কলকাতা, 7 ফেব্রুয়ারি : ভাইপো ও বউদিকে খুনের অভিযোগ উঠছিল সত্য ঘোষ নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে । দীর্ঘ 12 বছর আগে সেই খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল শহরে । আজ সত্যের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করে শিয়ালদা আদালত । সঙ্গে তার স্ত্রী নন্দিতার যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছে আদালত ।
খালের মধ্যে একটা নাইলনের শপিং ব্যাগ পড়েছিল । সেখান থেকে দেখা যাচ্ছিল ছোটো দুটো পা । নজরে পড়েছিল বদ্রুদ্দিন শহিদ নামে এক ব্যক্তির । তখন সকাল 9টা 35 মিনিট । লক্ষ্য করে দেখা গেল, ব্যাগের পাশে একটা আকাশি রঙের বেডশিট । সেই ব্যক্তি খবর দেন উলটোডাঙা থানায় খবর দেন । ততক্ষণে ভিড় জমে গেছে আর জি কর হাসপাতালের কাছে চার নম্বর ক্যানাল ইস্ট রোড চত্বরে । ঘটনাস্থানে আসেন উলটোডাঙা থানার পুলিশকর্মীরা । উদ্ধার হয় এক বছর বয়সের এক শিশুর দেহ । তার মুখে গামছা গোঁজা । সে হলুদ রঙের ফুল সোয়েটার পরেছিল । তাকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন । এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে কলকাতায় । 2008 সালের 14 ডিসেম্বরের ঘটনা ।
2008 সালে সেই ঘটনার পর দিন জানা যায় সেই মৃত শিশুর পরিচয় । ইন্দ্রজিৎ সাহা ওরফে নয়ন । বেলেঘাটার বাসিন্দা । বাবা বিদ্যুৎ সাহা । মা বুলু সাহা । জানা যায় 28 বছরের বুলুও নিখোঁজ । এদিকে ওইদিনই দুপুরে হুগলির চণ্ডীতলা থানা এলাকার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে পাশে প্রিয়াঙ্কা প্লাইউড ফ্যাক্টরির সামনে উত্তরায় বস্তাবন্দী এক মহিলার দেহ উদ্ধার হয় । গলায় মোটা দাগ । গলার পাশে আঘাতের চিহ্ন । ঘটনায় চণ্ডীতলা থানা অজ্ঞাত পরিচয় আর মহিলার মৃতদেহ হিসেবে চিহ্নিত করে মামলা দায়ের করে । 16 ডিসেম্বর তাঁকে শনাক্ত করেন বিদ্যুৎ । জানা যায়, উনি বুলু সাহা । তদন্তকারীদের বুঝতে বাকি থাকেনি মা-ছেলেকে একসঙ্গেই খুন করা হয়েছে ।
চণ্ডীতলা থানার কেস উলটোডাঙা থানার সঙ্গে ট্যাগ হয়ে যায়। ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা । জানা যায়, সুরেন সরকার রোডের বাড়িতে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে একসঙ্গেই থাকতেন বিদ্যুৎ সাহা এবং সত্য সাহা । সম্পত্তির ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে দুই ভাইয়ের পরিবারের মধ্যে ব্যাপক গণ্ডগোল লেগেছিল । বিদ্যুৎবাবু স্ত্রী এবং দুই সন্তান ইন্দ্রজিৎ, শুভজিৎকে নিয়ে থাকতেন । ঘটনার একদিন পর অফিস থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় সত্য । তখনই সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের । পরে জানা যায়, সম্পত্তি দিয়ে ভাগ বাঁটোয়ারার জেরে সত্য এবং তার স্ত্রী নন্দিতা ওরফে মৌ ঘটিয়েছে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড । জেরায় সত্য স্বীকার করে দেয় পুরো ঘটনা । ওইদিন সে প্রথমে ব্যাগটি ফেলে আসে আর জি করের পাশে খালে । তার মধ্যে ছিল শিশুর মৃতদেহ । তারপর পরিবারের সকলকে দিয়ে আসে আত্মীয়র বাড়িতে । নিজে গাড়ি চালিয়ে বুলুর দেহ নিয়ে যায় ডানকুনির কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস রোডে । সেখানে ফেলে রেখে চলে যায় আত্মীয়র বাড়িতে অনুষ্ঠানে। পরদিন অফিসে যায় । সেখান থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় সত্য । নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডে 90 দিনের মধ্যেই চার্জশিট পেশ করেছিল পুলিশ । কাস্টডি ট্রায়াল হয় । দীর্ঘ 12 বছর ধরে 46 জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়ার পর গতকাল সত্য এবং নন্দিতাকে দোষীসাব্যস্ত করে আদালত । আজ সত্যকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিল শিয়ালদা আদালত । সঙ্গে কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা । নন্দিতাকে কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে ।