কলকাতা, 18 সেপ্টেম্বর : বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষায় কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করল । কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ,অতিরিক্ত সলিসিটর জেনেরাল ওয়াই যে দস্তুর, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনেরাল কিশোর দত্তকে নিয়ে কমিটি তৈরি করল কলকাতা হাইকোর্ট । এই মামলায় আপাতত আদালত বান্ধব হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়দীপ করকে । প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে যে কমিটি তৈরি হয়েছে সেই কমিটি আপাতত কোন জমিতে বিশ্বভারতী রয়েছে, কোথায় পাঁচিল দেওয়া প্রয়োজন বা আদৌ পাঁচিল দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, কোথায় কোন বিষয় থাকবে তা এখন থেকে তত্ত্বাবধান করবে এই কমিটি । পাশাপাশি পুলিশকে আপাতত বেশি সক্রিয় না হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।
17 অগাস্ট বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় । পরিবেশ আদালতের নির্দেশে পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলা হচ্ছিল বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানায় । কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন গিয়ে জোর করে সেই পাঁচিল ভেঙে দেয় । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পাঁচিল ভাঙার ঘটনায় রাজ্যের শাসকদলকেই দায়ি করেছিলেন । এই নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর কিছুটা স্তিমিত হলেও এখনও বন্ধ হয়নি ।
বিশ্বভারতীতে ভাঙচুরের এই ঘটনায় 18 অগাস্ট কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার । বহিরাগতরা কীভাবে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালাল হাইকোর্টের নজরদারিতে পুরো ঘটনার তদন্ত চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন ওই আইনজীবী । পাশাপাশি প্রাথমিক তদন্ত চার সপ্তাহের মধ্যে যাতে শেষ হয় সেই আবেদন জানান তিনি । এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তায় CISF জওয়ান মোতায়েন করার আর্জি জানিয়েছেন আইনজীবী । এরপরই প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণের ডিভিশন বেঞ্চ প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃণমূল কংগ্রেস দলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে মামলায় পার্টি করার নির্দেশ দেয় । এরপর 8 সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চ শ্রীনিকেতন- শান্তিনিকেতন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে আলাদা আলাদা হলফনামা চেয়ে জানতে চায় ওই দিন ঠিক কী ঘটেছিল ।
এই জনস্বার্থ মামলাটি আপাতত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চেই বিচারাধীন রয়েছে । এরই পাশাপাশি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য রক্ষায় আজ কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করল ।
স্বতঃপ্রণোদিত মামলার প্রসঙ্গে বিচারপতিরা বলেন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়কে 1951 সালের 14 মে জাতীয় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করা হয় । সেই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে মামলাটি জনস্বার্থ হিসেবে না দেখে বর্তমান পরিস্থিতিতে আদালতের সক্রিয়তার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করছি । সেই জন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে । এখন থেকে কমিটির অনুমতি ছাড়া কোনও নতুন নির্মাণ বা ভাঙাভাঙি করা যাবে না । যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, তার সুষ্ঠু সমাধানে উপাচার্য ও কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় সমস্ত সহযোগিতা করতে হবে কমিটিকে । বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ছাড়া পুলিশের অন্য কোনও সক্রিয়তার আপাতত প্রয়োজন নেই বলে বিচারপতিরা মন্তব্য করেন ।