কলকাতা, 25 ডিসেম্বর: আসল সান্তাক্লজের বাড়ির ঠিকানা কিংবা তাঁর অস্বিত্ত্ব আছে কি না তা কারও জানা নেই ৷ তবে কলকাতার 'সান্তাক্লজ' থাকেন রিপন স্ট্রিটের 3 নম্বর বলফোর্ড লেনে ৷ স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে তাঁর পরিবার ৷ কল্পনার সান্তাকে বাস্তাবের চরিত্রের রূপ দিয়েই হাসি ফোটান শহরবাসীর মনে ৷ আসল নাম সেলিম আহমেদ ৷ তিনি প্রায় 25 বছর ধরে 'স্বপ্নের ফেরিওয়ালা' ৷ যদিও তাঁকে সেলিম জোকারওয়ালা নামেই সকলে চেনে মহানগর ৷ কাজের সুবিধার জন্য সেলিম আহমেদ থেকে সেলিম জোকারওয়ালা হয়েছেন ৷
বছর 54-র সেলিম আহমেদ নিজেকে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নয় 'হাসিওয়ালা' বলতে ভালোবাসেন। কোনওরকমে সংসার চললেও তা নিয়ে আক্ষেপ নেই তাঁর ৷ হাসি 'ফেরি' করেই তাঁর দিন চলে যায় । এভাবেই ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। সব কিছুই বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে করেছেন ৷ এমনটাই জানালেন রিপন স্ট্রিটের 'সেলিম জোকারওয়ালা' ৷
তবে এখন আর তিনি একা নন, তাঁর বড় ছেলে, দুই ভাগ্নে ফিরোজ এবং নূরও নিজেদের বিভিন্ন চরিত্রে সাজিয়ে তোলেন । কাজের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিতে গিয়েই জানান, মানুষকে বিশেষ করে শিশুদের মুখে হাসি ফোটানো বেশ কঠিন । এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, "করোনার আগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রোগীদের মুখে হাসি ফোটাতে,মনোরঞ্জন করতে। রোগে শয্যাশায়ী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো সহজ নয় । কারণ ওঁরা তো সকলেই শারীরিক সমস্যায় জর্জরিত । জীবন যুদ্ধে ব্যস্ত । ওঁদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরে তৃপ্ত হয়েছিলাম ।"
সেলিম আহমেদ কি শুধুই সান্তাক্লজ সাজেন? প্রশ্ন শুনেই উত্তর দেন, "সারা বছর ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চার্লি চ্যাপলিন, মিকি মাউস, ডোরেমন, মোটু-পাতলু, ছোটা ভিমের মতো কার্টুন চরিত্রে সেজে উঠি। আগে আমি নিজে সাজতাম। তবে এখন আমার দলে 15 জন রয়েছে। তারাই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে মনোরঞ্জন করে। এই বড়দিনের উৎসবেও আমার সাজানো সান্তাক্লজরা সাধারণের মনোরঞ্জন করে চলেছে ।"
এমন একটা অদ্ভুত পেশায় কি করে এসেছেন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, "1992 সালে ডেকোরটার্সের কাজ করতে গিয়েছিলাম একটি হোটেলে। সেখানে ম্যানেজার বলেছিলেন এমন কিছু করতে যাতে মানুষের বিনোদন হয়। বাড়িতে এসে অনেক চিন্তা করে চার্লি চ্যাপলিন সেজেছিলাম। সেই শুরু। তারপর অনেক চরিত্র ফটিয়ে তুলেছি। এখন আমি নিজে সাজি আবার দলের অন্যদের সাজিয়ে দিয়ে থাকি ৷" এই কাজে করতে গিয়ে দেখা হয়েছে শাম্মি কাপুর থেকে শুরু করে সৌরভ গাঙ্গুলীর মতো গুণী ব্যক্তিদের সঙ্গে ৷ বাংলা ছবি চ্যাপলিনে অভিনয় করার সময় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ দেখা করেছিলেন সেলিম জোকারওয়ালার সঙ্গে ।
আজ বড়দিন। শহরবাসী মেতেছে উৎসবের মেজাজে ৷ রুজির টানে বেরিয়ে পড়েবেন 'কলকাতার সান্তাক্লজ'। কখনও সান্তা,কখনও চ্যাপলিন কিংবা কোনও কমিক চরিত্র হয়ে মনোরঞ্জন করেন সেলিম এবং ওঁর সাজানো মানুষরা । ইচ্ছা পূরনের ঝোলা নিয়ে লাল সাদা জোব্বা,মাথায় টুপি লম্বা সাদা দাড়িতে শোভিত সেলিম জোকারওয়ালা বাস্তবের সান্তা । তাঁর আদব কায়দা দেখে আমোদিত হবে আট থেকে আশি। হেসেও উঠবে সবাই। কিন্তু সেলিম আহমেদের ঘরে হাসি ফুটবে কবে, কবে তাঁর স্বপ্নপূরণের ডালি নিয়ে হাজির হবেন সান্তাক্লজ, কল্পনা কি মিশবে বাস্তবে? নাকি পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি ভেবেই ঘুমোতে যাবেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা সেলিম।
আরও পড়ুন: