বিধাননগর, 16 ডিসেম্বর : তদন্ত এগোচ্ছে, নিত্য নতুন তথ্য উঠে আসছে তদন্তকারীদের হাতে ৷ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেছেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসার, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ৷ কিন্তু কিনারা এখনও অধরায় ৷ 10 ডিসেম্বর রাতে সল্টলেকের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বছর 25-এর অর্জুন মেহেনসারিয়ার কঙ্কালসার দেহ ৷ তারপর কেটে গেছে ছয়টি দিন ৷
আজ সকালেও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল ও কয়েকজন পুলিশ আফিসার সল্টলেকের এ জে ব্লকের 226 নম্বর বাড়িতে যান ৷ প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে ছিলেন তাঁরা৷ বাড়ির পিছনে বাগান থেকে আজ নতুন করে ফের নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা ৷ তারপরই এই ঘটনায় ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের হাতে এসেছে নয়া তথ্য ৷ সূত্র জানাচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান অর্জুনকে সঙ্গাহীন অবস্থায় চেয়ারে বসিয়ে গায়ে ঘি, কর্পূর দিয়ে আগুন ধারানো হয়৷ তারপর তথ্য লোপাট করার উদ্দেশ্যে পোড়া ছাই, কর্পূরের শিশি, ঘি-র কৌটো ফেলে দেওয়া হয় বাড়ির পিছনের বাগানে ৷ আর কঙ্কালসার দেহ চাদরে জড়িয়ে ছাদের একটি কোণে ফেলে রাখা হয়৷ ফরেন্সিক সূত্রে খবর, আজ বাগান থেকে কর্পূরের শিশি, ঘির কৌটো, পোড়া কাঠ ইত্যাদি নমুনা উদ্ধার করেছেন বিশেষজ্ঞরা ৷
আরও পড়ুন : সল্টলেক থেকে উদ্ধার পচাগলা দেহ, গ্রেপ্তার দুই
তবে কি তন্ত্র সাধনার যোগ? 2020 সালে এসে তন্ত্র সাধানার বলি বছর 25-এর যুবক? নাকি সম্পত্তির লোভে খুন? কে বা কারা জরিত এই খুনে? তদন্তে উঠে এসেছে এমন একাধিক প্রশ্ন ৷ উত্তর খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন গোয়েন্দারা ৷ আগেই স্থানীয় এক সূত্র জানা গিয়েছিল, তন্ত্র সাধনায় বিশ্বাস ছিল মেহেনসারিয়া পরিবার । এই যুক্তির সাপেক্ষেও মিলেছে একাধিক প্রমাণ ৷ এ জে ব্লকের সেই বাড়ির প্রায় প্রতিটি দরজায় দেখতে পাওয়া গিয়েছে ত্রিশূল, লাল তিলক ৷ আর সেই সূত্র ধরে মাঝে মধ্যেই বাড়িতে আসতেন এক তান্ত্রিক ৷ কোথায় সেই তান্ত্রিক ? মৃত্যু-খুনের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ আছে কি ? সেই তান্ত্রিককেও খুঁজছে পুলিশ । অনুমান তান্ত্রিকের খোঁজ মিললে এই মৃত্যু-রহস্যের আর এক দিকটা উন্মোচিত হতে পারে ।
আরও পড়ুন : মাথায় নোড়ার আঘাত, সন্দেহের তালিকায় বোনও, সল্টলেকে যুবক খুনে নয়া তথ্য
ঘটনার সূত্রপাত নভেম্বরের শেষের দিকে ৷ বিধাননগর পূর্ব থানায় বড় ছেলের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেন ব্যবাসায়ী অনিলকুমার মেহেনসারিয়া ৷ পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেন, তাঁর বড় ছেলে অর্জুন মেহেনসারিয়াকে খুন করেছেন তাঁর মা ৷ এই অভিযোগের সাপেক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে পুলিশকে সমস্ত ঘটনার বিবরণ দেন ওই ব্যক্তি ৷ তিনি পুলিশকে জানান, তাঁর পরিবারে সদস্য বলতে মোট পাঁচজন ৷ স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের তিন সন্তান ৷ দুই ছেলে ও এক মেয়ে ৷ বড় ছেলের 25 বছর বয়সী ৷ ছোটো ছেলের নাম বিদুর মেহেনসারিয়া ৷ ও মেয়ে বৈদেহী ৷ তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের জেরে সল্টলেকের এ জে ব্লকের বাড়ি ছেড়ে রাজারহাটের একটি আবাসনে একাই থাকতেই অনিল ৷ তিন ছেলে-মেয়ে থাকত মায়ের সঙ্গে সল্টলেকে ৷ 29 অক্টোবর অনিলকুমার মেহেনসারিয়া জানতে পারেন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি গিয়েছেন গীতা ৷ গীতার সঙ্গে ফোনেও কথা হয় অনিলের ৷ গীতা সেই ফোন কথোপকথনে জানান তাঁদের বড় ছেলে অর্জুন বর্তমানে কর্মসূত্রে রাঁচিতে রয়েছে ৷ কিন্তু বহু চেষ্টা করেও ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি অনিল ৷ তারপরই সন্দেহের সূত্রপাত ৷ বিধাননগর পূর্ব থানায় একটি নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করেন অনিল ৷