঁরা তাঁদের মতো করে আদালতে বা তদন্তকারী সংস্থার কাছে আবেদন করেন, তা নিয়ে তাঁদের কিছু বলার নেই ।
মন্ত্রীর কথায়, ইতিমধ্যেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে ৷ ফলে নতুন করে তাঁকে ভোট দিতে আসার জন্য বলার কোনও প্রশ্নই নেই ।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা পার্থ-মানিক-জীবনকৃষ্ণদের নিয়ে এ কথা বললেও আইন বলছে, এই মুহূর্তে জেলবন্দি অবস্থায় কোনওভাবেই ভোটদানে অংশগ্রহণ করতে পারেন না কোনও বিধায়ক । সংবিধানের 65 নম্বর ধারার পাঁচ উপধারায় স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, একমাত্র প্রতিরোধমূলক গ্রেফতারি ছাড়া কোনও জেলবন্দি ব্যক্তি কোনও ভোটদানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না । তা তিনি পুলিশ হেফাজতেই থাকুন বা জেল হেফাজতে । উভয় ক্ষেত্রেই পরিনাণ এক ।
আরও পড়ুন: সংবিধান রক্ষায় লড়াই চলবে, রাজ্যসভায় প্রার্থী হয়ে প্রতিক্রিয়া রসায়নের অধ্যাপক সামিরুলের
অতএব যদি পার্থ চট্টোপাধ্যায়দের ভোটদানের অনুমতি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে সেই ভোট বৈধ হিসাবে বিবেচিত হবে না । অতীতে মুম্বইয়ের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টে দুই বিধায়কের তরফ থেকে আবেদন করা হয়েছিল । সে ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালত তাদের ভোটদানের অনুমতি দেয়নি । এ ক্ষেত্রে তৃণমূল বিধায়কদের ক্ষেত্রেও তাই হতে পারে ।
এ দিন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ জেলবন্দি বিধায়কদের বিষয়ে এই তথ্য হাতে পাওয়ার পরই তাঁদের ভোট নিয়ে আর এগোতে চাইছে না দল । বরং শাসকদলের তরফ থেকে এমনটাও বলা হচ্ছে যে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বাদ দিলেও তৃণমূল কংগ্রেসের পাঁচ সাংসদকে জিতিয়ে নিয়ে আসার মতো পর্যাপ্ত বিধায়ক সংখ্যা তাদের রয়েছে । অতএব এই নিয়ে বিশেষ চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই । যদিও এ কথা বলার পরেও তৃণমূল কংগ্রেসের চোখ বিজেপি-র প্রার্থী তালিকার দিকে । যদি এ ক্ষেত্রে বিজেপি দুজন প্রার্থী দেয়, সে ক্ষেত্রে ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আর যদি তা না দেয়, তাহলে ভোটাভুটি ছাড়াই 6 প্রার্থী অনায়াস জয় পাবে । সে ক্ষেত্রে কে সংশোধনাগারে রইলেন, কে বাইরে, তা কোনও প্রভাব ফেলবে না ।
প্রসঙ্গত, আগামী 24 জুলাই রাজ্যসভার নির্বাচন রয়েছে । যেহেতু 6 সাংসদের জন্য নির্বাচন, তাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সাংসদ পিছু জয়ের জন্য প্রয়োজন 41-এর কিছু বেশি ভোট ।