কলকাতা, 19 ডিসেম্বর : রেলের সম্পত্তি রক্ষার জন্য RPF, RPSF রয়েছে ৷ তাদের আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয় ৷ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন পাশের পর গোটা রাজ্যে যে সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেই সংক্রান্ত একাধিক জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে আজ এই মন্তব্য করলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণণ ৷ পাশাপাশি, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় রাজ্য কী পদক্ষেপ করেছে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট আগামীকাল পেশ করার নির্দেশ দেন ৷
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন পাশ হওয়ার পর গোটা রাজ্যে যে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি হয়েছে তার দায় রাজ্যের । রাজ্যের মানুষকে পরিকল্পিতভাবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন নিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে । এই অভিযোগে মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সুরজিৎ সাহা নামে এক ব্যক্তি । এরপর এই সংক্রান্ত একাধিক মামলা দায়ের হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে । আজ সেই সমস্ত মামলার শুনানি হয় । মামলার শুনানিতে প্রথমেই রাজ্যের তরফে AG কিশোর দত্ত একটি রিপোর্ট প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চকে দেন । তিনি বলেন, "13 ডিসেম্বর থেকে গোটা রাজ্যে যে গন্ডগোলের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা আমরা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি । আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা নিয়ে আদালত যদি আরও বিস্তারিত রিপোর্ট চায়, তা আমরা আদালতকে দিতে পারি ।"
রাজ্যের পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, "এখনও পর্যন্ত কোনও সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর নেই । প্রশাসন পুরো বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে । এখনও পর্যন্ত 64টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং 931 জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । রাজ্যে মোট 715টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে । তার মধ্যে কয়েকটি স্টেশনে ছোটোখাটো ঘটনা ঘটেছে ।"
শুনানিতে মামলাকারী সুরজিৎ সাহার তরফে আইনজীবী স্মরজিত রায়চৌধুরি বলেন, "হাইকোর্টে এই মামলা দায়ের হওয়ার পর আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । বিমান-বাস-ট্রেনের টিকিটের দাম বেড়েছে । একাধিক ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে ।" তখন প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, "আমরা শুধুমাত্র এই সময়ের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে সেটা দেখতে চাই । দেখা যাক, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজ্য কতটা এগিয়েছে ।" পাশাপাশি আর একটি মামলায় মামলাকারীর তরফে আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, "সরকার বিজ্ঞাপন দিয়ে বলছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এখানে (পশ্চিমবঙ্গে) চালু করা হবে না । একটা কেন্দ্রীয় আইনের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার কি এটা করতে পারে?" এই বিষয়ে কিশোর দত্ত আগামীকাল তাঁর বক্তব্য জানাবেন বলেন।
মামলার শুনানিতে কেন্দ্রের তরফে আইনজীবী অশোক চক্রবর্তী বলেন, "গত কয়েকদিনে রেলের সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে । বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগানো হয়েছে ভাঙচুর করা হয়েছে । এর দায় রাজ্য সরকারের ।" তখন প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, "রেলের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য RPF রয়েছে । কোর্টের নির্দেশে জন্য তাদের অপেক্ষা করা উচিত নয় ।" যদিও মামলা শেষে আইনজীবী স্মরজিত রায়চৌধুরি অভিযোগ করেন, "কোর্ট রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল । কিন্তু অ্যাডভোকেট জেনেরাল আজ যে রিপোর্ট আদালতে পেশ করলেন সেটি একটি চিঠির প্রতিলিপি । রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনেরালকে একটি চিঠি লিখেছেন । এটি সেই চিঠির প্রতিলিপি । এটা অত্যন্ত অপমানজনক । আগামীকাল দুপুর দু'টোয় আবার শুনানি হবে বলে জানিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ ।