কলকাতা, 1 সেপ্টেম্বর: করোনার লকডাউনের কারণে স্কুল-কলেজে তালা পড়ে গিয়েছিল । ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল পড়ুয়া । তাই দিনে দিনে আসক্তি বেড়েছে মোবাইলে । এভাবে কখন যে মানসিক রোগ বাসা বেঁধেছে মনের ভিতর, তা জানতে পারেনি অনেকেই। বাধ্য হয়ে অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন । এমনকী মেডিক্যাল কলেজগুলি থেকেও মাঝেমধ্যেই পড়ুয়াদের এমন পরিণতির খবর শিরোনামে এসেছে ৷ এধরনের ঘটনা এড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিল চিকিৎসক বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই কলকাতা মেডিক্যাল আঞ্চলিক কমিটি (SFI Medical College Association steps to counter depression with free counselling) ।
রাজ্যজুড়ে বিনামূল্যে মানসিক রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । কিউআর কোড স্ক্যান করে গুগল শিট ফিল আপ করতে হবে ৷ চিকিৎসক পড়ুয়ারা নিজেদের মানসিক অবস্থা, সমস্যার কথা জানাবে সেখানে । তারপর 24 ঘণ্টার মধ্যে সেই পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে । চিকিৎসকরা নির্দিষ্ট রোগীর কাছে পৌঁছবেন । এছাড়া মোবাইল কল, হোয়্যাটসঅ্যাপ, মেসেনজার কিংবা হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজে রোগ নিরাময়ের যাবতীয় তথ্য থেকে শুরু করে পরামর্শ দেওয়া হবে । এক্ষেত্রে ইচ্ছা না হলে নাম-পরিচয় না-জানানোর ব্যবস্থাও থাকছে । ফলে, নির্দ্বিধায় যে কেউ মনের কথা জানাতে পারবেন ।
মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই চিকিৎসা ব্যবস্থার সূচনা হয় মৌলালি যুব কেন্দ্রে । কলকাতার একাধিক নামী সরকারি হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন । পরে সর্বসাধারণের জন্য যাতে বিনামূল্যে এই ব্যবস্থা চালু করা হয় সেই আবেদনও জানিয়েছেন ।
আরও পড়ুন: অটিস্টিক মায়েদের শিশুরা মানসিক চাপে ভোগে, কী বলছে গবেষনা
এসএফআই কলকাতা মেডিক্যাল আঞ্চলিক কমিটির সেক্রেটারি অনুরণ পাল বলেন, "যে কাজটা সরকারের করা দরকার, সেই কাজটা আমরা নিজেদের উদ্যোগে করছি । পূর্ব ভারত জুড়ে জাঠা চলছে ৷ তার অঙ্গ হিসাবে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি ।" রাজ্যের সমস্ত চিকিৎসক পড়ুয়াদের বিনামূল্যে অনলাইন চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
মৌলালির স্টুডেন্টস হেলথ হোমে প্রতি মঙ্গলবার মনরোগ চিকিৎসক অভিজিৎ চক্রবর্তী থাকবেন । তিনি বলেন, "অনলাইনে যাঁরা চিকিৎসা নেবেন না, তাঁরা মৌলালিতে স্টুডেন্টস হেলথ হোমে এলে আমি বা আমাদের সহকর্মীরা বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পরিষেবা দেব ।"
ছাত্র সংগঠনের দাবি, রাজ্যের একাধিক স্কুল - কলেজের শিক্ষার মান পড়েছে । তেমনই পড়ুয়াদের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক রোগ দেখা দিচ্ছে । সে নিয়ে সরকার বা প্রশাসনের কোনও খোঁজ নেই । গত এক-দেড় বছরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস-সহ একাধিক মেডিক্যাল কলেজ, সাধারণ কলেজ, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু পড়ুয়ারা আত্মহত্যা করছেন । হয়ত তাঁদের বক্তব্য শোনার কেউ ছিল না ৷ তাঁরা কাউকে বলতে পারেননি বলেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন । সময় যত যাচ্ছে, এই সংখ্যাটা বাড়ছে । এই প্রবণতা কাটাতে রাজ্যের প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসা কিংবা কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।
ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সোনালী চট্টোপাধ্যায় বলেন, "রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে একটা বৈষম্যমূলক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ৷ মনে এর খারাপ প্রভাব পড়ছে ৷" বাম ছাত্র সংগঠনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন "জীবনে পরমুহূর্তে কী হবে, তা আমাদের জানা নেই ৷ তাই সাহসটাই জীবনের অবলম্বন ৷ সাহস না থাকলে এগোব কী করে ? সেই জন্যেই এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: দিতে হবে ছুটি, ডাক্তারি পড়ুয়াদের অবসাদ ঘোচাতে উদ্যোগী মেডিক্যাল কমিশন