কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় বস্ত্র বিতরণ করল কারমাইকেল হলের পড়ুয়ারা। দুর্গাপুজো উপলক্ষে (Durga Puja) শনিবার রাতে পথ শিশুদের মুখে হাসি ফোটাতে বস্ত্র ও মিষ্টি বিতরণ করেন তাঁরা। মূলত, বছরভর খাওয়ার খরচ থেকে কিছু অর্থ বাঁচিয়ে সেই টাকায় নানান সময়ে সেবামূলক কাজে এগিয়ে আসেন ছেলেরা, দাবি হস্টেল সুপারদের।
তাঁদের বক্তব্য, পড়ুয়াদের এই মহৎ কাজে অংশীদার হতে পেরে ভীষণ খুশি। এইভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম, বিশেষ করে ছাত্র সমাজ এগিয়ে আসুক। বৃহত্তর সমাজকে সকলের কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাক (Students of Minority Community Give Gifts to Street Childrens)।
রবিবার রাতে শিয়ালদা (Sealdah) চত্বরের বৈঠক খানা রোড, সূর্য সেন স্ট্রিট, মহাত্মা গান্ধি রোডের বহু শিশুর হাতে পাঞ্জাবী, পাজামা, ফ্রক ও মিষ্টির প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। পড়ুয়াদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে হস্টেল সুপাররা পথ শিশুদের জানান, এবার পুজোতে দাদারা তাদের জন্য উপহার দিয়েছে। সেই উপহারে সেজে পুজোতে চুটিয়ে আনন্দ করার জন্য। বাংলার দুর্গা উৎসবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ মেতে ওঠেন।
আরও পড়ুন: আগমনীতেই বিদায়ের সুর! পুজোর আমেজে বিজয়ার করুণ সুর আসানসোলের গ্রামে
নতুন জামাকাপড় কিনতে শপিং মলগুলোতে উপচে পড়ে ভিড়। বাদ পড়ে যান দুস্থরা। সেই দুস্থদের সঙ্গে পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারমাইকেল হলের বর্তমান ও প্রাক্তনীদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন হস্টেলের সুপাররা। কারণ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বয়েজ হস্টেলটিতে মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছেলেরা থাকেন।
তাঁদের উদ্যোগে ইফতার পার্টিতে ভিন্ন ধর্মের পড়ুয়াদের আমন্ত্রণ থেকে শুরু করে বড়দিন, হোলি, দুর্গোৎসব পালন করা হয়। হস্টেলের ওল্ড বিল্ডিংয়ের সুপার কবি শেখর মিস্ত্রি বলেন, " উৎসব সকলের। কেউ আনন্দে কাটাবেন, আর কেউ দুঃখে থাকবেন, এমনটা চাই না। সকলেই একসঙ্গে আনন্দে কাটাক। আমার খুব ভালো লাগছে যে, আমাদের হস্টেলের ছেলেরা বৈষম্য ঘুচিয়ে এগিয়ে এসেছেন।"
নিউ বিল্ডিংয়ের সুপার অমিত মজুমদার বলেন, "শুধু তো দুর্গোৎসব নয়। শীতকালে কিংবা বড়দিনেও আমাদের পড়ুয়ারা শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকেন। এটাই কারমাইকেল এর ঐতিহ্য। বিগত দিনে এই ঐতিহ্য বজায় ছিল। আগামীতেও থাকবে। কারণ, আমাদের পড়ুয়ারা কখনও ধর্ম-জাতপাত নিয়ে ভাবেননি, ভাববেনও না। তাঁরা যে বিশাল আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন পরিবার থেকে পড়াশোনা করতে এসেছেন, এমনটাও নয়। তারপরও নিজেদের হাত খরচ, খাওয়া খরচ বাঁচিয়ে সেবামূলক কাজ করে চলেছেন, তাতে আমরা অভিভূত।"
আরও পড়ুন: কাঁচের দুর্গাই হবে সমাজের অবক্ষয়ের আয়না, স্বচ্ছতার খোঁজে দাঁতনের শিল্পী
পড়ুয়াদের মধ্যে মহম্মদ অসীম আক্রম বলেন, "প্রাক্তনী-বতর্মান পড়ুয়াদের মধ্যে রাইহান সিদ্দিক, মহম্মদ নাসিম, রিয়াজ আহমেদ-সহ সিনিয়র, জুনিয়ররা পাশে না থাকলে কাজটা করা সম্ভব হতো না। কারমাইকেল হস্টেল বিভিন্ন সময়ে নানান সেবামূলক কাজ করে। যাতে মানুষের মুখে হাসি ফোটানো যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে করোনা মোকাবিলায় কারমাইকেল হস্টেল শোচনীয় মানুষদের পাশে থেকেছেন। আগামীতেও থাকবে।"