কলকাতা, 3 জানুয়ারি: অনেক স্বপ্ন নিয়ে রাজ্যের প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে (Presidency University) ভর্তি হন পড়ুয়ারা । রাজ্য তো বটেই দেশের মধ্যেও নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে অন্যতম কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ৷ তবে এই নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে সম্প্রতি উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ৷ প্রথম সারির এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভরতি হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নৈরাশ্য গ্রাস করছে পড়ুয়াদের একাংশকে ৷
যে উদ্যম নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে পড়ুয়ারা ভর্তি হচ্ছেন ভাষাগত সমস্যার কারণে তা মাঝপথে হারিয়ে যাচ্ছে ৷ অনেকেই মাঝপথে এখানে পড়া ছেড়ে অন্য কলেজে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে । প্রেসিডেন্সিতে বিভিন্ন ক্লাসে লেকচার দেওয়া হচ্ছে ইংরেজিতে । এমনকি পরীক্ষাতেও লিখতে হচ্ছে ইংরেজিতে (Presidency University controversy)। এর ফলে পিছিয়ে পড়ছেন বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়ারা (Presidency University Kolkata)। দক্ষিণ 24 পরগনার বারুইপুরের এক পড়ুয়া বিতান ইসলাম ৷ ভালো ফল করে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এই ছাত্র ৷ তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন ।
বিতান বলেন, "আমি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । এখানে ভর্তি হওয়ার পর থেকে অনার্স পেপারে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সমস্যা না-হলেও প্রথম থেকেই জেনারেল সাবজেক্ট নিয়ে প্রচন্ড সমস্যায় রয়েছি । আমাদের জেনারেল সাবজেক্ট বা বিষয়গুলি (বাংলা বাদে) সবই ইংরেজিতে পড়ানো হয় । ইংরেজিতে পড়ানো হলেও তা নিয়ে তেমন সমস্যা হয় না । কিন্তু আসল সমস্যা তৈরি হয় পরীক্ষার সময় । প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতে লেখার সময় সমস্যা হয় ।" তিনি আরও বলেন, "শুধু জেনারেল বিষয়গুলিই নয়, অনার্স সাবজেক্টগুলোতেও (বাংলা, হিন্দি ছাড়া) আমাদের মাতৃভাষায় লেখার কোনও সুযোগ সুবিধা নেই । আবার এমনও হয়েছে যে যাঁরা অনার্স থেকে জেনারেল নিয়েছেন তাঁদের আরও বেশি সমস্যা হয়েছে । তবে দেশের অন্যতম প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক ভাষায় লিখতে দেওয়া হয় । এমনকি এই কারণের জন্য অনেকে পছন্দের জেনারেল সাবজেক্ট নিতে চায় না এখানে ।"
আরও পড়ুন: চাকরি নেই ! পেট চালাতে দুই ইঞ্জিনিয়ারের চায়ের দোকান, বি'টেক চা-ওয়ালা
তবে শুধু বিতান ইসলাম নন । তাঁর মতো এমন বহু পড়ুয়া আছেন যাঁদের প্রতিদিন এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে (Presidency University language controversy)। এমনও অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছেন যাঁরা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ইংরেজিতে পড়ার মানসিক চাপ সামাল দিতে না-পেরে প্রেসিডেন্সি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন (students left Presidency for language problem in study) । এরকম সমস্যারই সম্মুখীন হয়েছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাক্তন পড়ুয়া ৷ ইংরেজিতে পড়ার চাপ সামাল দিতে না পারায় তিনি মাঝপথেই প্রেসিডেন্সি ছাড়তে বাধ্য হন । তিনি বলেন, "আমি চন্দনপুর গ্রামের ছেলে । আমার কাছে প্রেসিডেন্সিতে পড়তে আসা একটা বিরাট পাওনা ছিল । অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হই ৷ তবে পুরো পড়ানোটা ইংরেজিতে হওয়ার কারণে আমার পড়া বুঝতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল । অধ্যাপকরা বাংলাতে বোঝালেও, পরীক্ষার খাতায় সম্পূর্ণটা ইংরেজিতে লিখতে হত। পাশাপাশি ইংরেজি বাক্য গঠন, লেখার ধরণ, অনেক সময় মূল বিষয়বস্তুর থেকে বেশী গুরত্ব পায় । দীর্ঘ কয়েক মাস এই সমস্যায় পড়ে আমি বুঝি, প্রেসিডেন্সি আমার জন্য নয় । পরীক্ষায় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও লিখতে দিলে আমার মত বহু ছাত্র ছাত্রছাত্রীদের গ্রামে ফিরে আসতে হতো না ।"
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইও ৷ সংগঠনের প্রেসিডেন্সি ইউনিটের তরফে বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে ৷ দাবি জানানো হয়েছে, ইংরেজিতে পড়ানো হলেও যাতে প্রশ্নপত্র ইংরেজির পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষায়ও হয় এবং উত্তর লেখার সময় যাতে ছাত্রছাত্রীরা মাতৃভাষায় লিখতে পারে তা নিশ্চিত করতে ৷
এই প্রসঙ্গে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউনিটের সভাপতি আনন্দরূপা ধর বলেন, "বাংলা মাধ্যমে পড়ে আসা ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে এখানে ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাসে বুঝতে অনেক সময়ই খুব অসুবিধা হয় এবং মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা পিছিয়ে পড়েন । আমরা দাবি করছি, যাতে তাঁদের ইংরেজি ভাষায় উত্তর লেখার ধরন বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য রেমেডিয়াল ক্লাস নেওয়া হয় এবং পরীক্ষায় নম্বর যাতে, ভাষা বা বাক্য গঠনের ভিত্তিতে নয়, বরং বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে দেওয়া হয় । পরীক্ষায় যাতে বাংলায় উত্তর লেখার সুযোগ দেওয়া হয় সে দাবিও আমরা জানিয়েছি ৷"