ETV Bharat / state

Kolkata River Traffic Police: জলযান নিয়ন্ত্রণ নয়, টহলদারি ও দেহ উদ্ধারে আটকে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশ - রিভার ট্রাফিক পুলিশ

এক সময়ের কলকাতা পুলিশের সবচেয়ে ব্যস্ত বিভাগ ছিল হুগলি নদীর উপরে কর্তব্যরত রিভার ট্রাফিক (Kolkata River Traffic Police) ৷ আজ সকাল-বিকেল টহলদারি ও জোয়ারে সময় ভেসে আসা দেহ তোলা ও সৎকার ছাড়া কোনও কাজই নেই এই বিভাগের (River Traffic Police Loses Its Glory) ৷

River Traffic Police Loses Its Glory and Reduced to Fishing Out Corpse From River
River Traffic Police Loses Its Glory and Reduced to Fishing Out Corpse From River
author img

By

Published : Nov 16, 2022, 8:50 PM IST

কলকাতা, 16 নভেম্বর: হুগলি নদী, আর সেই নদীপথে সুদীর্ঘ বাণিজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালি তথা দেশবাসী অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত রয়েছে ৷ আর সেই সময়কার অর্থাৎ, আঠারো শতকে জলপথে বাণিজ্য যারা নিয়ন্ত্রণ করত, তারা হল ‘জল পুলিশ’ ৷ বর্তমানে কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা রিভার ট্রাফিক বিভাগ (Kolkata River Traffic Police) ৷ যা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় একমাত্র কলকাতা পুলিশের মধ্যেই আছে ৷ কিন্তু, সে সবই আজ অতীত ৷ শুরুর দিনের ব্যস্ততা আর নেই ৷ নদীতে জাহাজ ও বজরার যানজট নিয়ন্ত্রণের বদলে, দেহ উদ্ধার (Fishing Out Corpse From River) ও সৎকারের কাজ করতে হচ্ছে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশকে (River Traffic Police Loses Its Glory) ৷

হ্যাঁ, এটাই বাস্তব ৷ হুগলি নদী দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল কমার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত রিভার ট্রাফিক বিভাগের কাজও লোপ পেয়েছে ৷ সকাল হতেই গঙ্গা বক্ষ থেকে ‘লাশ’ তোলার কাজ করতে হয় আধিকারিকদের ৷ ভোরবেলা জোয়ার আসতেই একের পর এক দেহ ভেসে আসতে থাকে হুগলি নদীতে ৷ আর সেই দেহগুলি উদ্ধার করতে হয় রিভার ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের ৷ শুধু তাই নয়, সেই উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত পরিচয় দেহগুলির কখনও কখনও সৎকার করতে হয় দায়িত্বে থাকা আধিকারিক এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের ৷

তবে, এর বাইরেও দু-একটি কাজ করতে হয় রিভার ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের ৷ রোজ সকাল, বিকেল বা রাতে-যখনই জোয়ার আসার সময় থাকে, তখন রিভার ট্রাফিকের স্পিড বোট নিয়ে হুগলি নদীর দুই পাড়ের দিকে টহল দিতে হয় ৷ যদি কেউ নদীর ঘাটে নামে, তাহলে তাঁদের মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করা হয় ৷ এর বাইরে সকাল ও বিকেলে নিয়ম করে দিনে দু’বার টহল দেন রিভার ট্রাফিকের আধিকারিক ও কর্মীরা ৷

18 শতকে 9 জন আধিকারিক, 18 জন পিয়ন এবং 92 জন মাঝিকে নিয়ে তৎকালীন ‘জল পুলিশ’ তৈরি করা হয়েছিল ৷ সেই সময় তাঁদের কাজের চাপও ছিল পাহাড় সমান ৷ কলকাতায় বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই হুগলি নদী ৷ যেখানে দিনরাত অবিরাম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হত তাঁদের ৷ বর্তমান বাবুঘাটে যেখানে মিলেনিয়াম পার্ক অবস্থিত, সেখানে ছিল কলকাতা বন্দর ৷ আর শহরের যাবতীয় ব্যবসা হত এই বন্দর দিয়ে ৷ কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, সেই সময় জলপথের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকত কলকাতা পুলিশের রিভার ট্রাফিক বিভাগের হাতে ৷

টহলদারি ও দেহ উদ্ধারে আটকে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশ

আরও পড়ুন: অত্যাধুনিক ক্যামেরা দিয়ে এবার গাড়ির হর্নের শব্দের মাত্রা যাচাই করবে কলকাতা পুলিশ

ব্রিটিশ আমলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ, বজরা ও ছোট-বড় নৌকার ভিড়ে ঠাসা থাকত কলকাতা বন্দর ৷ ফলে দুর্ঘটনাও ঘটত ৷ সেই সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি করা হয়েছিল ‘রিভার ট্রাফিক পুলিশ’ ৷ বাঙালির মুখে সেটাই হয়ে গিয়েছিল ‘জল পুলিশ’ ৷ এমনকি সেই সময় ডাকাতির উপদ্রব ছিল কলকাতা বন্দরে ৷ বণিকদের নৌকায় হামলা করতে ডাকাতরা ৷ রিভার ট্রাফিক পুলিশ ছিল সেই সময়ের রক্ষাকর্তা ৷

পরবর্তী সময়ে 1820 সালে 19 এর দশকে স্ট্র্যান্ড রোড তৈরি হওয়ার পর হুগলি নদীতে কলকাতার দিক থেকে চড়া পড়তে শুরু করে ৷ ফলে জাহাজ বা নৌকা নিয়ে প্রবেশ করা দুষ্কর হয়ে ওঠে বণিকদের পক্ষে ৷ ফলে ধীরে ধীরে ব্যবসা-বাণিজ্য কমতে কমতে একসময় বন্ধ হয়ে যায় ৷ সেই বাণিজ্য আজ ইতিহাসের পাতায় রয়েছে ৷ তবে, বাস্তবে রয়ে গেছে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশ ৷ কলকাতা পুলিশের যে বিভাগ আজ কার্যত নামেই রয়েছে ৷ নদী থেকে দেহ তোলা, আর দিনে দু’বার টহলদারি ছাড়াও বিশেষ কোনও কাজ তাদের নেই ৷

কলকাতা, 16 নভেম্বর: হুগলি নদী, আর সেই নদীপথে সুদীর্ঘ বাণিজ্যের ইতিহাসের সঙ্গে বাঙালি তথা দেশবাসী অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত রয়েছে ৷ আর সেই সময়কার অর্থাৎ, আঠারো শতকে জলপথে বাণিজ্য যারা নিয়ন্ত্রণ করত, তারা হল ‘জল পুলিশ’ ৷ বর্তমানে কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা রিভার ট্রাফিক বিভাগ (Kolkata River Traffic Police) ৷ যা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় একমাত্র কলকাতা পুলিশের মধ্যেই আছে ৷ কিন্তু, সে সবই আজ অতীত ৷ শুরুর দিনের ব্যস্ততা আর নেই ৷ নদীতে জাহাজ ও বজরার যানজট নিয়ন্ত্রণের বদলে, দেহ উদ্ধার (Fishing Out Corpse From River) ও সৎকারের কাজ করতে হচ্ছে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশকে (River Traffic Police Loses Its Glory) ৷

হ্যাঁ, এটাই বাস্তব ৷ হুগলি নদী দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজের চলাচল কমার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতা পুলিশের অন্তর্গত রিভার ট্রাফিক বিভাগের কাজও লোপ পেয়েছে ৷ সকাল হতেই গঙ্গা বক্ষ থেকে ‘লাশ’ তোলার কাজ করতে হয় আধিকারিকদের ৷ ভোরবেলা জোয়ার আসতেই একের পর এক দেহ ভেসে আসতে থাকে হুগলি নদীতে ৷ আর সেই দেহগুলি উদ্ধার করতে হয় রিভার ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের ৷ শুধু তাই নয়, সেই উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত পরিচয় দেহগুলির কখনও কখনও সৎকার করতে হয় দায়িত্বে থাকা আধিকারিক এবং অন্যান্য পুলিশ কর্মীদের ৷

তবে, এর বাইরেও দু-একটি কাজ করতে হয় রিভার ট্রাফিক পুলিশের আধিকারিকদের ৷ রোজ সকাল, বিকেল বা রাতে-যখনই জোয়ার আসার সময় থাকে, তখন রিভার ট্রাফিকের স্পিড বোট নিয়ে হুগলি নদীর দুই পাড়ের দিকে টহল দিতে হয় ৷ যদি কেউ নদীর ঘাটে নামে, তাহলে তাঁদের মাইকিংয়ের মাধ্যমে সতর্ক করা হয় ৷ এর বাইরে সকাল ও বিকেলে নিয়ম করে দিনে দু’বার টহল দেন রিভার ট্রাফিকের আধিকারিক ও কর্মীরা ৷

18 শতকে 9 জন আধিকারিক, 18 জন পিয়ন এবং 92 জন মাঝিকে নিয়ে তৎকালীন ‘জল পুলিশ’ তৈরি করা হয়েছিল ৷ সেই সময় তাঁদের কাজের চাপও ছিল পাহাড় সমান ৷ কলকাতায় বাণিজ্যের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই হুগলি নদী ৷ যেখানে দিনরাত অবিরাম ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হত তাঁদের ৷ বর্তমান বাবুঘাটে যেখানে মিলেনিয়াম পার্ক অবস্থিত, সেখানে ছিল কলকাতা বন্দর ৷ আর শহরের যাবতীয় ব্যবসা হত এই বন্দর দিয়ে ৷ কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, সেই সময় জলপথের যাবতীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকত কলকাতা পুলিশের রিভার ট্রাফিক বিভাগের হাতে ৷

টহলদারি ও দেহ উদ্ধারে আটকে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশ

আরও পড়ুন: অত্যাধুনিক ক্যামেরা দিয়ে এবার গাড়ির হর্নের শব্দের মাত্রা যাচাই করবে কলকাতা পুলিশ

ব্রিটিশ আমলে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জাহাজ, বজরা ও ছোট-বড় নৌকার ভিড়ে ঠাসা থাকত কলকাতা বন্দর ৷ ফলে দুর্ঘটনাও ঘটত ৷ সেই সব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে তৈরি করা হয়েছিল ‘রিভার ট্রাফিক পুলিশ’ ৷ বাঙালির মুখে সেটাই হয়ে গিয়েছিল ‘জল পুলিশ’ ৷ এমনকি সেই সময় ডাকাতির উপদ্রব ছিল কলকাতা বন্দরে ৷ বণিকদের নৌকায় হামলা করতে ডাকাতরা ৷ রিভার ট্রাফিক পুলিশ ছিল সেই সময়ের রক্ষাকর্তা ৷

পরবর্তী সময়ে 1820 সালে 19 এর দশকে স্ট্র্যান্ড রোড তৈরি হওয়ার পর হুগলি নদীতে কলকাতার দিক থেকে চড়া পড়তে শুরু করে ৷ ফলে জাহাজ বা নৌকা নিয়ে প্রবেশ করা দুষ্কর হয়ে ওঠে বণিকদের পক্ষে ৷ ফলে ধীরে ধীরে ব্যবসা-বাণিজ্য কমতে কমতে একসময় বন্ধ হয়ে যায় ৷ সেই বাণিজ্য আজ ইতিহাসের পাতায় রয়েছে ৷ তবে, বাস্তবে রয়ে গেছে দেশের একমাত্র রিভার ট্রাফিক পুলিশ ৷ কলকাতা পুলিশের যে বিভাগ আজ কার্যত নামেই রয়েছে ৷ নদী থেকে দেহ তোলা, আর দিনে দু’বার টহলদারি ছাড়াও বিশেষ কোনও কাজ তাদের নেই ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.