ETV Bharat / state

ভিত্তি প্রস্তরের আমন্ত্রণে করসেবক ভাইদের দুঃখ ভুলছেন দিদি

author img

By

Published : Aug 4, 2020, 3:49 PM IST

Updated : Aug 4, 2020, 4:17 PM IST

1990 সালের 2 নভেম্বর পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান বড়বাজারের দুই করসেবক ভাই রামকুমার কোঠারি ও শরদকুমার কোঠারি । 30 বছর পর রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করলেন দিদি পূর্ণিমা কোঠারি ।

পূর্ণিমা কোঠারি
পূর্ণিমা কোঠারি

490 বছরের বিতর্কের অবসান ঘটেছে গতবছরই । 9 নভেম্বরের সেই ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবে । আর বিকল্প হিসেবে মসজিদ তৈরির জন্য পাঁচ একর জমি পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড । তারপর কেটে গেছে আটমাস । কোরোনার জেরে বদলেছে সামগ্রিক পরিস্থিতি । তবে অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণে কোথাও যেন এতটুকু খামতি নেই । আগামীকাল নির্ধারিত সময়ে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী । ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । কিন্তু, এই সমস্ত কিছুর পিছনে এক দীর্ঘ ইতিহাস নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে । সেই ইতিহাস বড়বাজার চত্বরের দুই ভাইয়ের গল্প বলে । গল্প অযোধ্যার শহিদ গলির । গল্প রামকুমার কোঠারি ও শরদকুমার কোঠারির ।

1990 সালের 2 নভেম্বর । কেটে গেছে 30 বছর । কিন্তু, এখনও কিছুই ভুলতে পারেননি রামকুমার ও শরদকুমারের দিদি পূর্ণিমা কোঠারি । আজ তিনি কিছুটা হলেও স্বস্তিতে । তাঁর কথায়, ''আমার ভাইদের বলিদান এবার সার্থক হতে চলেছে । ভাইরা যে উদ্দেশ্যে প্রাণ দিয়েছিল, এবার তা সফল হবে ।'' ভাইদের কথা বলতে বলতে নব্বই সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফিরে যান তিনি ।

কী হয়েছিল সেদিন ?

1990 সালের সেপ্টেম্বর মাস । রামমন্দির আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ । গুজরাতের সোমনাথ থেকে 15 সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল । বিশ্ব হিন্দু পরিষেদের সেই যাত্রাকে সমর্থন করেছিলেন BJP-র অন্যতম বড় নেতা লালকৃষ্ণ আডবানি । সেই আন্দোলনে যোগ দিতেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন বড়বাজারের কোঠারি পরিবারের দুই সন্তান । বড় ছেলে রামকুমার কোঠারি (22) ও ছোটো ছেলে শরদকুমার কোঠারি (20) । দুই ছেলের এই সিদ্ধান্তে খানিকটা চমকে যান বাবা হীরালাল কোঠারি । কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মেয়ে পূর্ণিমার বিয়ে হওয়ার কথা । কিন্তু, ছেলেদের জেদের কাছে হার মানতে হয় হীরালাল কোঠারিকে । 22 অক্টোবর অযোধ্যার ট্রেনে ওঠে দুই ভাই । করসেবকদের একাংশের তরফে জানা যায়, উত্তরপ্রদেশ সরকার তখন অযোধ্যায় তাঁদের ঢুকতে না দেওয়ার জন্য সড়ক এবং ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রিত করেছিল । পরে অন্য ট্রেন ধরে বেনারসে পৌঁছান করসেবকরা । সেখান থেকে কষ্ট করে অবশেষে 30 অক্টোবর অযোধ্যা পৌঁছান রামকুমার ও শরদকুমার । সেদিন কার্তিক পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে হনুমানগড়ি নামে এক জায়গায় জড়ো হন করসেবকরা । পরে সেখান থেকে রামমন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয় । নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কোঠারি ভাইরা । সেই যাত্রায় বাধা দিয়েছিল পুলিশ । দিদি পূর্ণিমা কোঠারির কথায়, 2 নভেম্বরের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল 30 অক্টোবরই ।

30 বছর আগে ভাইদের হারিয়েছিলেন দিদি পূর্ণিমা কোঠারি

পূর্ণিমা কোঠারি বলেন, "30 অক্টোবর আমার ভাইরা মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছিল । সেদিনই পুলিশ ওদের টার্গেট করে নিয়েছিল । এরপর 2 নভেম্বর হনুমান গড়ির কাছাকাছি একটি গলিতে বসে আমার দুই ভাই রামগান করছিল । পুলিশ ওদের এলাকা ছাড়তে বলে । আর তাতেই সমস্যা তৈরি হয় । এরপর লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ । এলোপাথাড়ি গুলি চালাতেও শুরু করে । প্রাণ বাঁচাতে অন্যদের সঙ্গে আমার ভাইরাও নিকটবর্তী একটি মন্দিরে গিয়ে আশ্রয় নেয় । তখনই পুলিশকর্মীরা তাদের সঙ্গে ছলনা করে । বাইরে থেকে জল চাই জল চাই বলে ডাক দিতে থাকে এক পুলিশকর্মী । আমার ছোটোভাই ভেবেছিল, হয়ত কোনও করসেবক হবে । বিপদে পড়েছে । তাই তাকে সাহায্য করার জন্য দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে । ভাই দরজা খুলে বাইরে আসতেই পুলিশ টেনে বের করে ওকে । তারপর গুলি করে । গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ও । পুলিশ সেই অবস্থাতেই টানতে থাকে তাকে । সেইসময় বড় ভাইও বাইরে বেরিয়ে আসে । তখন তার উপরও গুলি চালায় পুলিশ । সেদিনের ঘটনায় 16 করসেবকের মৃত্যু হয় । আমার দুই ভাইও ছেড়ে চলে যায় আমাদের ।"

আরও পড়ুন : রাম জন্মভূমি আন্দোলনের পুরোধা যাঁরা

হনুমান গড়ির একটি সরু গলি থেকে উদ্ধার হয় শরদ ও রামের দেহ । উত্তরপ্রদেশের এই গলি এখনও শহিদ গলি নামে পরিচিত । ভাইদের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনের কথা বলতে গিয়ে পূর্ণিমা জানান, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে এবং রামমন্দির ট্রাস্টের সম্পদ রায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁকে । সব ঠিক থাকলে রামমন্দিরের ভিত্তি প্রস্তরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিনি । বলেন, "আজ সত্যি ভালো লাগছে । আমি আমার ভাইদের প্রতিনিধি হয়ে অযোধ্যায় যাব ।"

আরও পড়ুন : রাম মন্দির নির্মাণের সূচনা হবে 5টি রুপোর ইট, ফল্গুর বালিতে

490 বছরের বিতর্কের অবসান ঘটেছে গতবছরই । 9 নভেম্বরের সেই ঐতিহাসিক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবে । আর বিকল্প হিসেবে মসজিদ তৈরির জন্য পাঁচ একর জমি পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড । তারপর কেটে গেছে আটমাস । কোরোনার জেরে বদলেছে সামগ্রিক পরিস্থিতি । তবে অযোধ্যার রামমন্দির নির্মাণে কোথাও যেন এতটুকু খামতি নেই । আগামীকাল নির্ধারিত সময়ে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী । ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । কিন্তু, এই সমস্ত কিছুর পিছনে এক দীর্ঘ ইতিহাস নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে । সেই ইতিহাস বড়বাজার চত্বরের দুই ভাইয়ের গল্প বলে । গল্প অযোধ্যার শহিদ গলির । গল্প রামকুমার কোঠারি ও শরদকুমার কোঠারির ।

1990 সালের 2 নভেম্বর । কেটে গেছে 30 বছর । কিন্তু, এখনও কিছুই ভুলতে পারেননি রামকুমার ও শরদকুমারের দিদি পূর্ণিমা কোঠারি । আজ তিনি কিছুটা হলেও স্বস্তিতে । তাঁর কথায়, ''আমার ভাইদের বলিদান এবার সার্থক হতে চলেছে । ভাইরা যে উদ্দেশ্যে প্রাণ দিয়েছিল, এবার তা সফল হবে ।'' ভাইদের কথা বলতে বলতে নব্বই সালের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফিরে যান তিনি ।

কী হয়েছিল সেদিন ?

1990 সালের সেপ্টেম্বর মাস । রামমন্দির আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ । গুজরাতের সোমনাথ থেকে 15 সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল । বিশ্ব হিন্দু পরিষেদের সেই যাত্রাকে সমর্থন করেছিলেন BJP-র অন্যতম বড় নেতা লালকৃষ্ণ আডবানি । সেই আন্দোলনে যোগ দিতেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন বড়বাজারের কোঠারি পরিবারের দুই সন্তান । বড় ছেলে রামকুমার কোঠারি (22) ও ছোটো ছেলে শরদকুমার কোঠারি (20) । দুই ছেলের এই সিদ্ধান্তে খানিকটা চমকে যান বাবা হীরালাল কোঠারি । কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মেয়ে পূর্ণিমার বিয়ে হওয়ার কথা । কিন্তু, ছেলেদের জেদের কাছে হার মানতে হয় হীরালাল কোঠারিকে । 22 অক্টোবর অযোধ্যার ট্রেনে ওঠে দুই ভাই । করসেবকদের একাংশের তরফে জানা যায়, উত্তরপ্রদেশ সরকার তখন অযোধ্যায় তাঁদের ঢুকতে না দেওয়ার জন্য সড়ক এবং ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রিত করেছিল । পরে অন্য ট্রেন ধরে বেনারসে পৌঁছান করসেবকরা । সেখান থেকে কষ্ট করে অবশেষে 30 অক্টোবর অযোধ্যা পৌঁছান রামকুমার ও শরদকুমার । সেদিন কার্তিক পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে হনুমানগড়ি নামে এক জায়গায় জড়ো হন করসেবকরা । পরে সেখান থেকে রামমন্দিরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হয় । নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কোঠারি ভাইরা । সেই যাত্রায় বাধা দিয়েছিল পুলিশ । দিদি পূর্ণিমা কোঠারির কথায়, 2 নভেম্বরের ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল 30 অক্টোবরই ।

30 বছর আগে ভাইদের হারিয়েছিলেন দিদি পূর্ণিমা কোঠারি

পূর্ণিমা কোঠারি বলেন, "30 অক্টোবর আমার ভাইরা মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে গেরুয়া পতাকা উড়িয়েছিল । সেদিনই পুলিশ ওদের টার্গেট করে নিয়েছিল । এরপর 2 নভেম্বর হনুমান গড়ির কাছাকাছি একটি গলিতে বসে আমার দুই ভাই রামগান করছিল । পুলিশ ওদের এলাকা ছাড়তে বলে । আর তাতেই সমস্যা তৈরি হয় । এরপর লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ । এলোপাথাড়ি গুলি চালাতেও শুরু করে । প্রাণ বাঁচাতে অন্যদের সঙ্গে আমার ভাইরাও নিকটবর্তী একটি মন্দিরে গিয়ে আশ্রয় নেয় । তখনই পুলিশকর্মীরা তাদের সঙ্গে ছলনা করে । বাইরে থেকে জল চাই জল চাই বলে ডাক দিতে থাকে এক পুলিশকর্মী । আমার ছোটোভাই ভেবেছিল, হয়ত কোনও করসেবক হবে । বিপদে পড়েছে । তাই তাকে সাহায্য করার জন্য দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসে । ভাই দরজা খুলে বাইরে আসতেই পুলিশ টেনে বের করে ওকে । তারপর গুলি করে । গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ও । পুলিশ সেই অবস্থাতেই টানতে থাকে তাকে । সেইসময় বড় ভাইও বাইরে বেরিয়ে আসে । তখন তার উপরও গুলি চালায় পুলিশ । সেদিনের ঘটনায় 16 করসেবকের মৃত্যু হয় । আমার দুই ভাইও ছেড়ে চলে যায় আমাদের ।"

আরও পড়ুন : রাম জন্মভূমি আন্দোলনের পুরোধা যাঁরা

হনুমান গড়ির একটি সরু গলি থেকে উদ্ধার হয় শরদ ও রামের দেহ । উত্তরপ্রদেশের এই গলি এখনও শহিদ গলি নামে পরিচিত । ভাইদের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে সেদিনের কথা বলতে গিয়ে পূর্ণিমা জানান, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পক্ষ থেকে এবং রামমন্দির ট্রাস্টের সম্পদ রায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁকে । সব ঠিক থাকলে রামমন্দিরের ভিত্তি প্রস্তরের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন তিনি । বলেন, "আজ সত্যি ভালো লাগছে । আমি আমার ভাইদের প্রতিনিধি হয়ে অযোধ্যায় যাব ।"

আরও পড়ুন : রাম মন্দির নির্মাণের সূচনা হবে 5টি রুপোর ইট, ফল্গুর বালিতে

Last Updated : Aug 4, 2020, 4:17 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.