কলকাতা, 17 অগাস্ট : কোরোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে অতিপ্রয়োজনীয় সবজি আলুর অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ৷ ফলে নাজেহাল সাধারণ মানুষ । হেলদোল নেই রাজ্য প্রশাসনের । মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স । প্রায় 1 বছর যাবৎ বন্ধ টাস্কফোর্সের বৈঠক ও সম্পূর্ণ কাজকর্ম । ফলে ফের দালাল রাজের কবলে পড়ে আলুর দামে নাভিশ্বাস আম বাঙালির ।
কোরোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের কোপে পড়ে রাজ্যের বহু মানুষ কর্মহীন । অর্থনৈতিক টানাটানির মধ্যে রয়েছে আমজনতা । দু'বেলা খাবারের জন্য পরিবার পিছু বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করছে রাজ্য সরকার । রাজ্যের কোনও মানুষ যাতে না খেয়ে না থাকে, অন্ততপক্ষে আলুসিদ্ধ ভাত খেয়ে যাতে ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে তার জন্যই উদ্যোগ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
কিন্তু বর্তমানে সেই আলু ধরাছোঁয়ার বাইরে । খুচরো বাজারে জ্যোতি আলু 30 থেকে 32 টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ৷ চন্দ্রমুখী 35 টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে বিক্রি করা হচ্ছে ৷ ফলে চরম সমস্যায় পড়ছেন ক্রেতারা ।
আলুর দাম কিলো প্রতি 25 টাকায় বেঁধে রাখতে আগেই নির্দেশিকা দিয়েছিল নবান্ন । কিন্তু সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বর্ধিত দামেই বিক্রি হচ্ছে হেঁশেলের গুরুত্বপূর্ণ এই সবজি । কারণ, আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার গঠিত টাস্কফোর্সের কোনও প্রকার নজরদারি নেই ।
কেন মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকার গঠিত টাস্কফোর্স ? কার্যক্রম বন্ধ বলে স্বীকার করে নেন টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে । এ প্রসঙ্গে ETV ভারতকে তিনি বলেন, ‘‘টাস্কফোর্সের অনেকদিন মিটিং হয়নি । কোভিড 19 এর প্রাদুর্ভাবের কারণেই হয়নি । মুখ্যমন্ত্রী ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । মুখ্যমন্ত্রী হয়ত এই দিকটা খেয়াল করেননি ।’’
তবে আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ কোলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তাঁর দাবি, ‘‘আমফানে কলকাতা সংলগ্ন জেলাগুলিতে বিশাল ক্ষতি হয়েছে । অনেক শাক-সবজি নষ্ট হয়েছে । এই পরিস্থিতি থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলে টাস্কফোর্সের মিটিং হওয়ার প্রয়োজন । কবে হবে তা জানি না । গত বছরের শেষের দিকে মিটিং হয়েছিল । 5 মাস যাবৎ কোভিড, লকডাউন পরিস্থিতি চলছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘ অনেকগুলো কারণে আলুর দাম বেড়েছে । ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে । 10 পরিযায়ী শ্রমিক রাজ্যে এসে আলুর ব্যবহার করছে । এছাড়াও শাক সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বেশি করে আলু ব্যবহার করছে । সরকার আলুর দাম 22 থেকে 25 টাকা বেঁধে দিয়েছে । রিটেলাররা বলছে 25 টাকায় কিনতে হচ্ছে । কীভাবে 25 টাকায় বেচবো । এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । তবে সরকার ব্যবস্থা নিলে ও স্টোরগুলো সামলালে আলুর দাম কমতে বাধ্য ।’’
প্রসঙ্গত, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে আলুর ঘাটতি নেই । 40 লাখ মেট্রিক টন আলু মজুত রয়েছে । প্রতিমাসে 5 থেকে 6 লাখ মেট্রিক টন আলু রাজ্যে লাগে । উদ্বৃত্ত আলু ভিন রাজ্যে সরবরাহ করে থাকে সরকার । ফলে ঘাটতির কোন কারণ নেই । এমতাবস্থায় টাস্কফোর্স আর একটু সচেষ্ট থাকলে আলুর দাম লাগামছাড়া হত না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ।