কলকাতা, 12 ডিসেম্বর: সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের উচ্চশিক্ষার স্কলারশিপ (Maulana Azad National Fellowship) বন্ধের প্রতিবাদে সরব পড়ুয়া ও শিক্ষাবিদরা (Students protest)। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের কড়া সমালোচনা করে তাঁদের বক্তব্য, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বিরোধী পদক্ষেপ করছে মোদির বিজেপি সরকার । যাতে এই সম্প্রদায়ভুক্তরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন । যে কারণে মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করতে উদ্যাগী কেন্দ্রীয় সরকার ।"
গত 8 ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার লোকসভায় কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধের ঘোষণা করেছেন । তিনি বলেন, "আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই ফেলোশিপ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে । কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা এ রকম অনেক ধরনের প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পাচ্ছেন ।"
মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ উচ্চশিক্ষার জন্য মূলত মুসলিম, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান ও পার্সি সম্প্রদায়ভুক্ত অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পড়ুয়ারা পেতেন । তাঁরা এমফিল ও পিএইচডি-র ক্ষেত্রে এই বৃত্তি পান । সাচার কমিটির সুপারিশ মেনে 2006 সালে ইউপিএ সরকার দেশের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদের নামে এই বৃত্তি চালু করে ।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, " আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সংখ্যাগুরুদের উচিত সংখ্যালঘুদের জন্য এগিয়ে নিয়ে আসা । তাঁদের সার্বিক ভাবে সহায়তা করা । টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এই ফেলোশিপ আরও বৃহত্তর সমাজের জন্য প্রসার ঘটানো উচিত ছিল । কিন্তু দুঃখের বিষয় কেন্দ্রীয় সরকার চায় না সংখ্যালঘুরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক । যে কারণে তাঁরা মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করে দিচ্ছে । আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি । সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত প্রতিবাদে সরব হওয়া ।"
মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ পেয়েছিলেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার আসিফ ইকবাল । তাঁর বক্তব্য, "বহু গরিব ঘরের পড়ুয়া এই ফেলোশিপের জন্য উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছেন । বিশেষ করে মুসলিম ঘরের মেয়েরা এই ফেলোশিপের টাকায় এমফিল, পিএইচডি করতে উৎসাহ পেতেন । তাঁদের সংখ্যাটাও বাড়ছিল । কিন্তু কর্পোরেটপ্রেমী মোদি সরকার চায় না সংখ্যালঘুরা উচ্চশিক্ষা পাক । মুসলিম ঘরের মেয়েরা এগিয়ে আসুক । এ কারণেই মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করে দিচ্ছে ।"
আরও পড়ুন: প্রতিবাদ করতে গিয়ে জনজীবন ব্যাহত করা যাবে না, বার্তা সংখ্যালঘু একাধিক সংগঠনের
জামায়াতে ইসলামি হিন্দের ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্ট ইসলামিক অর্গানাইজেশন বা এসআইও-ও এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছে । তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ শাখার জনসংযোগ আধিকারিক শেখ ইমরান বলেন, "কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে মুসলিম বিরোধী, তার অন্যতম উদাহরণ মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফোলোশিপ বন্ধ করে দেওয়া । বর্তমান সরকারের আমলে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের শিক্ষার সহজলভ্যতা ক্রমাগত আক্রমণের মুখে । নির্লজ্জভাবে 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশে'র দ্বিচারিতামূলক বক্তব্য প্রকাশ্য দিবালোকে উন্মোচিত হচ্ছে । প্রাক ম্যাট্রিক স্কলারশিপ এবং মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ বন্ধ করে দেওয়া শিক্ষা গ্রহণে ব্যাপক অসাম্য সৃষ্টি করবে । শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র থেকে সংখ্যালঘুদের বৃত্তি প্রত্যাহার করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিদ্বেষী মনোভাব প্রকাশ পায় । শিক্ষা এবং সংখ্যালঘুদের মর্যাদার উপর এই আক্রমণের বিরুদ্ধে সুশীল সমাজ এবং নাগরিকদের নিন্দা ও প্রতিবাদ করা দরকার ।"
এ দিকে, আজই দিল্লিতে প্রতিবাদ আন্দোলন করছে এসএফআই । একই ভাবে এসএফআই-এর কেন্দ্রীয় কমিটি প্রতিটি রাজ্য কমিটিকে বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ আন্দোলন সংগঠিত করতে নির্দেশ দিয়েছে । মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ পুনরায় চালু করার দাবিতে রাজ্যের রাজধানীগুলিতে প্রতিবাদ মিছিল সমাবেশ করার কথা বলা হয়েছে ।