কলকাতা, 10 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রের রহস্যমৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে ৷ যাদবপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বাংলা বিভাগের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর পরিবার । ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের গোয়েন্দারা ৷ হস্টেলের উপর থেকে তাঁরা দুটি বালিশ নীচে ফেলে প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করেন যে, ওই যুবককে আদৌ উপর থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে ? নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন ? তবে পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের সন্তানকে র্যাগিং করা হয়েছে । তবে কি এখনও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যতম নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের কাজ অগোচরে চলছে ? পড়ুয়ারা সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন ৷
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া সৃজন দত্ত বলেন, "যে সমস্ত পড়ুয়া গ্রাম থেকে শহরে পড়তে আসেন, ইন্ট্রো দেওয়ার নাম করে তাঁদের উপর বছরের পর বছর র্যাগিং করা হয় । কাল স্বপ্নদ্বীপ কুন্ডুর সঙ্গে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটা হল এই র্যাগিং সংস্কৃতি । আমরাও এর ভুক্তভোগী ।"
একই অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রথম বর্ষের আরও এক ছাত্র অর্পণ মাঝি । তিনি বলেন, "আমি তিনদিন ছিলাম হস্টেলে । বেশ কিছু নিয়ম আমাদের বলে দেওয়া হয়েছিল । মাথায় একটি স্পেসিফিক ছাঁটের চুল কাটতে বলা হয় ৷ সারাক্ষণ লম্বা প্যান্ট পরতে বলা হয় । সন্ধে 6টার মধ্যে হস্টেলে ঢুকতেই হবে, না হলে তার যথাযথ কারণ জানাতে হবে সিনিয়রদের । রাত 11টা থেকে 2টো পর্যন্ত রোজ ইন্ট্রো দিতে হবে সিনিয়রদের । তাঁদের ক্রমাগত ফাইফরমাশ খাটতে হবে । এগুলো ওই তিন রাত আমার সঙ্গেও চলেছে । তারপরে বলা হয়েছে, আসল ইন্ট্রো এখনও বাকি । তখন ভয়ে হস্টেল ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি ।"
আরও পড়ুন: স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে ব়্যাগিংয়ের অভিযোগ, প্রশ্নের মুখে যাদবপুর
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে পার্থপ্রতিম রায় এ বিষয়ে বলেন, "এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা সকলে শোকস্তব্ধ । পাশাপাশি আমরা সুস্পষ্ট ভাবে দাবি করছি, অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক ও কঠোর শাস্তি দিতে হবে । নতুন ছাত্রদের আলাদা হস্টেলে রাখতে হবে ইউজিসি-র নিয়ম মেনে । অবিলম্বে প্রাক্তন ছাত্র যাঁরা হস্টেলে বেআইনি ভাবে থাকছেন, তাঁদের হস্টেল থেকে বের করতে হবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে ।"
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান, "এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক । তবে দেখতে হবে ঠিক কী হয়েছিল । যদি সত্যি র্যাগিং হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমরা শাস্তি দেব । অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব । কারণ র্যাগিংকে আমরা বরদাস্ত করি না ।"