কলকাতা, 9 ডিসেম্বর: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন 'ভোকাল ফর লোকাল'। আর এই মুহূর্তে তাঁর অন্যতম প্রধান বিরোধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ঘুরিয়ে সেই পথই অনুসরণ করলেন। তবে প্রেক্ষিত ও উদ্দেশ্য আলাদা ৷ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে লোকাল অর্থাৎ বাংলায় বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষের কথা শোনা গিয়েছে ৷ আর তাঁদের জন্য ভোকাল হয়ে মমতা বলেছেন, বাংলায় চাকরি পেতে হলে বাংলা জানতে হবে (everyone has to know bengali language if they want a government job in Bengal), বাংলা তাঁর ঠিকানা হতে হবে ৷
বুধবার মালদায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়ে আঞ্চলিক ভাষার পক্ষে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে কর্মসংস্থান ও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্যের মানুষ বেশি গুরুত্ব পাবেন বলেও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে কর্মসংস্থান তৈরি হলে এই রাজ্যের ছেলেমেয়েরাই যাতে অগ্রাধিকার পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতেও তিনি প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, সব রাজ্যেরই এমন নীতি গ্রহণ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি সব রাজ্যের জন্যই বলছি, সেই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যেন চাকরিটা পায়, বাংলা হলে বাংলার ছেলেমেয়েরা ৷ যাঁরা এই রাজ্যে বসবাস করেন, তিনি রাজবংশী, কামতাপুরি বা হিন্দিভাষী হতে পারেন, তাতে কোনও আপত্তি নেই ৷ কিন্তু তাঁকে বাংলা ভাষা জানতে হবে, বাংলাকে তাঁর ঠিকানা হতে হবে।’’
আরও পড়ুন : বাংলায় চাকরি পাবেন বাঙালিরাই, মালদায় মন্তব্য মমতার
রাজনৈতিক মহল এই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে। কারণ সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা ব্লক স্তর থেকে প্রশাসনিক স্তরে পর্যন্ত কাজ করেন তাঁরা যদি ঠিকমতো বাংলা না জানেন তাহলে সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে। সমস্যা হতে পারে জনসাধারণের সঙ্গে জনসংযোগেও ৷ ভাষাগত সমস্যার জন্য যদি আম জনতার সমস্যাই বুঝতে না-পারেন প্রশাসনিক কর্তারা, তাহলে তাঁরা সমস্যার সমাধান করবেন কী করে ? সেই প্রশ্নও অনেকে তুলছেন ৷ সেদিক তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন ৷ মাতৃভাষা বাংলাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি এই ভাষার প্রতি নিজের ভালবাসা বোঝাতেও মুখ্যমন্ত্রী এমন বক্তব্য রেখে থাকতে পারেন বলে মত অনেকের।
তবে ভিন্ন মতও আছে ৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, এমন বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী না-করলেও পারতেন। তাঁর কথায়,"মূলত ডব্লিউবিসিএস যারা পাস করেন তাঁরা সিংহভাগই এরাজ্যের বাসিন্দা। তাঁরা বাংলা বোঝেন না এমন নয়। ফলে কাজ করতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। একইভাবে যারা আইপিএস, আইএএস রয়েছেন, তাঁরাও কিন্তু অন্য রাজ্যের মানুষ হলেও অনেকেই চেষ্টা করেন বাংলা ভাষাটা শিখে নিতে। উনি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। আলাদা করে না বললেই ভাল করতেন ৷ আমাদের রাজ্যের বহু মানুষ ভিন রাজ্যে গিয়ে কাজ করেন। এই প্রাদেশিক ভাষার উপর জোর দেওয়ার ভাবনা তাঁদের কার্যক্ষেত্রে কোনও কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড় না করিয়ে দেয়।"