কলকাতা, 14 নভেম্বর: বয়স আড়াই, কঠিন অসুখ নিয়ে শহর কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে (Kolkata hospital) ভর্তি হয় একরত্তি কন্যা (Child in Ventilation)। তারপর থেকে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালই হয়ে গিয়েছে তার ঠিকানা । কবে সেখান থেকে ছুটি মিলবে তাও অজানা । পাঁচ বছর ধরে বিরল রোগ নিয়ে ভেন্টিলেশনে জীবন কাটছে সৌমিলী তিওয়ারির (নাম পরিবর্তিত)। শিশু দিবসের (Children's Day 2022) হাজার আলোর মাঝে রইল এক শিশুর জীবনযুদ্ধের কাহিনি (Girl on ventilation)৷
2017 সালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে ঝাড়খণ্ড থেকে কলকাতায় আসে বছর আড়াই-এর সৌমিলী । মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে । আড়াই বছর বয়স থেকে সে বড় হয়ে ওঠে ভেন্টিলেশনেই । বর্তমানে তার বয়স সাত বছর । এখনও সমস্যা কাটেনি ।
ওই হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক আইসিইউ-এর প্রধান, চিকিৎসক সৌমেন মেউরের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়েছিল সৌমিলীকে। চিকিৎসক জানান, "যখন ওই শিশুটি আসে তখন ওর প্রচণ্ড শ্বাসের সমস্যা দেখা যায় । ঠিক করে শ্বাস নিতে পাচ্ছিল না আড়াই বছরের শিশুটি । ওর শ্বাস-প্রশ্বাসের অঙ্গগুলি ঠিকমতো কাজ করছিল না । আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পাই ওর শিরদাঁড়া ও ঘাড়ের সংযোগস্থলে একটি টিউমার আছে । এই রোগটিকে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলে থাকি নিউরো সাইগ্লো মেট্রোসিস । আদপে এই রোগটি হল নার্ভের উপর টিউমার তৈরি হওয়া । মূলত আমরা এটা চামড়ার উপরে বেশি দেখতে পাই । এই শিশুটির ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে তা হল, টিউমারটির জন্য শিরদাঁড়ায় চাপ লেগেছে । ফলে ওর শিরদাঁড়াটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে । তাই টিউমারটি অপারেশন করা সত্ত্বেও লাভ হয়নি । চিরজীবনের মতো নষ্ট হয়ে গিয়েছে শিরদাঁড়া । আর সেই কারণেই ওর ব্রেনের সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলি ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারে না । তাই কাঁধ থেকে পুরো পা পর্যন্ত ওর অসাড় হয়ে রয়েছে । কোনও নড়াচড়া করতে পারে না । এমনকী সেই কারণে ওর শ্বাস নেওয়ার অঙ্গগুলিও কাজ করছে না । তাই পাঁচ বছর ধরে ওকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে । যদি কখনও ভেন্টিলেশন থেকে বের করা হয়, তবে তার দু মিনিটের মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে ওই শিশুর ।"
আরও পড়ুন: বড় স্বপ্ন দেখো, নয়া ও উন্নত ভারতের স্বপ্ন দেখো; শিশুদের বার্তা রাষ্ট্রপতির
পাঁচ বছর ধরে ভেন্টিলেশনে থাকার পরেও কতটা সুরক্ষিত ওই সাত বছরের শিশু ? এ বিষয়ে চিকিৎসক জানান, "এই রোগী খুবই বিরল, সর্বোপরি এর চিকিৎসা তেমনভাবে নেই । আরেকটা সব থেকে বড় বিষয়, এ ধরনের রোগীরা দীর্ঘদিন ভেন্টিলেশনে থাকতে থাকতে তাদের বারবার নিউমোনিয়া হতে থাকে । এর ফলে ফুসফুসটি নষ্ট হয়ে যায় । আর তখন এদের বাঁচানো সম্ভব হয় না । এই সাত বছরের শিশুটি প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে ভেন্টিলেশনেই রয়েছে । তবে ভালো বিষয় যে ওর ক্ষেত্রে এমন কোনও ইনফেকশন আমরা এখনও দেখতে পাইনি । মাঝে মধ্যেই কিছু কথাও বলে ৷ তবে বুঝতে পারে সব কথাই ।"
যদি না কোনও মিরাকল হয়, তাহলে বাকি শিশুদের মতো আর কখনওই হেসে খেলে বেড়াতে পারবে না সৌমিলী । কদিনই বা এই জীবন যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে সে ? তাও একটা প্রশ্ন ।