কলকাতা, 15 জুন : একা হ্যান জুনবে নয় । ভারত - বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ছে এরকম আরও অনেক চিনা সাইবার দুষ্কৃতীদের আনাগোনা । বাড়ছে সক্রিয়তা । বিএসএফের স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে ।
সূত্রের খবর একাধিক চিনা সাইবার দস্যুরা ভারত এবং বাংলাদেশ সীমান্তকে কাজে লাগিয়ে চোরাচালান এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত রয়েছে । ফলে তাদের প্রতিহত করার জন্য এবং সীমান্তে নজরদারি আরও প্রখর থেকে প্রখরতর করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী ।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একাধিক জায়গায় নতুন করে কাঁটাতার দিয়ে মোড়ায় পরিকল্পনা করছে বিএসএফ । বেশ কিছু জায়গায় উন্নত মানের সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টল করার ভাবনা রয়েছে বিএসএফের । মূলত হ্যানের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় জওয়ান যেমন আইটিবিপি ও এসএসবি, বিএসএফের ইন্টেলিজেন্সি বিউরোর গোয়েন্দাদের ফোন ট্যাপ করে বা হ্যাক করে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার খুঁটিনাটি তথ্য চিনে পাচার করা ।
বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার বিএসএফের ডিআইজি এসএস গুলেরিয়ার বলছেন, "আমাদের বিএসএফ জওয়ানরা সব সময় তৎপর রয়েছে । তাদের তৎপরতার জেরেই সম্প্রতি এই চিনা সাইবার অপরাধীকে আমরা আটক করি । পরবর্তীকালে তাকে মালদা জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও, বর্তমানে বিএসএফের ইন্টেলিজেন্স বিউরো তাকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করছে । আর এই জিজ্ঞাসাবাদের ফলে একাধিক তথ্য উঠে এসেছে বিএসএফের কাছে । যদিও তদন্তের স্বার্থে সেই সমস্ত তথ্য প্রকাশ নারাজ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ার । কিন্তু বিএসএফ ইন্টেলিজেন্স বিউরোর খবর, শুধু একজন চিনা নাগরিক নয়, এইরকম একাধিক চিনা নাগরিক যারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তারা ভারত বাংলাদেশ সীমান্তকে কাজে লাগানোর জন্য একাধিক পন্থা বেছে নিচ্ছেন ।"
বিএসএফ সূত্রের খবর, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে একাধিক জায়গায় ঠিকমতো কাঁটাতার নেই । চেকিংয়ের ব্যবস্থাও নেই । ফলে তারা সেই দুর্বলতাগুলিকে কাজে লাগাচ্ছে ।
বিএসএফের ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট থেকে অনুমান করা হচ্ছে, হ্যানের শরীরে চিনা মাইক্রোচিপ লাগানো থাকলেও থাকতে পারে । সেক্ষেত্রে তার ডিএনএ পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে । তবে যেহেতু এখন হানকে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও জেরা করতে চায়, তাই যাবতীয় তথ্য প্রমান রাজ্য পুলিশ ও এনআইএ-র হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত বিএসএফ । সীমান্তরক্ষী বাহিনী সূত্রে এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে ।
আরও পড়ুন : কালিয়াচকে ধৃত চিনা নাগরিকের কাছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত একাধিক তথ্য, চরবৃত্তির সন্দেহ
ধৃত হানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফ । এসটিএফের সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ । ফলে তার যাবতীয় কেস রেকর্ড মালদা পুলিশের থেকে ইতিমধ্যেই এনআইএ এবং রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দেওয়ার আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছে মালদা জেলা পুলিশ ।
ইতিমধ্যেই হ্যানকে জেরা করার আগে বিএসএফের ইন্টেলিজেন্স বিউরোর গোয়েন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্য পুলিশের এসটিএফ ও এনআইএ-র গোয়েন্দারা । ধৃতের সঙ্গে একাধিক চিনা সাইবার দস্যুদের যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই তার একাধিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন গোয়েন্দারা । পাওয়া গিয়েছে হ্যানের ব্যবহার করা ল্যাপটপ এবং আইফোনের পাসওয়ার্ড ।
অনুমান করা হচ্ছে, চিনে বসে ভারতীয় মোবাইল সিম কার্ড ব্যবহার করে ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলিকে হ্যাক করার চেষ্টা করত সেদেশের হ্যাকাররা । আর এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে একজন চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করেছে বিএসএফ । তার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য এনেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী । তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে উঠে এসেছে একাধিক তথ্য । যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেওয়ার মতো ।
বিএসএফ সূত্রের খবর, চিনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা হ্যান জুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে সে একাধিকবার নিজের অন্তর্বাসের মধ্যে প্রায় 1300 থেকে 1400 ভারতীয় সিম কার্ড তুলে নিয়ে চিনে পাচার করেছে । তাকে জেরা করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি । পাশাপাশি এনআইএ, মহারাষ্ট্রের এটিএস বা অ্যান্টি টেররিস্ট স্কোয়াড ।
10 জুন সীমা সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার সময় সীমান্ত চৌকি সুলতানপুরের এলাকা থেকে এক চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করেছিল । অভিযোগ এই অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সীমান্ত চৌকি মহাদিপুরে আনা হয়েছিল । মহাদিপুরে বিএসএফ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলির জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন, চিনা অনুপ্রবেশকারীর পরিচয় হান জুনবের (বয়স 36 বছর) নামে জানা যায়, সে চিনের শহর হুবেইয়ের বাসিন্দা ।
লক্ষণীয় যে হান জুনবের ব্যবসায়িক অংশীদার সান জিয়াংকে বিভিন্ন অভিযোগে এটিএস লখনউ গ্রেফতার করেছিল । তার পর থেকে হান জুনবের বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিস দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ।
বিএসএফ এই অনুপ্রবেশকারীর তল্লাশি করলে তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক বৈদ্যুতিন ডিভাইস উদ্ধার করে । বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের জারি করা বিবৃতি অনুসারে, হান জুনবে একজন অপরাধী এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদে, একাধিক তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে । হান জুনবে জাল দলিল ব্যবহার করে ভারত থেকে প্রায় 1300 ভারতীয় সিম চিনে নিয়ে গিয়েছে । হান জুনবে তার সহযোগীদের মাধ্যমে সিমগুলি অন্তর্বাসে লুকিয়ে চিনে পাঠাত । এই সিমগুলি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে এবং অন্যান্য অন্যায় কাজ করতে ব্যবহৃত করা হয় । তাদের উদ্দেশ্য ছিল ওই সিম ব্যবহার করে এটিএম মেশিন থেকে টাকা বের করে লোকদের ঠকানো ।