কলকাতা, 6 নভেম্বর: কয়েকমাস পরই লোকসভা নির্বাচন ৷ সেই ভোটে কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারকে হারাতে কোমর বেঁধেছে বিরোধীরা ৷ কর্মী-সমর্থকদের মনোবল বৃদ্ধিতে এখন থেকেই চব্বিশে নতুন সরকারের স্লোগান শোনা যাচ্ছে বিজেপি বিরোধী নেতাদের মুখে ৷ কিন্তু একই কথা উঠে এল দুর্গাপুজোর টিজারে ৷ যা সামনে আসার পর রীতিমতো জল্পনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে ৷
হাতিবাগান নবীনপল্লি সম্প্রতি আগামী বছরের পুজো নিয়ে যে টিজার প্রকাশ করেছে, সেখানেই এই বিষয়টি উঠে এসেছে ৷ তাদের টিজারে লেখা লাইন - ‘২০২৪ সালে নতুন সরকার !’ পরের লাইনে তারা লিখেছে, ‘এই চিহ্নে ভোট দিন ৷’ আর চিহ্ন হিসেবে তাদের পুজো কমিটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৷
উল্লেখ্য, থিম এখন দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে গিয়েছে ৷ যাদের থিম যত ভালো, যত অভিনব, তাদের মণ্ডপে ভিড়ও ততই বেশি ৷ তাই একটা পুজো মিটতে না মিটতেই পরবর্তী পুজোর আয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয় পুজো কমিটিগুলিকে ৷ সারা বছরই আগ্রহ তৈরি করতে হয় সাধারণ মানুষের জন্য ৷ তার অন্যতম অঙ্গ হল টিজার ৷ আর হাতিবাগান নবীনপল্লির তেমনই একটি টিজার ঘিরে এখনই আগ্রহের পারদ চড়তে শুরু করেছে ৷
প্রশ্ন উঠছে, এর নেপথ্যে কি কোনও রাজনৈতিক যোগ রয়েছে ? নাকি পরের বছর ভোট আছে ভেবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই টিজার ? নাকি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ ? স্বাভাবিকভাবেই এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ পুজো কমিটির কেউই ৷
তবে হাতিবাগান নবীনপল্লির উপদেষ্টা দীপ্ত ঘোষ বলেন, ‘‘এখন সকলেই চায় ভালো শিল্পীকে দিয়ে করাতে কাজ । কিন্তু শিল্পী সংখ্যা সীমিত তাই আগে ভাগেই কথা বলে ফেলতে হয় । এখন আর নির্দিষ্ট কয়েক মাস নয়, সারা বছর পুজোকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড হয়ে থাকে । টিজার দেওয়া হয় মানুষকে আকর্ষণ করতে । যত ভালো হবে, তত মানুষের মনে দাগ কাটবে । এখন ব্যানার-হোর্ডিং যুগ চলে গিয়েছে । এখন সামাজিক মাধ্যম খুব শক্তিশালী । সেখানে টিজার দিলে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে । টিজার দেখেই মানুষ তাঁর পছন্দের পুজো নিয়ে ভাবেন ।’’
শুধু এই পুজো কমিটিই নয়, আরও অনেকেই ইতিমধ্যে টিজার প্রকাশ করে ফেলেছে পরবর্তী বছরের দুর্গাপুজোর জন্য ৷ সেখানে কেউ লিখেছে, 24-এর নির্মাণ সঙ্গে এবার অনির্বাণ । আরেক কমিটি লিখেছে, নতুন রূপে তরুণ সাজে । আর শুধু টিজারেই শেষ নয়, হাতিবাগান নবীনপল্লি-সহ অনেকে ইতিমধ্যে পরের বছরের থিম আর সেই থিমের রূপকার হবেন কোন শিল্পী, সেটাই ঠিক করে ফেলেছেন ৷
এই পুরো বিষয় ইতিবাচক ভাবেই নিচ্ছেন শিল্পী মহল । আহেরিটোলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতির শিল্পী অনির্বাণের কথায়, ‘‘এখন কেউ আর মাসের পর মাস ফেলে রাখে না । পুজো চলাকালীন ক’টা দিন থামে । তারপরই শিল্পীদের সঙ্গে বিভিন্ন ক্লাব যোগাযোগ শুরু করে । প্রতিমা জলে পড়লেই শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ক্লাব সংগঠকরা । চূড়ান্ত করে ফেলেন আগামী বছরের পরিকল্পনা । এতে উভয়পক্ষের সুবিধা । যেমন শিল্পী জায়গা দেখে বুঝে হতে সময় নিয়ে কাজ এগোতে পারেন ৷ পুজোর মুখে তাড়াহুড়ো থাকে না ৷ একই ভাবে ক্লাবের কাছেও অর্থ জোগাড়ের সময় মেলে ৷ তারা ধাপে ধাপে গোটা খরচটা করতে পারেন ।’’
কাশী বোস লেন দুর্গাপুজো সমিতির অন্যতম সংগঠক সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘আমরা যারা থিম পুজো করি, এটা আমাদের কাছে একটা মজার আনন্দের । থিম পুজোর সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিল্পী বাড়ছে না । তাই বড় কমিটি বা থিমের লড়াইয়ে থাকা কমিটিগুলো চায় শিল্পীদের সবার আগে নিজেদের আয়ত্তে করার । তাই ভালো শিল্পী বুকিংয়ের লড়াই শুরু হয় । এখন বিজয়া থেকেই এই কাজগুলো সেরে ফেলা হয় ।’’
আরও পড়ুন: খড়াই ঘাসের শিল্পকর্মে পুজোর থিম এবার 'সোনার বাংলা'