কলকাতা, 17 মে : আর্থসামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজরদারির কথা বলছেন দেশের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন । কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গের শাসক এবং বিরোধী দল তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছে । এই বিষয়ে এক একরকমের মন্তব্য করতে দেখা গেল তাদের । CPI(M) নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, "টিভি সিরিয়ালের মত প্রতিদিন দেশের অর্থমন্ত্রী নিজের ঢাক নিজে পেটাতে মানুষের মুখোমুখি হচ্ছেন ।" লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরি বলেন, "স্বচ্ছতার সঙ্গে কর্মসংস্থানের কোনও কথা বললেন না দেশের অর্থমন্ত্রী ।" পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সাংসদ সৌগত রায় জানালেন, "কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে মোটেই সন্তুষ্ট নই ।" তবে, অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে মানবিক বললেন BJP সাংসদ দিলীপ ঘোষ । তিনি বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার বেকারের পাশে রয়েছে । মানবিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ।"
দেশের জেলাগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর সবথেকে বেশি নজর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্মলা সীতরমন । ব্লকস্তরে সরকারি হেলথ ল্যাবরেটরি চালু করার কথা ঘোষণা করেন তিনি । আত্মনির্ভর স্বাস্থ্যের দিকে এগোচ্ছে মোদি সরকার । অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ রাজ্যের বিরোধী দলগুলি । মহম্মদ সেলিম বলেন, "স্পষ্টভাবে কর্মসংস্থানের উল্লেখ নেই দেশের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে । প্রধানমন্ত্রীর কুড়ি লাখ কোটি টাকার ব্যাখ্যা দিতে টিভি সিরিয়ালের মত প্রতিদিন অর্থমন্ত্রীকে মুখ দেখাতে হচ্ছে । চতুর্থ দিনেও হিসেব মিলল না । প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে হিসেব খুঁজতে গেলে হিমশিম খাবেন নির্মলা সীতারমন । কোথায় গেল প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতি । বিদেশের ব্যাঙ্ক থেকে কালোটাকা ফিরিয়ে আনবেন বলেছিলেন, তার ব্যাখ্যা দিলেন না দেশের অর্থমন্ত্রী । দুই কোটি বেকারের চাকরি আদৌ হবে? পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরেছে এবার তাদের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব কি সরকার নেবে? কথার কথা বলছে অর্থমন্ত্রী । কর্মসংস্থান হবে । না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই । দেশের টাকা লুট করে যারা পালিয়ে গেল তাদের সন্ধান সম্পর্কে কিছু বললেন না দেশের অর্থমন্ত্রী । পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে নীরব রইলেন তিনি । দিনের পর দিন ধরে জাগলারি করে যাচ্ছেন দেশের অর্থমন্ত্রী ।"
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, "আজকে নির্মলা সীতারমন রাজ্যগুলোকে যে ঋণ নেওয়ার কথা বলেছেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট নই । বলা হচ্ছে সারা ভারতের রাজ্যগুলো 4 লাখ 40 হাজার কোটি টাকা পাবে । এর ফলে রাজ্যগুলোকে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হল । আমি একটা কথা বুঝতে পারছি না, কেন্দ্রীয় সরকার কিছুতেই অনুদান দিচ্ছে না । অর্থনীতিবিদরাও বলছেন এই সময় আর্থিক ঘাটতি হলে কোনও ক্ষতি হবে না । কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার সেটা মানছে না । ফলে মন্দের ভালো । কিন্তু এতে সমস্যা মিটবে না । তিন, সাড়ে তিন থেকে পাঁচ সাড়ে পাঁচ শতাংশ ঘাটতি এই সময়ে হওয়া স্বাভাবিক । পরিযায়ী শ্রমিকদের 100 দিনের কাজ দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার যা বলছে তাতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে 100 দিনের কাজ 120 দিন অথবা 200 দিন করা উচিত ।"
লোকসভার কংগ্রেস দলনেতা অধীর চৌধুরি জানিয়েছেন, "এইসময় প্রতিরক্ষা এবং মহাকাশ গবেষণায় অতিরিক্ত ঘোষণার প্রয়োজন ছিল না । পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানো এবং তাদের কর্মসংস্থানের ঘোষণা করলে অনেক বেশি উপকৃত হতেন তাঁরা । গণবণ্টন ব্যবস্থাকে উন্নত করে পর্যাপ্ত খাদ্যদ্রব্য দেশের মানুষের মধ্যে বন্টন করলে লকডাউনে গৃহবন্দী অবস্থায় গরিব মানুষের অর্ধাহারে-অনাহারে থাকতে হত না । আসলে সমস্তটাই গিমিক । নতুন কথা নেই । নেই কোনও জনদরদি ঘোষণা ।"
BJP-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "রাজ্যের GST-র টাকা কেন্দ্রীয় সরকার মিটিয়ে দিয়েছে । কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে যাচ্ছে । তাদের হাতে অর্থ যোগানের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার । 100 দিনের কাজের মাধ্যমে গরিব মানুষের হাতে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে । প্রায় আড়াই কোটি পরিযায়ী শ্রমিক 100 দিনের কাজ পাবে । প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যে কথাগুলো বলেছিলেন, এই সরকার সংস্কারের পথে হেঁটে সেগুলিকে আরও সক্রিয় করছে । কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের ঘোষণা সুদূরপ্রসারী । দিন যত যাবে বোঝা যাবে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা কতটা বাস্তবসম্মত । কর্মহীন মানুষের হাতে কাজের ব্যবস্থা করেছে দেশের সরকার ।"