ETV Bharat / state

"পথঘাট যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় কেউ ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে"

author img

By

Published : Jun 4, 2020, 2:14 PM IST

Updated : Jun 4, 2020, 2:27 PM IST

কোরোনা আতঙ্ক এক লহমায় সব বদলে দিয়েছে ৷ চাকরি সূত্রে হায়দরাবাদে থাকা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অর্জুন রায় সম্প্রতি কলকাতায় নিজের বাড়িতে ফিরেছেন ৷ বদলে যাওয়া শহর, বিমানবন্দরের কড়াকড়ি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন ETV ভারতের সঙ্গে ৷

"পথঘাট যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় কেউ ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে"
"পথঘাট যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় কেউ ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে"

কলকাতা, 4 জুন: প্রাণের শহর ছেড়ে চাকরি সূত্রে গত তিন বছর ধরে নিজামের শহরের বাসিন্দা হয়ে গেছেন ৷ এখানকার বিশাল বিশাল মল, ঐতিহাসিক স্থান, বিরিয়ানি আর ভিন্ন ভাষার কোলাহলে মানিয়ে নিতে সময় লাগেনি ৷ কলকাতার মতোই ধীরে ধীরে চেনা শহরে পরিণত হয়ে গেছিল হায়দরাবাদও ৷ কিন্তু কোরোনা আক্রমণ যেন সেই চেনা শহরকেও অচেনা করে তুলেছে ৷ রাস্তাঘাট ফাঁকা, সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশ ৷ বিমানবন্দরের পরিবেশও এখন আগেকার থেকে অনেক বদলে গেছে ৷ আন্তঃরাজ্য বিমান পরিষেবা শুরু হতেই হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় মায়ের কাছে ফিরে গেছেন পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অর্জুন রায় ৷ সেইসব অভিজ্ঞতা ETV ভারতের সঙ্গে শেয়ার করলেন তিনি ৷

বছর সাতাশের অর্জুনের কথায়, "সত্যিই এ এক আলাদা অভিজ্ঞতা । গত তিনবছর ধরে আমি হায়দরাবাদে থাকি । পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । নিজামের শহরের সঙ্গে আমার পরিচয়, ভালোবাসা গত তিনবছর ধরে । কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সবকিছু বদলে গেল । নতুন প্রজন্মের ছেলে আমরা । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, চিন ভারত যুদ্ধ, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ,বাংলাদেশের স্বাধীনতা সবই আমাদের কাছে ইতিহাসের বিষয় । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের কারণে এমন এক যুদ্ধ শুরু হয়েছে যার অতীতের কোনও নজির নেই । এই অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর । অদৃশ্য শত্রু পুরো বিশ্বকে ঘরবন্দী করে ফেলেছে । ফলে একটা ঘরবন্দীর অস্বস্তিকর জীবন এখন সঙ্গী । যাতায়াতের মাধ্যম সবে খুলেছে । পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ট্রেন দেওয়া হয়েছে । কাতারে কাতারে মানুষ তাদের ঘরে ফিরছেন । আমিও ঘরে ফিরলাম । তবে বিমানে । এত পচিশ মে থেকে অন্তরাজ্য বিমান পরিষেবা শুরু হয়েছে । সুযোগ মিলতেই হাতছাড়া করতে চাইনি । ফলে নির্দিষ্ট বিমানে কলকাতার পথে বেরিয়ে পড়েছিলাম । আগেই বলেছি হায়দরাবাদ শহরের একটা স্পন্দন রয়েছে । কিন্তু আমি যেখানে থাকি সেই গোপানাপল্লী থেকে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার সময় চারিদিকে পথঘাট দেখে বিস্মিত হয়েছি । কে যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে ।"

অর্জুন রায়

কোভিড-19 পরবর্তী বিমানবন্দরের বদলে যাওয়া পরিবেশ সম্পর্কে অর্জুন রায় জানিয়েছেন, "বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নিয়মমাফিক পরীক্ষা তো রুটিন ব্যাপার । যেহেতু আমি বিমানেই কলকাতা থেকে যাতায়াত করি তাই এই নিয়মমাফিক কাজকর্ম চোখ সওয়া । কিন্তু এখন তো কোভিড-19 পরবর্তী দুনিয়া । ফলে শুধু লাগেজ চেক করিয়েই কাজ শেষ হচ্ছে না । সময় ধরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খুঁটিনাটি চলছে । থার্মাল স্ক্যানিংয়ে দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা ছাড়াও আরও এক দফা পরীক্ষা এবং খাতায় নথিভুক্ত করার পরেই বিমানে ওঠার অনুমতি মিলছে । বিমানবন্দরেও সামাজিক দূরত্ব মেনে বসার ব্যবস্থা হয়েছে । বিমানে উঠেও কার্যত একই রকম বিধিনিষেধ । বিমান সেবিকারা প্রতিটি পদক্ষেপে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নিয়মবিধি মনে করিয়ে দিচ্ছেন । প্রথম দিকে অস্বস্তিকর মনে হলেও সকলে তা মেনে চলছেন । দমদম বিমানবন্দরে পা দেওয়ার পরে আরও একদফা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে । তারপরই মিলছে বাইরে আসার অনুমতি ।"

আপাতত বেলঘড়িয়ার নিজের বাড়িতে রয়েছেন অর্জুন ৷ বলেছেন, "মা, দিদিকে নিয়ে আমার জগত । দিদি বিদেশে গবেষণা করে । কিন্তু এই কোরোনা ভাইরাস জাঁকিয়ে বসতেই ওখান থেকে নির্দেশ দিয়ে চলেছে । চিরকালই ওর আমার খুনসুটি চলে । এখন অবশ্য প্রবাস থেকে দিদির পাঠানো সব নির্দেশ মেনে চলছি । মা তো সবসময় চিন্তায় । ক্যাবে করে নামার পর মায়ের হাসিমুখ দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলাম । আপাতত বাড়িতেই কোয়ারানটিনে রয়েছি । এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এটাই একমাত্র পথ । তাই মনে রাখবেন কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিততে হলে সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি । আপাতত কোয়ারানটিনে থেকে অফিসের কাজ করছি । তিনমাস পরে বাড়িতে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে ভালোই লাগছে । তাই সবাইকে অনুরোধ, বাড়িতে থাকুন । সুস্থ থাকুন ।"

কলকাতা, 4 জুন: প্রাণের শহর ছেড়ে চাকরি সূত্রে গত তিন বছর ধরে নিজামের শহরের বাসিন্দা হয়ে গেছেন ৷ এখানকার বিশাল বিশাল মল, ঐতিহাসিক স্থান, বিরিয়ানি আর ভিন্ন ভাষার কোলাহলে মানিয়ে নিতে সময় লাগেনি ৷ কলকাতার মতোই ধীরে ধীরে চেনা শহরে পরিণত হয়ে গেছিল হায়দরাবাদও ৷ কিন্তু কোরোনা আক্রমণ যেন সেই চেনা শহরকেও অচেনা করে তুলেছে ৷ রাস্তাঘাট ফাঁকা, সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত পরিবেশ ৷ বিমানবন্দরের পরিবেশও এখন আগেকার থেকে অনেক বদলে গেছে ৷ আন্তঃরাজ্য বিমান পরিষেবা শুরু হতেই হায়দরাবাদ থেকে কলকাতায় মায়ের কাছে ফিরে গেছেন পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অর্জুন রায় ৷ সেইসব অভিজ্ঞতা ETV ভারতের সঙ্গে শেয়ার করলেন তিনি ৷

বছর সাতাশের অর্জুনের কথায়, "সত্যিই এ এক আলাদা অভিজ্ঞতা । গত তিনবছর ধরে আমি হায়দরাবাদে থাকি । পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার । নিজামের শহরের সঙ্গে আমার পরিচয়, ভালোবাসা গত তিনবছর ধরে । কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সবকিছু বদলে গেল । নতুন প্রজন্মের ছেলে আমরা । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, চিন ভারত যুদ্ধ, ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ,বাংলাদেশের স্বাধীনতা সবই আমাদের কাছে ইতিহাসের বিষয় । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের কারণে এমন এক যুদ্ধ শুরু হয়েছে যার অতীতের কোনও নজির নেই । এই অভিজ্ঞতা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে ভয়ংকর । অদৃশ্য শত্রু পুরো বিশ্বকে ঘরবন্দী করে ফেলেছে । ফলে একটা ঘরবন্দীর অস্বস্তিকর জীবন এখন সঙ্গী । যাতায়াতের মাধ্যম সবে খুলেছে । পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ট্রেন দেওয়া হয়েছে । কাতারে কাতারে মানুষ তাদের ঘরে ফিরছেন । আমিও ঘরে ফিরলাম । তবে বিমানে । এত পচিশ মে থেকে অন্তরাজ্য বিমান পরিষেবা শুরু হয়েছে । সুযোগ মিলতেই হাতছাড়া করতে চাইনি । ফলে নির্দিষ্ট বিমানে কলকাতার পথে বেরিয়ে পড়েছিলাম । আগেই বলেছি হায়দরাবাদ শহরের একটা স্পন্দন রয়েছে । কিন্তু আমি যেখানে থাকি সেই গোপানাপল্লী থেকে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার সময় চারিদিকে পথঘাট দেখে বিস্মিত হয়েছি । কে যেন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে ।"

অর্জুন রায়

কোভিড-19 পরবর্তী বিমানবন্দরের বদলে যাওয়া পরিবেশ সম্পর্কে অর্জুন রায় জানিয়েছেন, "বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নিয়মমাফিক পরীক্ষা তো রুটিন ব্যাপার । যেহেতু আমি বিমানেই কলকাতা থেকে যাতায়াত করি তাই এই নিয়মমাফিক কাজকর্ম চোখ সওয়া । কিন্তু এখন তো কোভিড-19 পরবর্তী দুনিয়া । ফলে শুধু লাগেজ চেক করিয়েই কাজ শেষ হচ্ছে না । সময় ধরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খুঁটিনাটি চলছে । থার্মাল স্ক্যানিংয়ে দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা ছাড়াও আরও এক দফা পরীক্ষা এবং খাতায় নথিভুক্ত করার পরেই বিমানে ওঠার অনুমতি মিলছে । বিমানবন্দরেও সামাজিক দূরত্ব মেনে বসার ব্যবস্থা হয়েছে । বিমানে উঠেও কার্যত একই রকম বিধিনিষেধ । বিমান সেবিকারা প্রতিটি পদক্ষেপে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নিয়মবিধি মনে করিয়ে দিচ্ছেন । প্রথম দিকে অস্বস্তিকর মনে হলেও সকলে তা মেনে চলছেন । দমদম বিমানবন্দরে পা দেওয়ার পরে আরও একদফা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে । তারপরই মিলছে বাইরে আসার অনুমতি ।"

আপাতত বেলঘড়িয়ার নিজের বাড়িতে রয়েছেন অর্জুন ৷ বলেছেন, "মা, দিদিকে নিয়ে আমার জগত । দিদি বিদেশে গবেষণা করে । কিন্তু এই কোরোনা ভাইরাস জাঁকিয়ে বসতেই ওখান থেকে নির্দেশ দিয়ে চলেছে । চিরকালই ওর আমার খুনসুটি চলে । এখন অবশ্য প্রবাস থেকে দিদির পাঠানো সব নির্দেশ মেনে চলছি । মা তো সবসময় চিন্তায় । ক্যাবে করে নামার পর মায়ের হাসিমুখ দেখে আশ্বস্ত হয়েছিলাম । আপাতত বাড়িতেই কোয়ারানটিনে রয়েছি । এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এটাই একমাত্র পথ । তাই মনে রাখবেন কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে জিততে হলে সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি । আপাতত কোয়ারানটিনে থেকে অফিসের কাজ করছি । তিনমাস পরে বাড়িতে মায়ের হাতের রান্না খেয়ে ভালোই লাগছে । তাই সবাইকে অনুরোধ, বাড়িতে থাকুন । সুস্থ থাকুন ।"

Last Updated : Jun 4, 2020, 2:27 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.