কলকাতা, 29 ফেব্রুয়ারি : উনবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিল কলকাতা । ব্রিটিশ শাসনকালে ঐতিহ্য, বাণিজ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে তিলোত্তমা যে অন্যতম ছিল, আজও তার প্রমাণ মেলে শহরের আনাচে-কানাচে । সেই সময় জমিদার ও ধনী বাঙালি পরিবার বহু প্রাসাদ, মহল, বাগান-বাড়ি তৈরি করেছিলেন । এমনই একটি উদাহরণ জোড়াসাঁকোর মল্লিকবাড়ি ।
বর্তমানে সরু রাস্তার একদিকে সার দিয়ে শাড়ির দোকান আর অন্যদিকে মহীরুহের মত দাঁড়িয়ে সাদা প্রাসাদটি । গেট পেরিয়ে ঢুকে পড়লেই এ যেন এক অন্য পৃথিবী । বড় দালান, গাড়ি বারান্দা, জাফরি কাটা কার্নিশ, বিশালাকার ঝাড়বাতি । আজও সব মিলিয়ে মনে হয় যেন টাইম মেশিনে চড়ে পিছিয়ে গিয়েছি প্রায় কয়েকশো বছর । জোড়াসাঁকোর মার্বেল প্যালেসের একেবারে গা ঘেঁষেই রয়েছে এটি । চোরবাগানের মল্লিক পরিবারের সন্তান রাজেন্দ্রনাথ মল্লিক বাহাদুর এই ভবনটি তৈরি করেন । তৈরি করতে সময় লেগেছিল পাঁচ বছর । উত্তর কলকাতার প্রাসাদগুলির মধ্যে সৌন্দর্য ও ভাস্কর্যের দিক থেকে অন্যতম এটি । তিনতলা এই প্রাসাদের দ্রষ্টব্য ঠাকুর দালান, যেখানে একসময় সাড়ম্বরে হত দুর্গাপুজো । পুজো উপলক্ষ্যে এইসময় পরিবারের সকলে মিলিত হতেন ।
অর্থ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহ্যশালী এই প্রাসাদটি ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে । জীর্ণ এই প্রাসাদটিতে এখন একঘর দু'ঘর করে আসতে থাকে ভাড়াটিয়ারা । সেই সময়ই শহরের এক অবাঙালি ব্যবসায়ী পরিবার এই বাড়িতেই একটি 200 বর্গফুট ঘরে নিজেদের ব্যবসা শুরু করেন । তাঁরাই 2015 সালে মল্লিকদের থেকে এই ভবনটি কিনে নেন ।
বাড়িটির ঐতিহ্য যথাসম্ভব বজায় রেখে সংস্কার করেছেন এই সংস্থা । এখন বাড়িটির মধ্যে ঢুকলে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতার একটি সুন্দর মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যাবে । এখানে পুরোনো কাঠের সিঁড়িগুলিকে যেমন যত্নের সঙ্গে সংস্কার করা রয়েছে ঠিক তেমনই একটি এলিভেটরও বসানো হয়েছে । এছাড়াও একটি সংগ্রহশালা তৈরি করা হবে । দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলে এলাকার দুঃস্থ মহিলা ও পুরুষদের জন্য নানা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে ।