কলকাতা, 8 মে: 'দ্য কেরালা স্টোরি' রাজ্যে নিষিদ্ধ করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রণাত্মক বিরোধীরা ৷ ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে টলি পাড়াতেও ৷ পরিচালক সুদীপ্ত সেনের সাম্প্রতিক ছবি 'কেরেলা স্টোরি' নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অবস্থানের বিরুদ্ধে সুর চড়াল রাজ্য়ের তিন বিরোধী দল সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি। সিনেমা নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্তকে সরাসরি অগণতান্ত্রিক বলে একযোগে দেগে দিয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস।
দ্য কেরালা স্টোরি প্রকাশ পেতেই বিতর্কের ঝড় উঠেছে দেশ জুড়ে। আর সেই সিনেমা নিয়ে এবার সরগরম হল বঙ্গ রাজনীতি। রাজ্যের তৃণমূল সরকার আদতে ধর্মীয় মৌলবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বলে স্পষ্ট দাবি করেছে বিজেপি। অন্যদিকে, মমতা সরকারের এহেন নিষেধাজ্ঞা জারি করার পেছনে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, "শান্তি, সৌহার্দ্য বজায় রাখতেই রাজ্যে দ্য কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।" সেই সঙ্গে, এই সিনেমায় যে সব দৃশ্য দেখানো হয়েছে তা রাজ্যের শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে বলেও মনে করছে সরকার। কলকাতা থেকে জেলার সব সিনেমা হল থেকেই এরপর তুলে নেওয়া হবে সিনেমাটি। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত আরএসএস-এর নির্দেশে নেওয়া চরম অগণতান্ত্রিক বলে দাবি করলেন সিপিএম রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক। কোনও চলচ্চিত্র এভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া মানে পরোক্ষে সেই চলচ্চিত্র সম্পর্কে সাধারণ মানুষের প্রতি আরও কৌতুহল তৈরি করা। আরএসএস-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবং তাদের নির্দেশেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে হয়।"
কোনও চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ হলে আমজনতার মধ্যে প্রশ্ন ওঠে, সেই ছবিতে এমন কোনও ঘটনা ছিল যা চাপা দিতেই এটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে করছেন বিকাশ ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, "নিষিদ্ধ না করে বরং যে দাবি ওই চলচ্চিত্রে করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে সত্য ঘটনা তুলে ধরে জনমানসে প্রচার করা দরকার। কেরালায় সিপিএম সেই সত্য ঘটনার প্রচার করেছে। এখানেও মুখ্যমন্ত্রীর তেমনটাই করা উচিত ছিল। তিনি আরএসএস-এর নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।" একই সুর শোনা গেল কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের গলাতেও। তিনি বলেন, "সিনেমা বন্ধ করে দেওয়া অগণতান্ত্রিক। এইভাবে কোনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বরং উত্তেজনা ছড়ায়। এই রাজ্যের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ জানে কোনটা নিতে হবে আর কোনটা ফেলতে হবে। এই বাংলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নয় এটা মাথায় রাখতে হবে। চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করায় জন মানসে আরও এর কৌতুহল বাড়বে।"
বিষয়টি নিয়ে টুইট করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। টুইটে তিনি লিখেছেন, "কেরেলা স্টোরি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে তৈরি করা হয়েছে। তিনি (মুখ্যমন্ত্রী) বিশেষ সম্প্রদায়কে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। নিজের কন্যা সন্তানের সঙ্গে গিয়ে এই ছবিটি দেখে আসুন। তাদের চারপাশে যে অশুভ বা খারাপ পরিকল্পনা চলছে সেটা তাদের জানা প্রয়োজন।" পাশাপাশি এই বিষয়ে রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "আমরা রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ধিক্কার জানাচ্ছি। ধর্মীয় মৌলবাদ এবং আইএসআইএসের কাছে আত্মসমর্পণের একটা নিদর্শন হল এই সিদ্ধান্ত। একটি সিনেমা বাস্তব এবং তথ্য নির্ভর কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে। লাভ জিহাদ শব্দটি বিজেপি বা তৃণমূলের তৈরি করা নয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি প্রেক্ষাপটে সমস্ত সংখ্যালঘু সমাজকে আজ আইএসআইএসের সঙ্গে যুক্ত করে দিয়ে সংখ্যালঘু সমাজকে অপমান করলেন মুখ্যমন্ত্রী এবং এই সরকার। শুধু ভোট পাওয়ার স্বার্থে সব সংখ্যালঘুকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা।"
অন্যদিকে, চলচ্চিত্র জগতেও তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে এই সিদ্ধান্তে। অভিনেত্রী দর্শনা বণিক জানান, "ভেবেছিলাম এই বৃহস্পতিবার দেখব ছবিটা। আমার এক বন্ধু কাজ করেছে ছবিতে। আমি জানি না কেন নিষিদ্ধ করা হল ছবিটা। খুব ভালো রেসপন্স থাকা সত্ত্বেও একটা ছবি হঠাৎ করে ব্যান করে দেওয়ার কোনও অর্থ আছে বলে আমার মনে হয় না ৷ অনেক খেটে একটা ছবি বানানো হয়। একজন দর্শক এবং একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমি বিরক্ত।" অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায় বলেন, "আমি এখনও দেখিনি। তাই ব্যান করার কারণ আমার জানা নেই। একটা ছবি হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ার মানে কী আমি জানি না। আমি আউটডোরে আছি। বাড়ি ফিরে দেখব। তারপর বুঝতে পারব।"
আরও পড়ুন: বাংলায় নিষিদ্ধ 'দ্য কেরালা স্টোরি', মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশের পরেই সিদ্ধান্ত নবান্নের