কলকাতা, 9 নভেম্বর : গত বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । ভাবা হচ্ছে, পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ রুখতে হাতে ধরা মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করার । এরই মধ্যে পরীক্ষা কী করে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনার জন্য রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে আজ বৈঠক করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ । জানা গেছে, সেখানে একটি শিক্ষক সংগঠন প্রস্তাব দিয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষিকারাও পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকবে না । সেই প্রস্তাবে বৈঠকে উপস্থিত বাকি শিক্ষক সংগঠনগুলি সায় দিয়েছে । প্রতিটি শিক্ষক সংগঠনই শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালনা করায় সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতিকে ।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের ডাকা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের প্রায় সব রেজিস্টার্ড শিক্ষক সংগঠন । বিকেল 4টে থেকে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক চলে । মূলত, 2020 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা কী করে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই বিষয়েই আলোচনা হয়েছে । তার মধ্যেও যে বিষয়টি নিয়ে প্রধানত আলোচনা হয়েছে সেটা হল, পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন । 2019 সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় পরপর ছয়টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে বেরিয়ে গেছিল । যা নিয়ে রীতিমতো সমালোচনার ঝড় বয়েছিল গোটা রাজ্যে । আগামী বছরের পরীক্ষায় যাতে সেই ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয় শিক্ষক সংগঠনগুলির কাছ থেকে । একটি সংগঠন প্রস্তাব দেয়, পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও ঢুকবেন না । গত বছর পর্যন্ত মোবাইল নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে পারতেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা । তবে, সেই ফোনগুলো জমা থাকত প্রধান শিক্ষকের ঘরে । ফোন নিয়ে না ঢোকার প্রস্তাবে উপস্থিত বাকি শিক্ষক সংগঠনগুলি সায় দিয়েছে বলে জানা গেছে ।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র আজকের বৈঠক নিয়ে বলেন, "মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অনেকদিন পর সব শিক্ষক সংগঠনকে ডেকেছেন । আমরা আমাদের কথাগুলো বললাম । আমাদের সমস্যার কথাগুলো বললাম । সভাপতি আমাদের কিছু কথা বললেন । আমরা সবাই একমত হয়েছি, মাধ্যমিক পরীক্ষাটাকে যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়, তার জন্য আমরা সবাই সর্বতোভাবে পর্ষদকে প্রতিবছরই সহযোগিতা করি, এ বছরও করব । সভাপতি কিছু কিছু উদাহরণ তুলে ধরেছেন, যেখানে পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের মধ্যে এক-দুজন শিক্ষক নিয়ম-নীতি না মেনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র বাইরে বের করে দেন । সেটা যদিও সংখ্যায় কম তবুও এটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে । আমরা সবাই তাঁকে বলেছি, শিক্ষকদের উপর ভরসা রাখুন ৷ প্রধান শিক্ষকদের উপর ভরসা রাখুন । আমরা আগামী দিনে মাধ্যমিক পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সমস্ত রকম দায়-দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত । সহযোগিতাও করব । উনি মূলত পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহার নিয়েই বলেছেন ।"
নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, "আমাদের সাহায্য চেয়েছেন । আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলাম, সব তিনি মানেননি । তিনি এমন একটি উদাহরণ দিলেন, যেন মোবাইল থেকেই সবকিছু হয়ে যাচ্ছে । মোবাইলের মাধ্যমে সবকিছু যেন বেরিয়ে যাচ্ছে । তিনি মোবাইলে নিষেধাজ্ঞা জারি করবেন বলে আমাদের বলেন । এবিষয়ে আমাদের সাহায্য চান । আমরা বলেছি সুষ্ঠু পরীক্ষা পরিচালনার জন্য আমাদের যা সাহায্য করা দরকার সেটা আমরা পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে করব । শুধু ছাত্রছাত্রীদের নয়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোবাইলে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চাইছেন । পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না শুধুমাত্র তিন-চারজন যাঁরা পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকেন তাঁদের বাদ দিয়ে । আমরা বললাম, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যত চিন্তা করে যদি মনে করেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মোবাইল আনা বন্ধ করে দিয়ে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হবে সেটা ভালো । পর্ষদ এব্যাপারে কোনও সার্কুলার দিলে আমরা তার বিরোধিতা করব না । কিন্তু, বোর্ড একটু ভেবে দেখবে, এই সার্কুলার জারি করলে শিক্ষকদের মনে যেন কোনো আঘাত না আসে ।"