কলকাতা, 7 এপ্রিল : ব্যাপক লোকসানের মুখে রাজ্যের কৃষি । মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ফসল । গরমের সবজি মাঠ থেকে তোলার আগেই রোদের তাপে ঝলসে যাচ্ছে গাছ । কয়েক হাজার কোটি টাকার লোকসান হল রাজ্যের কৃষকদের । কৃষি দপ্তর থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, যতটা সম্ভব কৃষকদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে ।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "রাজ্যের কৃষকদের প্রতি মানবিক মুখ্যমন্ত্রী । সরকারি হিমঘরে সবজি মজুত রাখতে সাহায্য করা হবে কৃষকদের ।" ইতিমধ্যেই কোরোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন । কৃষকরা সবজি বিক্রি করতে পারছে না । মাঠের সবজি স্থানীয় বাজারে আসছে । রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সবজি পরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত কৃষকদের ৷
কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, 2019-20 সালে এরাজ্যে সবজি উৎপাদিত হয়েছে 33.67 মিলিয়ন টন । শেষ আর্থিক বছরের থেকে প্রায় 4.45 মিলিয়ন টন অতিরিক্ত সবজি এরাজ্যে হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গে সবজি চাষের এলাকার আয়তন প্রায় 15 লাখ হেক্টর । এবছর গরমের সবজি পটল, লাউ, উচ্ছে, বেগুন, কুদরি রেকর্ড পরিমাণে উৎপদান হয়েছে । শীতের শেষ বেলাতেও ফুলকপি, বাঁধাকপি ভালো পরিমাণে উৎপাদন হয়েছে । এত সবজি উৎপাদনের পরও বিক্রি না হওয়ায় হতাশ রাজ্যের কৃষকরা । কৃষকদের সবজি রপ্তানিতে সরকারি সুফল বাংলা এগিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ৷
রাজ্যের শিম, লাউ, বরবটি, কচু, চালকুমড়ো, পিঁয়াজকলি, শশা, উচ্ছে, পটল বিদেশেও রপ্তানি হয় । বিশেষ করে পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপে বাংলার সবজি রেকর্ড পরিমাণে পাঠানো হয় । কিন্তু লকডাউনের ফলে এবছর রপ্তানির সব সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । গ্রামের কৃষকরা টমেটো বিক্রি করছেন এক টাকা কেজি দরে, শশা 15 টাকা কেজি ৷ নদিয়ার হরিণঘাটা ব্লকে প্রচুর পরিমাণে কুদরি উৎপাদন হয়েছে । এক টাকা কেজি দরে কৃষকরা তা বিক্রি করছেন । পটলের দাম কৃষকরা পাচ্ছেন 17-20 টাকা কেজি প্রতি । অথচ সেগুলো রাজ্যের খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে । কালোবাজারির জন্যেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা । রাজ্যের অধিকাংশ কৃষক পটল, লাউ, বাঁধাকপি চাষ বন্ধ করে পাট চাষের দিকে নজর দিচ্ছেন ।
উত্তর চব্বিশ পরগনার পটল চাষি মহিদুল হক হতাশ হয়ে বলেন, "ভয়ঙ্কর পরিমাণে চাষের ক্ষতি হল । এই ঘাটতি মেটাতে দু'বছর সময় লাগবে । মাঠের পটল, টমেটো, কুমড়ো, লাউ মাঠেই নষ্ট হচ্ছে ।" চলতি মাসে যদি লকডাউন উঠে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তাহলেও ক্ষতির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় 500 কোটি টাকার কাছাকাছি । শেষ তিন মাসের মজুত সবজি বিক্রি করে এবং আগামী তিন মাসের লোকসান কতটা ক্ষতি পূরণ করতে পারবে তা নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা ।