কলকাতা, 5 মার্চ: গত বছর অগস্ট মাসে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Presidency University) ক্যাম্পাসে দুই পক্ষের ছাত্রদের মধ্যে অশান্তি হয় ৷ তার জের ধরে সম্প্রতি হিন্দু হোস্টেল চত্বরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৷ তারপরই পুরো বিষয়টিতে তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি হাই পাওয়ার্ড কমিটি (high powered committee) গঠন করে । তদন্তের পর আজ ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দিল । এসএফআই-এর তরফে অভিযোগ তোলা হয়, গত বছর 4 ও 5 অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কিছু ছাত্র ক্যাম্পাসে এসে তাদের উপর চড়াও হয় । পাশাপাশি এসএফআই সমর্থকদের রাত 10টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আটকেও রাখা হয় বলে অভিযোগ ।
আরও অভিযোগ, এরপর তাদের ছাড়া হলে তারা যখন ক্যাম্পাস থেকে বেরোয় তখন হকিস্টিক নিয়ে তাড়া করা হয় ৷ দু'জন এই ঘটনায় গুরুতরভাবে জখম হন । এমনটাই দাবি করে এসএফআই। তাদের আরও দাবি, শিয়ালদা যাওয়ার পথে আবারও তাদের উপর হামলা করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গুন্ডারা। এই ঘটনার স্পষ্ট ভিডিয়ো ফুটেজও তাদের কাছে রয়েছে বলে দাবি বামেদের ছাত্র সংগঠনের ।
শনিবার জমা পড়া রিপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, উপাচার্যের নির্দেশে যে কমিটিটি গঠন করা হয়েছিল তারা তাঁদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে । রিপোর্ট অনুসারে, ইডেন হিন্দু হোস্টেলের আশেপাশে 22 এবং 23 ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয় ৷ অচিরেই তা মারামারির পর্যায় পৌঁছে যায় । তথ্য ও কাগজপত্র দেখে, সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলে এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা যায় ওই দিন দুই পক্ষের ছাত্রদের মধ্যে মারামারি হয়েছে । অনেককে মারধর করার বিষয়টিও রিপোর্টে স্থান পেয়েছে । কলেজের সম্পত্তি নষ্ট করা হয়েছে ৷ পাশাপাশি ছাত্রদের মধ্যে এর ফলে ভয়ের সঞ্চার হয় ৷ ফলত বহুদিন পর্যন্ত অনেকেই কলেজে অনুপস্থিত ছিল ।
এই বিষয়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্বিদ্যালয় এসএফআই ইউনিটের সভাপতি আনন্দরূপা ধর বলেন, "এই ঘটনার পরেই আমরা দাবি জানাই যাতে শীঘ্রই ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার স্বার্থে পুরো ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় । আমরা এও দাবি করি, যাতে, অবিলম্বে 'প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ' নামক ইউনিটকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় । আমাদের দাবি মেনে ' এই কমিটি গঠন করা হয় । কিন্তু ওই কমিটি গঠন হওয়া অবধি শেষ ৷ তারপর আর কোনও কাজ এগোয়নি । এর পরও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ক্যাম্পাসে নবীনবরণ থেকে শুরু করে নামে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সরস্বতী পুজো করতে থাকে ।"
এরপর ফের এসএফআই-এর তরফে অভিযোগ তোলা হয়, গত 23 ফেব্রুয়ারিতে আবারও কিছু টিএমসিপি সদস্য অনৈতিকভাবে হিন্দু হোস্টেলে ঢুকে পরে ৷ হোস্টেলের নিয়ম মাফিক তাদের বার করে দেওয়া হয় ৷ তারপর তারা রাতভর বহিরাগত গুণ্ডাবাহিনীকে নিয়ে এসে হোস্টেলের দিকে কাঠ, লাঠি ও পাথর ছোড়ে বলে অভিযোগ । এর ফলে তিনজন আবাসিক আহত হয় ।
আনন্দরূপা ধর জানান, আবারও এই ঘটনার পরে হোস্টেলের ছাত্ররা দাবি জানায় যাতে কমিটির সঙ্গে একটা বৈঠক করা হয় । পাশাপাশি যাতে এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করা হয় সেই দাবিও ওঠে । তিনি বলেন, "আমরা এখনও দাবি করছি যাতে ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীদের সুরক্ষার স্বার্থে ও এক সুস্থ অ্যাকাডেমিক পরিস্থিতির স্বার্থে টিএমসিপি ইউনিটকে অবৈধ ঘোষণা করা হয় । সাম্প্রতিক এই অপকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছাত্রদের বহিষ্কার করা হোক ।"
আরও পড়ুন: ছাত্র নির্বাচনের দাবিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে প্রেসিডেন্সি