কলকাতা, 28 এপ্রিল: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে কুন্তল ঘোষ এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু'টি মামলা থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট ৷ পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে দেশের শীর্ষ আদালতের তরফে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই মামলা অন্য কোনও বিচারপতির এজলাসে পাঠানো হোক ৷ একই সঙ্গে এদিন সুপ্রিম কোর্টে সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর সাক্ষাৎকারের যে অনুবাদের প্রতিলিপি চেয়ে পাঠিয়েছিলেন, তাতেও স্থগিতাদেশ দিল দেশের শীর্ষ আদালত ।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে সন্ধ্যা সাড়ে 7টায় হাইকোর্টে আসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সংক্রান্ত মামলার রায়ের কপি ৷ যেখানে শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকায় সাফ বলা হয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষের যে প্রসঙ্গ এসেছে, এবং যে কথা একটি বেসরকারি নিউজ চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, সেই সংক্রান্ত মামলার শুনানি তাঁর এজলাসে হবে না ৷ তবে বাকি মামলা আগের মতোই শুনবেন বিচারপতি ৷
শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে শুক্রবার সকালেই নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চ থেকে সরানোর নির্দেশ দেন ৷ তবে আইনজীবী মহলের একাংশের প্রশ্ন ছিল রায় নিয়ে ৷ অনেকেই জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, শুধুমাত্র তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলা থেকেই সরানো হয়েছে বিচারপতিকে ৷ আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যও জানান, নিয়োগ সংক্রান্ত সব মামলা থেকে অবশ্যই অব্যাহতি দেওয়া হয়নি তাঁকে। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কপি হাতে এলেই সম্পূর্ণ বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান তিনি।
এদিন রাতে সেই নির্দেশ আসার পরই জেখা গেল, কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে, তা অন্য বিচারপতির এজলাসে পাঠানোর জন্য কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ নির্দেশে দেশের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ স্পষ্ট লিখেছে, "আমরা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের তৈরি নোটটি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনা করেছি ৷
আরও পড়ুন: বিচারাধীন মামলায় সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না বিচারপতি, সুপ্রিম রায়েই সায় প্রাক্তন বিচারপতির
পাশাপাশি সাক্ষাৎকারের প্রতিলিপিটিও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিলিপি বিবেচনা করার পরই, আদালত নির্দেশ দিচ্ছে যে, কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এই মামলা পুনরায় হাইকোর্টের অন্য কোনও বিচারপতির এজলাসে বহাল করবেন ৷" পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে বেঞ্চ পুনঃনির্ধারণ করার জন্যও নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ৷
এই রায় প্রকাশ্যে আসতেই আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, এই রায় অনুযায়ী তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সংক্রান্ত মামলা থেকে সরতেই হচ্ছে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে। তবে তিনি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলার শুনানি করতেই পারবেন ৷ তবে এ ক্ষেত্রে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তাঁর উপরই নির্ভর করছে ৷ তবে আইনজীবীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শকে মান্যতাই দিয়ে থাকেন হাইকোর্ট।