কলকাতা, 20 জুন: অসাধ্য সাধন করে আরও একবার খবরের শিরোনামে চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেন। মাত্র এক শতাংশ বাঁচার আশা ছিল রোগীর ৷ পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ করে প্রায় 10 ঘণ্টার অস্ত্রোপচার মাত্র তিন ঘণ্টাতে করেই রোগীর প্রাণ বাঁচালেন তিনি। রোগী হাওড়ার বাসিন্দা রাতুল সোম । বিগত কয়েকমাস ধরেই তীব্র পেটে যন্ত্রণায় ভুগছিলেন তিনি । নিজে স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওষুধ খেতেন ৷ ফলে সাময়িকভাবে সেই ব্যথা কমে যেত । কিন্তু এপ্রিল মাসের 25 তারিখ আচমকাই রাত্রিবেলায় আবারও তুমুল পেটের যন্ত্রণা শুরু হয় রাতুলের । সেই ব্যথা এতই তীব্র ছিল যে পরদিন ভোরবেলায় তাঁকে নিকটবর্তী একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করতে হয় ।
তবে পরিবার সূত্রে অভিযোগ, হাওড়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে রোগীর কোনওরকম চিকিৎসা হয়নি। রোগীর দিদি বনানী সোম বলেন, "একদিন ভাইকে জেনারেল ওয়ার্ডের রেখে তারপর এইচডিইউতে স্থানান্তর করে দেওয়া হয় । হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, রাতুলের বুকে জল জমেছে । তার জন্য ড্রেনেজ করা দরকার । এরপরেই সেখান থেকে ওই হাসপাতালের অন্য আরেকটি শাখায় ভাইকে রেফার করে দেওয়া হয় । মে মাসের 9 তারিখ রাতুলের এই ড্রেনেজ করার কথা ছিল । তবে ওইখানে এই সম্পর্কের ডাক্তার তখন ছুটিতে ছিলেন । তিনি ফিরবেন একুশে মে ।"
আরও পড়ুন: টাভি পদ্ধতিতে হৃদযন্ত্রের চিকিৎসায় নজির এসএসকেএমের, প্রাণ ফিরে পেলেন 81 বছরের বৃদ্ধা
বনানীর কথায়, টানা 14-15 দিনে রাতুলের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয় । এরপরে তাঁরা খোঁজ পান ঢাকুরিয়া এএমআরআই হাসপাতালের চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেনের । তারপর রাতুলকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখানেই চলে তাঁর চিকিৎসা । চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেন বলেন," আমি যখন রাতুলকে দেখি তখন তাঁর প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় নষ্ট হয়ে গিয়েছে । কিডনি, লিভারের অবস্থা খুব খারাপ । এছাড়াও প্রায় 17 দিন কোনও চিকিৎসা না-হওয়ায় অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল রাতুলের । সাধারণত আমরা অগ্ন্যাশয়ের অস্ত্রোপচার করি দেরি করে । কিন্তু রাতুলের ক্ষেত্রে তার জন্য হাতে আর সময় ছিল না । তাই তখনই আমরা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।"
আরও পড়ুন: 10 ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে জোড়া লাগল ব্যক্তির কাটা যাওয়া হাত, সাফল্য ইএসআই হাসপাতালের
শুদ্ধসত্ত্ব সেন জানান, সাধারণত তলপেট কেটে এই অস্ত্রোপচার করা হয় ৷ কিন্তু রাতুলের অবস্থা এতটাই জটিল হয়ে গিয়েছিল যে তলপেট কেটে এই অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি । কারণ তাঁর তলপেট থেকে যকৃৎ সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সংক্রমণের জন্য । ফলে চিকিৎসকরা পিছন থেকে পাকস্থলী কেটে এই অস্ত্রোপচার করেন । পাকস্থলীর পিছনের দেওয়াল কেটে খারাপ হয়ে যাওয়া টিস্যু ফেলে দেওয়া হয় । তখন একটা স্থায়ী রাস্তা তৈরি করা হয় তাঁর পাকস্থলীর সঙ্গে । তারপর বেশ কিছুদিন ওই রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে সোমবার তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছে । দীর্ঘ দেড় মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন রাতুল । প্রায় 14 দিন ধরে কোমায় থেকে বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ তিনি । রোগীর বোন জানান, "চিকিৎসক শুদ্ধসত্ত্ব সেন আমাদের কাছে ভগবান ৷"