ETV Bharat / state

রাজ্যজুড়ে ছেলেধরা গুজব, পুলিশের প্রচারেও কাটছে না আতঙ্ক - পুলিশ

প্রতি বছর রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে ছেলেধরা গুজব শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের সর্বত্র। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে চলতি বছরেও বিরাম নেই সেই গুজবের। গত কয়েকদিনে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ছেলেধরা ও কিডনি পাচারের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যার জেরে আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েও পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

gujab
author img

By

Published : Feb 21, 2019, 4:13 AM IST

কলকাতা, ২১ ফেব্রুয়ারি : রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ফের বেড়েছে ছেলেধরা গুজব ও কিডনি কেটে নেওয়ার আতঙ্ক। আর সেই গুজবের জেরে অচেনা মুখ দেখলেই চলছে মারধর। পুলিশি আশ্বাসেও কাটছে না সেই আতঙ্ক। এখন রাজ্যজুড়ে ছবিটা প্রায় এক। গত কয়েকদিন ধরে ছেলেধরা গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। আর তা সামাল দিতে কার্যত বেসামাল পুলিশ-প্রশাসন।

প্রতি বছর রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে ছেলেধরা গুজব শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের সর্বত্র। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে চলতি বছরেও বিরাম নেই সেই গুজবের। গত কয়েকদিনে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ছেলেধরা ও কিডনি পাচারের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যার জেরে আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েও পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

ঘটনার সূত্রপাত উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায়। সেখানে গুজব ছড়িয়েছে, রাতের অন্ধকারে একদল লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নাকি কিডনি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও বসিরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব না-ছড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই সাধারণ মানুষের। আতঙ্কের জেরে অচেনা কাউকে দেখলেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। জবাব মনপসন্দ না হলে জুটছে মার। রবিবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামে এক অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। তারা আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নাকি লাল কাপড়ে মোড়া একটি থলে থেকে চাকু বের করেন। গ্রামবাসীরা তখন তাকে গণধোলাই দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে অবশ্য জানা যায়, প্রহৃত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন।

undefined

এই ঘটনার ঠিক পরের দিন সন্দেশখালির ন্যাজাটে আয়লা প্রোজেক্টের এক কর্মীকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একদল যুবক। গতকাল দেগঙ্গার চাঁপাতলা এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে করা হয় মারধর।

প্রায় একই আতঙ্ক জারি দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। সন্ধ্যা নামলেই চোর চোর করে চিৎকার শুরু করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। গত কয়েকদিন ধরে ফলতা, রায়চক, ডায়মন্ড হারবার, মগরাহাট, বারুইপুর, জয়নগর, ক্যানিং ও ভাঙড় সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়েছে। সরস্বতী পুজোর দিন সকালে মগরাহাট থানার আতাসুরা এলাকায় দুই অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গুবজ রটে যায় যে এলাকায় ছেলেধরা ঢুকেছে। শুরু হয় গণধোলাই। পরে জানা যায়, প্রহৃতদের একজন মগরাহাটেরই বাসিন্দা। অন্য জন এসেছিলেন আত্মীয়ের বাড়িতে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে ডায়মন্ডহারবার জেলা হাসপাতালে ভরতি করে। ছেলেধরা গুজবের একাধিক ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব না ছড়ানোর আবেদন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। ডায়মন্ডহারবারের SDPO মিঠুনকুমার দে বলেন, "বিভিন্ন জায়গায় একটা গুজব ছড়িয়েছে। তাতে কান না দেওয়ার জন্য সকলকে আবেদন করা হয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে পুলিশকে তা জানানোর কথা বলা হয়েছে।"

undefined

ছেলেধরা গুজব তাড়া করছে পূর্ব মেদিনীপুরেও। মেদিনীপুরে সোশাল মিডিয়ার সুবাদে গুজব ছড়িয়েছে, বিহারের ৫০০ জনের একটি দল নাকি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকেছে কিডনি পাচার ও ছেলেধরার জন্য। আর এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই অচেনা কাউকে দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে চলছে মারধর। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হলদিয়ার ভাগ্যবন্তপুরে ছেলেধরা সন্দেহে তপন জানা নামে পাশের গ্রামের এক যুবককে মারধর করা হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করে। পাশাপাশি নন্দীগ্রামেও মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম থানার পক্ষ থেকে লিফলেট প্রচার ও মাইক প্রচার করা হয়েছে। রবিবার খেজুরির হলুদবাড়ি এলাকায় বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়কে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। সোমবার সকালে খেজুরির পূর্ব ভাঙনমারি গ্রামে ৭০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকেও একইভাবে মারধর করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা তমলুকের তেঁতুলতলা বাসস্ট্যান্ডে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই যুবকের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে।

undefined

গতকাল দুপুরে তমলুকের খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের অশোক রাও নামে কারিগরি বিভাগের অস্থায়ী এক শিক্ষককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একদল যুবক। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম জানার তৎপরতায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। এই অবস্থায় ছেলেধরাকে আড়াল করার জন্য প্রধান শিক্ষককেই হেনস্থা করেন অভিভাবকরা। খবর পেয়ে তমলুক থানা থেকে র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্স ও পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এইসব ঘটনার পর থেকে জেলার প্রায় সব থানায় মাইক ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ডি সলেমন নেশাকুমার তাঁর ফেসবুক পেজেও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে সতর্কবার্তা পোস্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেধরা সন্দেহে সাধারণ মানুষকে যারা মারধর ও হেনস্থা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে জেলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। জেলা পুলিশের তরফে সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। জানানো হয়েছে, গুজব ছড়ালে গ্রেপ্তার করা হবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও সাংবাদিক বৈঠক করে গুজব না ছড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন।

undefined

কলকাতা, ২১ ফেব্রুয়ারি : রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ফের বেড়েছে ছেলেধরা গুজব ও কিডনি কেটে নেওয়ার আতঙ্ক। আর সেই গুজবের জেরে অচেনা মুখ দেখলেই চলছে মারধর। পুলিশি আশ্বাসেও কাটছে না সেই আতঙ্ক। এখন রাজ্যজুড়ে ছবিটা প্রায় এক। গত কয়েকদিন ধরে ছেলেধরা গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। আর তা সামাল দিতে কার্যত বেসামাল পুলিশ-প্রশাসন।

প্রতি বছর রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে ছেলেধরা গুজব শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের সর্বত্র। সোশাল মিডিয়ার দৌলতে চলতি বছরেও বিরাম নেই সেই গুজবের। গত কয়েকদিনে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ছেলেধরা ও কিডনি পাচারের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যার জেরে আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েও পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

ঘটনার সূত্রপাত উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায়। সেখানে গুজব ছড়িয়েছে, রাতের অন্ধকারে একদল লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নাকি কিডনি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও বসিরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব না-ছড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই সাধারণ মানুষের। আতঙ্কের জেরে অচেনা কাউকে দেখলেই চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। জবাব মনপসন্দ না হলে জুটছে মার। রবিবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামে এক অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। তারা আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নাকি লাল কাপড়ে মোড়া একটি থলে থেকে চাকু বের করেন। গ্রামবাসীরা তখন তাকে গণধোলাই দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে অবশ্য জানা যায়, প্রহৃত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন।

undefined

এই ঘটনার ঠিক পরের দিন সন্দেশখালির ন্যাজাটে আয়লা প্রোজেক্টের এক কর্মীকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একদল যুবক। গতকাল দেগঙ্গার চাঁপাতলা এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে করা হয় মারধর।

প্রায় একই আতঙ্ক জারি দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। সন্ধ্যা নামলেই চোর চোর করে চিৎকার শুরু করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। গত কয়েকদিন ধরে ফলতা, রায়চক, ডায়মন্ড হারবার, মগরাহাট, বারুইপুর, জয়নগর, ক্যানিং ও ভাঙড় সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়েছে। সরস্বতী পুজোর দিন সকালে মগরাহাট থানার আতাসুরা এলাকায় দুই অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গুবজ রটে যায় যে এলাকায় ছেলেধরা ঢুকেছে। শুরু হয় গণধোলাই। পরে জানা যায়, প্রহৃতদের একজন মগরাহাটেরই বাসিন্দা। অন্য জন এসেছিলেন আত্মীয়ের বাড়িতে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে ডায়মন্ডহারবার জেলা হাসপাতালে ভরতি করে। ছেলেধরা গুজবের একাধিক ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব না ছড়ানোর আবেদন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। ডায়মন্ডহারবারের SDPO মিঠুনকুমার দে বলেন, "বিভিন্ন জায়গায় একটা গুজব ছড়িয়েছে। তাতে কান না দেওয়ার জন্য সকলকে আবেদন করা হয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে পুলিশকে তা জানানোর কথা বলা হয়েছে।"

undefined

ছেলেধরা গুজব তাড়া করছে পূর্ব মেদিনীপুরেও। মেদিনীপুরে সোশাল মিডিয়ার সুবাদে গুজব ছড়িয়েছে, বিহারের ৫০০ জনের একটি দল নাকি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকেছে কিডনি পাচার ও ছেলেধরার জন্য। আর এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই অচেনা কাউকে দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে চলছে মারধর। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হলদিয়ার ভাগ্যবন্তপুরে ছেলেধরা সন্দেহে তপন জানা নামে পাশের গ্রামের এক যুবককে মারধর করা হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করে। পাশাপাশি নন্দীগ্রামেও মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম থানার পক্ষ থেকে লিফলেট প্রচার ও মাইক প্রচার করা হয়েছে। রবিবার খেজুরির হলুদবাড়ি এলাকায় বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়কে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে। সোমবার সকালে খেজুরির পূর্ব ভাঙনমারি গ্রামে ৭০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকেও একইভাবে মারধর করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা তমলুকের তেঁতুলতলা বাসস্ট্যান্ডে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই যুবকের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে।

undefined

গতকাল দুপুরে তমলুকের খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের অশোক রাও নামে কারিগরি বিভাগের অস্থায়ী এক শিক্ষককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একদল যুবক। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম জানার তৎপরতায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। এই অবস্থায় ছেলেধরাকে আড়াল করার জন্য প্রধান শিক্ষককেই হেনস্থা করেন অভিভাবকরা। খবর পেয়ে তমলুক থানা থেকে র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্স ও পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এইসব ঘটনার পর থেকে জেলার প্রায় সব থানায় মাইক ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ডি সলেমন নেশাকুমার তাঁর ফেসবুক পেজেও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে সতর্কবার্তা পোস্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেধরা সন্দেহে সাধারণ মানুষকে যারা মারধর ও হেনস্থা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতিমধ্যে জেলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। জেলা পুলিশের তরফে সোশাল মিডিয়ায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। জানানো হয়েছে, গুজব ছড়ালে গ্রেপ্তার করা হবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও সাংবাদিক বৈঠক করে গুজব না ছড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন।

undefined
জেলায় জেলায় ছেলেধরা, কিডনি পাচারের গুজব, পুলিশি আশ্বাসেও কাটছে না আতঙ্ক (এটা ওভারঅল কপি। বিভিন্ন জেলা থেকে আগেই যে ছবিগুলো এসেছে, সেগুলো থেকে এখানে ছবি ব্যবহার করা যেতে পারে) কলকাতাঃ বছর ঘুরে আবার ছেলেধরা গুজব। সঙ্গে দোসর কিডনি কাটার আতঙ্ক। আর সেই গুজবের জেরে অচেনা মুখ দেখলেই মারধর। পুলিশি আশ্বাসেও কাটছে না আতঙ্ক। গত কয়েকদিন ধরে ছেলেধরা গুজবে উত্তর থেকে দক্ষিণ--আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। আর তা সামাল দিতে কার্যত বেসমাল পুলিশ-প্রশাসন। ফি বছর রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্ত থেকে ছেলেধরা গুজব শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে চলতি বছরও বিরাম নেই গুজবের সেই পরম্পরার। গত কয়েকদিন ধরে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর-সহ রাজ্যের কয়েকটি জেলায় ছেলেধরা ও কিডনি পাচারের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েও পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। ঘটনার সূত্রপাত উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায়। সেখানে শেষ কয়েকদিন ধরে গুজব ছড়িয়েছে, রাতের অন্ধকারে নাকি একদল লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা নাকি কিডনি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে সেই গুজব নিমেষে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। বসিরহাট জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সোশ্যাল গুজব না-ছড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অচেনা কাউকে দেখলেই চলছে রক্তচক্ষু জিজ্ঞাসাবাদ। জবাব মনপসন্দ না-হলেই মার। রবিবার রাতে হিঙ্গলগঞ্জের বাঁকড়া গ্রামে এক অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গ্রামবাসীদের সন্দেহ হয়। তাঁরা আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নাকি লাল কাপড়ে মোড়া একটি থলে থেকে চাকু বের করেন। তখন গ্রামবাসীরা তাকে ধরে গণধোলাই দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। তখন উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে অবশ্য জানা যায়, প্রহৃত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন। ঠিক তার পরের দিন সন্দেশখালির ন্যাজাটে আয়লা প্রোজেক্টের এক কর্মীকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একদল যুবক। আজ দেগঙ্গার চাঁপাতলা এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। প্রায় একই আতঙ্ক জাকি দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। সন্ধ্যা নামলেই চোর চোর করে চিৎকার শুরু করে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। অপরিচিত কাউকে দেখলেই শুরু হচ্ছে গণধোলাই। গত কয়েকদিন ধরে ফলতা, রায়চক, ডায়মন্ড হারবার, মগরাহাট, বারুইপুর, জয়নগর, ক্যানিং ও ভাঙড়- সহ বিভিন্ন এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ছে। আর তার জেরে গণরোষের মুখে পড়ছেন কেউ কেউ। সরস্বতীপুজোর দিন সকালে মগরাহাট থানার আতাসুরা এলাকায় দুই অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে গুবজ রটে যায়, এলাকায় ছেলেধরা ঢুকেছে। শুরু হয় গণধোলাই। পরে জানা যায়, প্রহৃতদের একজন মগরাহাটেরই বাসিন্দা। অন্য জন এসেছিলেন আত্মীয়ের বাড়িতে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে গুজব না-ছড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। ডায়মন্ড হারবারের এসডিপিও মিথুনকুমার দে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় চোর চোর বলে একটা গুজব ছড়িয়েছে। তাতে কান না-দেওয়ার জন্য সকলকে আবেদন করা হয়েছে। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে পুলিশকে তা জানানোর কথা বলা হয়েছে। ছেলেধরা গুজব তাড়া করছে পূর্ব মেদিনীপুরেও। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছেলেধরা ও কিডনি পাচারকারী সন্দেহে চলছে গণধোলাই। মেদিনীপুরে সোশ্যাল মিডিয়ার সুবাদে গুজব ছড়িয়েছে, বিহারের ৫০০ জনের একটি দল নাকি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকেছে কিডনি পাচার ও ছেলেধরার জন্য। আর এই গুজব ছড়িয়ে পড়তেই অচেনা কাউকে দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে চলছে মারধর। যদিও জেলা পুলিশের তরফে বারবার গুজবে কান না-দেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। তারপরও জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলেছে একের পর এক ঘটনা। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় হলদিয়ার ভাগ্যবন্তপুরে ছেলেধরা সন্দেহে তপন জানা নামে এক পাশের গ্রামের এক যুবককে মারধর করা হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। পাশাপাশি নন্দীগ্রামেও মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হয়। হলদিয়া ও নন্দীগ্রাম থানার পক্ষ থেকে লিফলেট প্রচার ও মাইক প্রচার করা হয়েছে। রবিবার খেজুরির হলুদবাড়ি এলাকায় বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়কে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। সোমবার সকালে খেজুরির পূর্ব ভাঙনমারি গ্রামে ৭০ বছরের মানসিক ভারসাম্যহীন এক বৃদ্ধকেও একইভাবে মারধর করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধেবেলা তমলুকের তেঁতুলতলা বাসস্ট্যান্ডে এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে গণধোলাই দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ জানায়, ওই যুবকের বাড়ি উত্তরপ্রদেশে। আজ দুপুরে তমলুকের খারুই ইউনিয়ন হাইস্কুলের অশোক রাও নামে কারিগরি বিভাগের অস্থায়ী এক শিক্ষককে ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করে একদল যুবক। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষক অনুপম জানার তৎপরতায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। তখন ছেলেধরাকে আড়াল করছেন প্রধান শিক্ষক, এই অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককেই হেনস্থা করা হয়। খবর পেয়ে তমলুক থানা থেকে র‍্যাফ, কমব্যাট ফোর্স ও বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর থেকে জেলার প্রায় সব থানায় মাইক ও লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ডি সলেমন নেশাকুমার তাঁর ফেসবুক পেজেও সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা পোস্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছেলেধরা সন্দেহে সাধারণ মানুষকে যারা মারধর ও হেনস্থা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে জেলায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেসবুক-সহ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। জেলা পুলিশের তরফে সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালানো হচ্ছে। গুজব ছড়ালে গ্রেপ্তার করা হবে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও সাংবাদিক বৈঠক করে গুজব না ছড়ানোর আবেদন করেছেন।
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.