কলকাতা, 13 অগস্ট : মাথার উপর ঝাঁ ঝাঁ রোদ ৷ তারই মধ্যে রাস্তার উপর প্লাস্টিক বিছিয়ে, কোথায়ও টেবিল চেয়ার পেতে চলছে ক্লাস । শিক্ষিকা 'ডিজিটাল মাধ্যমে নজরদারি চালানো' নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন । ছাত্রছাত্ররা মন দিয়ে লেকচার শুনছে ও নোটস নিচ্ছে । এভাবেই চলছে ক্লাস । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটের সামনে ধরা পড়ল এই চিত্র । অবিলম্বে স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চালু করার দাবিতে এভাবেই চার দিনের প্রতীকী আন্দোলনে নেমেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা ।
করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে । তাই ধাপে ধাপে খুলেছে বিউটি পার্লার, সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ সহ বারগুলোও । তাহলে স্কুলগুলি খুলবে না কেন ? এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন তুলছে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা । তাঁদের মতে, স্কুল খোলার ন্যূনতম প্রস্তুতির কথা কেউই বলছেন না । তারই প্রতিবাদে রাস্তার উপরে বসে ক্লাস নেওয়া শুরু হয়েছে ৷
দীর্ঘ দেড় বছর হল বন্ধ স্কুল-কলেজ । বিদ্যালয়ে গিয়ে পঠন-পাঠন বন্ধ ৷ শপিং মল থেকে রেস্তোরাঁ ও বিউটি পার্লার খুলে গেলেও এখনও ক্লাসরুমের দরজা খুলল না ৷ এতে ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের ৷ এই বিষয়ে স্টুডেন্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সদস্য ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তর্পণ সরকার বলেন, " ক্লাসরুমে আমরা আগে প্রতিদিন ক্লাস করতাম, আড্ডা দিতাম । বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে টিফিন খেতাম ৷ সেই ক্লাসরুমে গত মার্চ মাসের পর থেকে আমরা আর ফিরতে পারিনি । অথচ মজার ব্যাপার হল, চারদিকে সবকিছুই খুলে যাচ্ছে । কিন্তু সরকারের স্কুল-কলেজ খোলার কোনওরকম পরিকল্পনা নেই ।
তিনি বলেছেন, "এডুকেশন সেক্টরের পুরো মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হচ্ছে এভাবে । তাই বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তার উপর বসে ক্লাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি । বিষয়টি আমরা যাদবপুরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানাই । তাঁরা ক্লাস নিতে রাজি হয়ে যান । এভাবেই আমরা চারদিনের জন্য প্রতীকী আন্দোলন চালিয়ে যাব । প্রতিদিন দুটি করে ক্লাস হবে । কম্পিউটার সায়েন্সের উপর প্রথম ক্লাস নেন অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায় ।"
সম্প্রতি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুজোর ছুটির পর স্কুল ও কলেজ চালু করার চেষ্টা চালানো হবে । এই বিষয়ে অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, "যদি পুজোর পর স্কুল ও কলেজ খোলা হয় তাহলে তার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা এখন থেকেই করতে হবে । যেমন কত জন ছাত্র-ছাত্রী ভ্যাকসিন নিল, ক্লাসগুলিতে স্যানিটাইজিং সহ আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শুরু করতে হবে । অন্যদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে তর্পণ সরকার বলেছেন, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় আমরা তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারি না । তাই যতদিন না পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ খোলার নির্দেশিকা জারি করা হচ্ছে ততদিন এই কথায় বিশ্বাস করতে পারছি না ।"
আরও পড়ুন : Covid Situation : পুজোর পর স্কুল-কলেজ খোলার ইঙ্গিত, রাজ্য়ের ভাবনায় সায় বিশেষজ্ঞদের একাংশের
দেড়টা বছর ধরে অনলাইন ক্লাস করে ক্লান্ত পড়ুয়ারা ৷ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এই ব্যবস্থায় হাঁপিয়ে উঠেছেন ৷ নন্দিনী মুখোপাধ্যায় বলছেন, "দীর্ঘ দেড় বছর পরে এভাবে ক্লাস নিতে পেরে খুব ভাল লাগছে । ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছি, পড়াতে পারছি । ওরা আমার পড়ানো ধরতে পারছে কি না তা বুঝতে পারছি । অবিলম্বে স্কুল-কলেজ না খুললে ছেলেমেয়েদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে ।" শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় স্কুল খোলার দাবিতে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে এই ধরনের আন্দোলন ।