কলকাতা, 30 অগস্ট: জাতীয় শিক্ষা নীতির বিরূদ্ধে প্রথম থেকেই বিরোধিতা করছে বামেরা । তাদের মধ্যে অন্যতম বড় ছাত্র সংগঠন এসএফআই ৷ এই নীতি বাতিলের দাবিতে পূর্ব ভারত জুড়ে 'জাঠা' শুরু করেছে । আগামী দিনে পশ্চিম ভারত অভিযান করবে । এর মধ্যে এই জাতীয় শিক্ষা নীতির বিকল্প শিক্ষা নীতি কী হতে পারে, তার খসড়া প্রকাশ করল স্টুডেন্টস' ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (Students' Federation of India, SFI) । শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, কুমার রানা, নীলোৎপল বসু, সিদ্ধার্থ দত্তের মতো বিশেষজ্ঞরা বিকল্পের সন্ধান দিয়েছেন । এই খসড়া 'ছাত্র সংগ্রাম' পত্রিকার বিশেষ বুলেটিন 'বিকল্পের অভিমুখ...' শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে । এসএফআই রাজ্য কমিটির সভাপতি প্রতিকূর রহমান ও সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য সেই বুলেটিন আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেন (SFI publishes supplementary Education Policy criticizing Education Policy 2020) ।
কী বলা হয়েছে এই বুলেটিনে ?
প্রথম অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে জাতীয় শিক্ষানীতির একটি খসড়া 2019-তে রয়্যাল সাইজের 470 পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয় । সেই প্রতিবেদনের ভাষা ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে ভরা । 2020-র আসল শিক্ষানীতিতে ওই উচ্ছ্বাস কমে গিয়ে পৃষ্ঠা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাকুল্যে 66-তে । শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার লিখেছেন, "অঙ্গনওয়াড়ি থেকে ক্লাস টু, তারপর থ্রি থেকে ফাইভ, তারপর সিক্স থেকে এইট, তারপর একটা নাইন থেকে বারো । মাধ্যমিক পরীক্ষা বলে কিছুই থাকবে না নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে । অর্থাৎ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট নিয়ে যে কিছু চাকরি পাওয়া যেত, তা বন্ধ হয়ে যাবে । পরবর্তীতে বোধহয় দ্বাদশ শ্রেণির সার্টিফিকেট নিয়ে সেই সব চাকরির দরখাস্ত করতে হবে । মানে প্রাথমিক বেকারত্বের মেয়াদ 2 বছর বাড়ানো হল । তারপর উচ্চশিক্ষা তারও পুনর্গঠন হয়েছে ।"
নতুন শিক্ষানীতির 'মাল্টিলিঙ্গুয়ালিসম অ্যান্ড দ্য পাওয়ার অফ ল্যাংগুয়েজেস চ্যাপ্টার' প্রসঙ্গে অধ্যাপক সরকার ভাষাগত শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন । তাঁর মতে, যে ভাষাই হোক না কেন, যাকে বাড়ির ভাষা বলা হয়, ইংরেজিতে 'হোম ল্যাঙ্গুয়েজ', তা নিহাতই মুখের ভাষা । তাতে লেখাপড়া হয় না । লেখাপড়া হয় একটা মান্য বা স্ট্যান্ডার্ড ভাষায় । তাই তিনি 'শি-মাতৃভাষা' আর ইংরেজি এই দুটো ভাষার পাশাপাশি বিকল্প সংস্কৃতি, আরবি, ফারসি ভাষা শিক্ষার উপরে জোর দিয়েছেন । ইংরেজির ক্ষেত্রে, ইংরেজি সাহিত্য নয়, ভাষাটিকে উপযুক্ত গুরুত্ব দিয়ে শেখাতে 12-13 বছরই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন । প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শুধু শি মাতৃভাষায় সব বিষয়ে শিক্ষার সুযোগের কথা বলেছেন । আর বিদেশি ভাষা স্কুল স্তরের পরে শুরু হোক । সরকার তার সুযোগ তৈরি করে দিক, আবেদন প্রবীণ শিক্ষাবিদের ।
আরও পড়ুন: বিভিন্ন ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ পেশাদারদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ানোর সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইউজিসির
কুমার রানা লিখছেন, "যে ব্যবস্থায় সমান অধিকার নেই, তা আর যাই হোক কিছুতেই শিক্ষা নয় ।" তাঁর অভিযোগ, নতুন শিক্ষানীতির সারা দলিলে কোথাও বলা নেই, এটি কীভাবে তৈরি হল ? কার কার সঙ্গে কোন প্রক্রিয়ায় আলোচনা করে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হল ? এই শিক্ষানীতিতে প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যকে দিশা মানা হয়েছে ৷ এই ঐতিহ্যে বুদ্ধদেবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ৷ যিনি বারবার মানুষের পুত্র এবং কন্যাদের জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার কথা বলেছেন ৷ অন্যদেক আছেন দ্রোণাচার্য । যাঁর রাজসেবাবৃত্তি, একলব্যের বৃদ্ধাঙ্গুল কেটে নিয়ে তাঁর অর্জিত বিদ্যাহরণ করা লেখা আছে ৷ আবার আছেন রাম, বেদপাঠের অপরাধে যিনি শম্ভুকের মস্তক ছেদন করেন । আমরা কোন ঐতিহ্যকে মানব ?"
সিদ্ধার্থ দত্ত লিখেছেন, "আমরা চাই ইউজিসি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থেকে শিক্ষাবিদদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে একটি স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে কাজ করুক । সেটা অবশ্যই হতে হবে উচ্চশিক্ষার প্রসার উন্নয়ন এবং গুণমান বজায় রাখার লক্ষ্যে । কারণ, নয়া শিক্ষানীতিতে দেশের মঙ্গলের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণাকে উৎসাহ দেওয়ার কথা বলা হলেও গবেষণার বিষয় নির্বাচন এবং গবেষণার অনুদান দেওয়ার জন্য মাথার উপরে বসানো হয়েছে জাতীয় গবেষণা ফাউন্ডেশনকে । এরাই নির্ধারণ করবে কোন গবেষণা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক আর কোনটি দেশের স্বার্থ-বিরোধী । এটাই আশঙ্কার । এর ফলে আঘাত আসবে সরকারি ও সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপর ৷ সবচেয়ে বেশি জখম করা হবে গবেষকদের স্বাধীনতা এবং মুক্ত চিন্তা, ক্ষতিগ্রস্ত হবে মৌলিক গবেষণা, শিক্ষার উন্নতির পরিপন্থী এই চিন্তাভাবনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না ।"
আরও পড়ুন: জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে এসএফআইয়ের জাঠা 'মার্চ ফর এডুকেশন'