কলকাতা, 12 মে: 2014 সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে 2016 সালে নিয়োগ পাওয়া 36 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ শুক্রবার এই নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ রাজ্য তো বটেই গোটা দেশেও নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগে একলপ্তে এতজনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ নজিরবিহীন ৷ তবে এদিন হাইকোর্টের এই নির্দেশ নিয়ে প্রাথমিকভাবে সাবধানী প্রতিক্রিয়াই দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ৷
দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এদিন বলেন,"এটা সম্পূর্ণভাবে একটি প্রশাসনিক বিষয়ের উপর দাঁড়িয়ে আইনি সিদ্ধান্ত । এবং এটা সম্পূর্ণভাবে আদালতের সিদ্ধান্ত অর্থাৎ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দফতর এবং তার আইনজীবীরা নির্দিষ্টভাবে এই নিয়ে যতক্ষণ না প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, ততক্ষণ এই নিয়ে দলের তরফ থেকে আমরা কিছু বলব না ।" তিনি আরও বলেন, "আমরা সবসময় বলে বার আসছি ন্যায়বিচার হোক । যারা যোগ্য তারা চাকরি করুক । কিন্তু আমাদের দেখে নিতে হবে অকারণে যেন কেউ বলি না হয় ।"
উল্লেখ্য, শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিকে 36 হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছেন । 2014 সালের টেট পরীক্ষার ভিত্তিতে 42 হাজার 942 জনের নিয়োগ হয়েছিল ৷ কিন্তু সেই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে ৷ জনৈকা প্রিয়ঙ্কা নস্কর-সহ মোট 140 জন ওই নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টে ৷ সেই মামলার শুনানিতেই শুক্রবার 36 হাজার শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল হয়েছে ৷
একই সঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এদিন নির্দেশ দিয়েছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নতুন করে ইন্টারভিউ নিতে হবে৷ যাঁরা এই মুহূর্তে এই 36 হাজার পদে নিযুক্ত রয়েছেন তারা আগামী চার মাস চাকরিতে নিযুক্ত থাকবেন । তবে তারা পুরনো হারে আর বেতন পাবেন না,পার্শ্ব শিক্ষকের হারে বেতন মিলবে তাঁদের । এই রায় প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ এদিন জানান, এই দলের দলের কোনও প্রতিক্রিয়া জানানোর অবকাশ নেই ।
আরও পড়ুন: 36 হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের
এদিন অন্য একটি মামলায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেন । তিনি জানান, নিজেরাই যদি নিজেদের সম্মান নষ্ট করেন, তবে কোর্ট কী করবে ! আদালতকে অসম্মান করতে গিয়ে কেউ কেউ নিজেদের অসম্মান করছেন । সেটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না বা বুঝেও উদ্দেশ্য নিয়ে সেটাই করে চলেছেন । সবাইকে আলাদা আলাদাভাবে বিধি শেখানো তো আর কোর্টর পক্ষে সম্মব না ।
বিচারপতির এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কুনাল ঘোষ শুক্রবার বলেন,"আমাদের বিচার ব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে ৷ বিচারব্যবস্থাকে এবং বিচারপতিকে আমি পূর্ণ সম্মান করি । কিন্তু একজন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস যিনি রোজ দিন টিভিতে বসে সরকারের সমালোচনা করেন তাঁকে দিয়ে কোনওভাবেই কোনও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে না ।" এদিন কুণালের প্রশ্ন, পঙ্কজ দত্তকে নিরপেক্ষ সিট গঠনে বসাচ্ছেন, এতে আদালতের সম্মান থাকছে! আপনার সম্মান থাকছে !
এদিন সরাসরি কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেছেন,"বিচারপতি মান্থা হাইকোর্টের সম্মান নষ্ট করছেন । আমার জীবন আদালতের উপর নির্ভরশীল । এই মুহূর্তে চোদ্দটা মামলা আমার উপরে চলছে । নিয়মিত আমাকে আদালতে যেতে হয় । আদালত অবমাননার ভয়ে তাই বলে আমি চুপ করে বসে থাকব ! তাদের কী আদালতে অবমাননার ভয়ে আমি রসগোল্লা খাওয়াবো !"
কুণাল ঘোষ এদিন জানান, বিচারপ্রতি মান্থা যদি টিভি দেখে পঙ্কজ দত্তের মতো একজন সরকারের সমালোচককে নিরপেক্ষ তদন্তের দায়িত্ব দেন তাহলে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বলতে হচ্ছে ৷ এই সিট গঠনের বিশ্বাসযোগ্যতাকে নষ্ট করছেন বিচারপ্রতি স্বয়ং । উল্লেখ্য, কালিয়াগঞ্জে এক নাবালিকার রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় বিচারপতি রাজশেখর মান্থা সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ সেই দলে রাখা হয়েছে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার পঙ্কজ দত্তকে ৷