কলকাতা, 6 মে : দলবদলুদের অধিকাংশই হেরে ভূত ৷ বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে ৷ মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিধায়ক, তালিকায় বাদ ছিলেন না কেউই ৷ কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, অধিকাংশ দলবদলুদের হেরো তকমা জুটেছে ৷ ভোট প্রচারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় নিয়ম করে দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে ‘গদ্দার’, ‘বেইমান’ বলে তোপ দেগেছেন ৷ দেখা গেল মমতার সুরে সুর মিলিয়ে অধিকাংশ দলত্যাগীদের ‘গদ্দার’ মনে করে তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল বাংলার মানুষ ৷
দলবদলুদের মধ্যে সবথেকে চর্চিত নাম অবশ্যই শুভেন্দু অধিকারী ৷ রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব সামালেছিলেন ৷ কিন্তু তৃণমূলের অন্দরেই বাকি নেতা নেত্রীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় দলত্যাগ করেন তিনি ৷ যোগ দেন বিজেপিতে ৷ এরপরই একের পর এক সভাতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন ৷ তাঁর আক্রমণের তালিকা থেকে বাদ যাননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ যে মমতাকে একদিন মা বলে ডাকতেন, সেই মমতাকেই ‘বেগম’ ‘চিটিংবাজ’ বলতেও ছাড়েননি ৷ মমতাকে হারানোর চ্যালেঞ্জ করে বসেন শুভেন্দু ৷ হারালেনও মমতাকে ৷ তবে ব্যবধান মাত্র 1956 ভোট ৷
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চ্যালেঞ্জাটা নিয়েছিলেন ৷ নিজের চেনা জমি ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন শুভেন্দুর গড় নন্দীগ্রামে ৷ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করলেন ৷ হারলেন বটে, তবে বুঝিয়ে দিলেন, গোটা রাজ্যে এখনও সাধারণ মানুষের ভরসার নাম মমতা ৷ তাঁর স্ট্র্যটেজিতেই বাংলায় বাজিমাত তৃণমূলের ৷ রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে, শুভেন্দুর মতো দলত্যাগীদের ‘গদ্দার’ প্রমাণিত করতে তাঁকে বেশি বেগ পেতে হল না ৷
শুভেন্দুর মতো দলবদলুদের তালিকায় উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে উত্তর রানাঘাট থেকে জিতলেন পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় ও নাটাবাড়ি থেকে জিতলেন মিহির গোস্বামী ৷ তবে এছাড়া বাকি দলবদলুরা কার্যত নাজেহাল হলেন ৷ 2019 -এ লোকসভা নির্বাচনে ঘাসফুল ছেড়ে পদ্ম হাতে নিয়ে লড়াই করেছিলেন নিশীথ প্রামাণিক ৷ সেবারে অনায়াসেই জেতেন তিনি ৷ তবে লোকসভা আর বিধানসভা নির্বাচন যে আকাশ পাতাল ফারক আছে তা ভালোই বুঝলেন নিশীথ ৷ দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে মাত্র 57 ভোটে তৃণমূলের উদয়ন গুহকে হারালেন তিনি ৷
দল বদল করে অন্যদলের প্রার্থীদের মধ্যে আরও একটি উল্লেখযোগ্য নাম অবশ্যই রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ডোমজুড় থেকেই হার মানতে হল রাজীবকে ৷ ব্যবধান 42 হাজার 620 ভোট ৷ অর্থাৎ ডোমজুড়ের মানুষ শুধুমাত্র রাজীবকে হারালেনই না, বরং বলা ভাল তাঁকে প্রত্যাখান করলেন ৷ একই হাল সিঙ্গুরের মাস্টর মশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের, পাণ্ডবেশ্বরের জিতেন্দ্র তিওয়ারি, উত্তরপাড়ার প্রবীর ঘোষালের বা বালির বৈশালী ডালমিয়ার ৷
দলবদলুদের ব্যর্থতার তালিকা আরও দীর্য ৷ তবে তার মধ্যে অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে ৷ শিলিগুড়ির শঙ্কর ঘোষ ৷ কাস্তে হাতুরি ছেড়ে নির্বাচনের আগেই পদ্ম শিবিরে নাম লেখান ৷ শিলিগুড়ির দোর্দণ্ডপ্রতাপ অশোক ভট্টাচার্যকে কার্যত উড়িয়ে দিলেন একদা তাঁর ছায়াসঙ্গী শঙ্কর ৷ এদিকে যখন রাজ্যে সবথেকে কম ভোটের ব্যবধানে জিতে বিধানসভায় যাচ্ছেন দিনহাটার নিশীথ প্রামাণিক, তখনই রাজ্যের একসময়ের কংগ্রেসের গড় সুজাপুর থেকে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়ী হলেন তৃণমূলের মহম্মহ আব্দুল গনি ৷ 1 লাখ 30 হাজার 163 ভোটে হারালেন কংগ্রেস প্রার্থী ইশা খান চৌধুরীকে ৷ এই ইশা খান আবার গনি খান চৌধুরীর ভাইপো ৷
রাজ্যে শাসক দল হিসেবে ফের একবার দেখা যাবে তৃণমূলকে ৷ বিজেপির বিজয় রথ কার্যত রুখে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ একই সঙ্গে তিনি বুঝিয়ে দিলেন বাংলার মানুষ ‘গদ্দার’ ‘বেইমান’ দের পছন্দ করে না ৷ তাই দলত্যাগীদের যে ‘গদ্দার’-র তকমা তিনি দিয়েছিলেন তাতেই কুপোকাত দলবদলুরা ৷