কলকাতা, 25 মার্চ: শিক্ষার বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা নীতি 2020-তে বর্ণিত চার বছরের ডিগ্রি কোর্স, সিবিসিএস ও মাল্টিডিসিপ্লিনারি কোর্স রাজ্যে চালুর নির্দেশের প্রতিবাদে শুক্রবার অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি বা সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির পক্ষ থেকে একটি বিক্ষোভ সভার আয়োজন করা হয় কলেজ স্ট্রিট কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে (Save Education Committee Shows Protest)।
গত 17 মার্চ রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে চার বছরের স্নাতক স্তরের কোর্স, মাল্টিপল পয়েন্ট এক্সিট এবং এনট্রি-সহ সিবিসিএস পদ্ধতি চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির দাবি করে যে এই ব্যবস্থা পড়ুয়াকেন্দ্রিক বলা হলেও আদৌ তা নয়। বরং এর দ্বারা উচ্চশিক্ষায় এক চূড়ান্ত বিশৃংঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এরাজ্যে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে হাজার হাজার শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। আর সেখানে চুক্তিভিত্তিক এবং পার্ট টাইম শিক্ষকরাই কাজ সামলাচ্ছেন। অসংখ্য কলেজে অধ্যক্ষ পদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্যের পদ শূন্য রয়েছে। পরিকাঠামোর ভগ্নদশা। নেই উন্নত আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি বা লাইব্রেরি। তাই এই অবস্থায় শিক্ষায় বরাদ্দ না-বাড়িয়ে পরিকাঠামোর উন্নতি না-করে, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার।
সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটির রাজ্য সম্পাদক সদস্য বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "প্রাইভেট এবং ডিম কলেজ ইউনিভার্সিটি অনুমোদন করে শিক্ষার আর্থিক দায়িত্ব সরকার ছেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। এছাড়াও দেশের ঐতিহ্য সম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কেও সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারাবেন। গরিব নিম্নবিত্তরা ঘটিবাটি বেচে সন্তানদের প্রাইভেট কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়াতে বাধ্য হবেন। কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও ছাত্র ভরতির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় ভুগবে। ফলে এইভাবে পুরো সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈরাজ্যের পথে ঠেলে দিয়ে প্রকারান্তরে বেসরকারিকরণের রাস্তাকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কেন্দ্রের হয়ে কাজ করছে রাজ্য', বিক্ষোভে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন
তিনি আরও বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার 100টি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে এরাজ্যে তাদের ক্যাম্পাস খোলার অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। সারা দেশের শিক্ষাবিদদের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে জনমতের কোনওরকম তোয়াক্কা না-করেই কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষার বেসরকারিকরণ বাণিজ্যিকিকরণ ও সাম্প্রদায়িকায়িকরণের নীল নকশা জাতীয় শিক্ষানীতি 2020 লাগু করার চেষ্টা করছে।" তাঁর কথায়, এরাজ্যের সরকার মুখে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা নীতির বিরোধিতা করলেও এখন পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। জাতীয় শিক্ষা নীতি পর্যালোচনা করার জন্য রাজ্য সরকার দু'টি কমিশন গঠন করেছিল আজ পর্যন্ত সেই কমিটিগুলির রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা হল না। বর্তমানে এই নির্দেশিকা জারি করার আগেও সরকার সংশ্লিষ্ট কোনও পক্ষের মতামত গ্রহণ করার প্রয়োজন বোধ করেনি মুখে দাঁড়িয়েছে।